হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে মামলার আসামি ধরতে গেলে রাতে মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত’ ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের ভ্যান ভাঙচুর ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় রোববার (২৯ জুন) দিনভর জনতার বাজারে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের যৌথ চিরুনি অভিযানে ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার রাতে হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যদের মারধর, ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের একটি ভ্যান ও দুটি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করে। উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গজনাইপুর গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে নবীগঞ্জ থানার কনস্টেবল শাহ ইমরান (২৭), মোজাম্মেল হক (২৫) ও পল্টন চন্দ্র দাশ (২৫) আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যরা নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান বলেন, জনতার বাজারের ঘটনায় দুপুরে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই বাছাই করে কয়জন গ্রেফতার সেটা বলা যাবে।
এ বিষয়ে বানিয়াচং সেনা ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদ বলেন, সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের যৌথ ঝটিকা অভিযান চালানো হয়। আমাদের ক্যাম্পের একদল সেনা সদস্য তাদের সহায়তা করেন। এসময় ১৩ জনকে আটক করা হয়। তাদের নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার এ. এন. এম. সাজেদুর রহমান বলেন, এজাহারভুক্ত আসামি গ্রেফতারের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেফতারের সময় স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের তিনজন সদস্য আহত হন। একটি ভ্যান ও দুটি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে এবং দোষীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে নবীগঞ্জ উপজেলার জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রায় ৭০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হাট এলাকায় অভিযান চালান। একপর্যায়ে হাট কমিটির সদস্য ও অন্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের কাজে বাধা দেন। তারা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদারকে লাঞ্ছিত করা হয়। এরপরও দিনভর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পশুর হাট চালু রাখে হাট কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় পরদিন ১ জুন পানিউমদা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে নবীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
গত শনিবার ভোরে এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি দক্ষিণ গজনাইপুর গ্রামের নজর উদ্দিনকে (৪০) গ্রেফতার করতে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে নবীগঞ্জ থানা ও গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রের এক দল পুলিশ সদস্য অভিযান চালায়। নজর উদ্দিনের বসতঘরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এসময় অন্য আসামিরা গ্রামের মসজিদে ‘ডাকাত এসেছে’ বলে মাইকিং করেন। এতে গ্রামের দুই শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং পুলিশের কাছ থেকে নজর উদ্দিনকে ছিনিয়ে নেয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয় এবং সংঘর্ষে পুলিশের একটি ভ্যান ও দুটি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এফএ/জিকেএস