রাতে স্বামীর জন্মদিন উদ্যাপন, সকালে পদ্মায় মিলল গৃহবধূর লাশ
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মা নদী থেকে আঞ্জুমান মায়া নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (০১ মার্চ) সকালে পদ্মা নদীতে গৃহবধূর ভাসমান মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দিলে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কালোয়া গ্রামের আব্দুল আজিজ শেখের ছেলে আসিফ শেখের জন্মদিন ছিল শুক্রবার। বিকেলে আসিফ ও তার স্ত্রী আঞ্জুমান মিলে বাজার থেকে কেক কিনেন। রাত ৮টার দিকে স্বামী ও শাশুড়িকে নিয়ে কেক কাটেন। রাতে স্বজনদের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া সেরে রাত ১০টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন স্বামী আসিফ শেখ। স্বামী ঘুমিয়ে পড়লেও স্ত্রী আঞ্জুমান স্মার্টফোনে ব্যস্ত ছিলেন। এরপর রাত ১টার দিকে আসিফ জেগে দেখেন তার স্ত্রী ঘরে নেই। ঘরের দরজা খোলা। পরে তিনি স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে রাতভর সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও স্ত্রীকে পাননি। পরে শনিবার সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে পদ্মা নদীতে ভাসমান মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা।
গৃহবধূ আঞ্জুমানের শাশুড়ি ফেরদৌসি খাতুন বলেন, প্রেম করে বিয়ে করলেও সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। শুক্রবার রাতেও সবাই মিলেমিশে জন্মদিন পালন করা হয়। সকলে এক সঙ্গেই রাতে খেয়েছিলাম। পরে রাত ১টার দিকে ছেলের কাছ থেকে শুনি বউ ঘরে নেই। এরপর সবাই মিলে সারারাত খুঁজেও কোথাও পাইনি। পরে সকালে নদীতে লাশ পাইছি।
কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, রাতে নিখোঁজ ছিল ওই গৃহবধূ। সকালে নদীতে স্থানীয়রা দেখতে পায় জালের সঙ্গে আটকে আছে তার লাশ। কী ঘটেছে তা ময়নাতদন্ত করলেই জানা যাবে।
স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আঞ্জুমান মায়া আঞ্জুমান কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বারখাদা ত্রিমোহনী এলাকার আজিম উদ্দিনের একমাত্র মেয়ে। উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রাঁধানগর এলাকায় আঞ্জুমানের নানা বাড়ি। প্রায় সাত মাস আগে নানাবাড়িতে বেড়াতে এসে আসিফের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ সম্পর্কের প্রায় দুই মাস পরে ঘর ছেড়ে বিয়ে করে পালিয়ে যান তারা। পালানোর সপ্তাহখানেক পরে বউ নিয়ে নিজ বাড়িতে উঠেন আসিফ। এরপর বেশ ভালোই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন।
আঞ্জুমানের মা পারভিন খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আসিফ আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে করে বিয়ে করেছে। তিনদিন আগে ব্যবসা করার জন্য তিন লাখ টাকা চেয়েছিল। টাকা না পেয়ে মেয়েকে নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে। আমার মেয়ের কোনো সমস্যা ছিল না। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
আঞ্জুমানের স্বামী আসিফ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের সংসার খুব ভালোভাবে চলছিল। রাতে ধুমধাম করে আমার জন্মদিন পালন করি। খাবার খেয়ে রাত ১০টার দিক শুয়ে পড়ি আমি। তখনও মায়া ফোন চালাচ্ছিল। এরপর রাত ১টার দিকে জেগে দেখি মায়া নেই। রাতে খোঁজাখুঁজি করে না পেলেও সকালে নদীতে লাশ পেয়েছি।
কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, শনিবার সকালে একটি মরদেহ স্থানীয়রা উদ্ধার করে কুমারখালী থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে কুমারখালী থানা পুলিশ নৌপুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তবে গৃহবধূর মৃত্যু যেভাবেই হোক না কেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।