রাতের সড়কে এলইডি লাইট যেন মরণফাঁদ
আলো দেখে মনে হতে পারে বিশাল আকৃতির একটি রেলগাড়ি সড়কপথে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। কিন্তু না, যখন এটি কাছে এলো তখন দেখা গেল এটি একটি মোটরসাইকেল। হেডলাইটের পরিবর্তে অবৈধ এলইডি ফগলাইট জ্বালিয়ে রাস্তায় চলছে। ঘটনাটি মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কের।
জেলার সর্বত্র দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মোটরসাইকেলসহ নানান ধরনের যানবাহনের সংখ্যা। আর সেই সঙ্গে বেড়ে চলছে রাতে এসব যানবাহনে এলইডি লাইটের অপব্যবহার। শুধু এলইডি লাইট নয়, এসব যানবাহনে ব্যবহার করা হচ্ছে অননুমোদিত এলইডি ফগলাইট, এলইডি সার্চলাইট এবং এলইডি লেজার লাইট।
শহরের সড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে এমনকি গ্রামের পাড়া মহল্লাতে চলাচল করা প্রতিটি অটোভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, অটোরিকশাসহ অবৈধ আলগামন, নসিমন, করিমন এবং লাটাহাম্বারের মতো যানবাহনেও দেখা যাচ্ছে ব্যাপক হারে এসব অবৈধ এলইডি লাইটের ব্যবহার।
সন্ধ্যা নামলেই চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে সড়কে। এসব লাইটের আলো এতটাই তীব্র যে বিপরীত দিক থেকে কিছুই দেখা যায় না। আর এর ফলে অহরহই ঘটছে দুর্ঘটনা। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের তীব্র আলো মানুষের চোখের রেটিনা ও কর্নিয়াকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে। জেলাতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়, বিআরটিএ কার্যালয় এবং ট্রাফিক পরিদর্শকের কার্যালয় থাকলেও নেওয়া হচ্ছে না কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা।
জেলাতে বিভিন্ন সময় সংঘটিত হওয়া সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, গাড়ির ফিটনেস না থাকা, চালকের ক্লান্তি ও মনঃসংযোগ বিঘ্ন হওয়াকে। তবে রাতে চলতি পথে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির হেডলাইটের চোখ ধাঁধানো আলোও যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে সেটি কখনো উল্লেখ করা হয়নি।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা সভাতে জেলা বিআরটিএ অফিসের প্রদত্ত তথ্যমতে, ২০২৪ সালে মেহেরপুর জেলাতে শুধু মুখোমুখি দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে মোট ২৫টি। আর এই দুর্ঘটনাগুলোতে মোট নিহত হয়েছেন ২১ জন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন ২৮ জন। তবে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ ঘেটে দেখা যায় প্রকৃত নিহত ও আহতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।
কয়েকজন পথচারী কালবেলাকে বলেন, বিপরীত দিক থেকে আসা ভ্যান বা ইজিবাইকের এলইডি লাইটের আলোর কারণে সাধারণ মানুষের পথ দেখতে ব্যাপক অসুবিধা হয়। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ এই এলইডি লাইটের আলো, যা এখনই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
মেহেরপুরের কলেজ মোড়ে এলইডি সার্চলাইট জ্বালানো কয়েকজন রিকশাচালকের দেখা মেলে। তারা জানান, ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে তারা এই এলইডি লাইটগুলো কিনতে পারেন। এগুলোর স্থায়িত্ব অনেক বেশি হয়। ব্যাটারি খরচ কম হয় এ জন্য তারা রিকশায় এই লাইট ব্যবহার করেন।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহা. আমানুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, যেকোনো তীব্র আলো চোখের ভেতর রেটিনার সেন্টার পয়েন্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সূর্যগ্রহণের সময় বিকিরিত রে এর দিকে তাকালে সেই আলো রেটিনাকে পুড়িয়ে দেয়, আর এলইডি ফগলাইট, সার্চলাইট ও লেজার লাইটের তীব্র আলো রেটিনার আরও বেশি ক্ষতি করে। যাদের চোখে মাত্র ছানি পড়া শুরু হয়েছে তারা এ আলোর সামনে পড়লে চোখে সম্পূর্ণ অন্ধকার দেখে। বর্তমানে এ ধরনের আলোর কারণে শিশুদেরও চোখের ব্যাপক সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলার ট্রাফিক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।