রাবিতে পোষ্য কোটার ‘কবর’ দিলেন শিক্ষার্থীরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর সন্তানদের জন্য বরাদ্দকৃত পোষ্য কোটার কবর দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের পাশে পোষ্য কোটার এই প্রতীকী কবর দেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ঘোষণা দেন- যদি শিক্ষক-কর্মকর্তারা বিতর্কে জয়লাভ করে তবে পোষ্য কোটা বহাল থাকবে। অন্যথায় এই কোটা বাতিল করতে হবে। তবে এই বিতর্কে কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী অংশ নেননি। পরে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে তিনজন তাদের প্রতিনিধি হিসেবে এতে অংশ নেন।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে একজন রিকশাচালক, আইন বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদুল ইসলাম পিটার এবং এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে রাখা হয়।
বিতর্কের শুরুতে উভয়পক্ষের যুক্তি প্রদর্শন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। পরে চলে যুক্তি খণ্ডন পর্ব। তবে পোষ্য কোটার পক্ষে কোনো বৈধ যুক্তি তুলে ধরতে পারেননি প্রতিযোগীরা। পরে বিচারকদের রায়ে পোষ্য কোটার বিপক্ষের শিক্ষার্থীরা জয়লাভ করেন। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হওয়া পোষ্য কোটা এই বিশ্ববিদ্যালয়েই কবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা।
প্রতীকী এই কবর দেওয়া শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, জুলাই আন্দোলনে আমাদের কাঁধে যাদের হাত ছিল তারা এখন আমাদের সঙ্গে নেই। জুলাই আন্দোলনের মূল ম্যান্ডেট ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার। এখনো যদি পোষ্য কোটা থাকে তাহলে জুলাই বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে। আবু সাঈদের রক্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে। আমরা যদি এইবার পোষ্য কোটার কবর রচনা করতে না পারি তবে আর কোনো দিন সম্ভব নয়। আমরা শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। সারা দেশে যত জায়গায় চাকরির ক্ষেত্রে বা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা রয়েছে তা সমূলে উৎখাত করতে হবে।
আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান সজীব বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশে প্রশাসন পোষ্য কোটা বাতিলের এই ন্যায্য দাবি মেনে নিবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল। তবে তারা আমাদের এই দাবি মেনে না নিয়ে পোষ্য কোটার মতো একটা অন্যায্য জিনিস ভোগ করে যাচ্ছে। তাদের কাছে আমরা এটা বাতিলের প্রস্তাব করি। তারা আমাদের দাবি না মেনে নিলে গণতান্ত্রিক উপায়ে একটা বিতর্কের আয়োজন করি। গত দুদিন থেকে তাদের বিতর্কে আসতে বলার পরেও তারা আসেনি। এখানে বিচারক হিসেবে রিকশাওয়ালা, চায়ের দোকানদারদের মতো প্রান্তিক মানুষ ছিল যাদের ট্যাক্সের টাকায় আমরা পড়াশোনা করছি। সেই বিতর্কে পোষ্য কোটা হেরে যায় এবং আমরা এর কবর রচনা করি।