রাশিয়ার তেল কেনায় ভারত শাস্তি পেল, চীন পেল না কেন?
রাশিয়ার তেল আমদানি নিয়ে ভারত ও চীনের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি একেবারেই ভিন্ন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে চাপ সৃষ্টি করতে গিয়ে ট্রাম্প যেখানে ভারতের পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন, সেখানে চীনের ক্ষেত্রে আপাতত কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেননি।
আগস্টের শুরুতে ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসান ট্রাম্প। এর ফলে মোট শুল্কহার দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, রাশিয়ার সস্তা তেল কিনে ভারত কার্যত মস্কোর যুদ্ধ অর্থায়নে সহায়তা করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ভারত শুধু আমদানি নয়—এই তেল প্রক্রিয়াজাত করে আবার রপ্তানি করছে এবং এতে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি মুনাফা করেছে।
কিন্তু একই সময়ে চীন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জ্বালানি ক্রেতা হয়েও কোনো শাস্তির মুখে পড়েনি। চীনা কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, দেশটি ২০২৪ সালে রাশিয়া থেকে ১০৯ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যা তাদের মোট আমদানির প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের আমদানি ছিল ৮৮ মিলিয়ন টন। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের মতে, যুদ্ধের আগে ভারতের আমদানি ছিল ১ শতাংশেরও কম, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে—যেটিকে তিনি ‘আর্বিট্রাজ ব্যবসা’ আখ্যা দিয়েছেন।
এই নীতি দ্বিমুখী। একদিকে ভারতকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে চীনকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
তাহলে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেই? বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পেছনে একাধিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ আছে। প্রথমত, বিরল খনিজে (রেয়ার আর্থস) চীনের ওপর নির্ভরশীল যুক্তরাষ্ট্র সহজে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। গাড়ি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামরিক প্রযুক্তিসহ অসংখ্য খাতে এই খনিজ অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত, ক্রিসমাস মৌসুমকে সামনে রেখে মার্কিন বাজারে বিপুল চীনা পণ্য ঢুকছে। এখন শুল্ক বাড়ালে দামও বেড়ে যাবে, যা সরাসরি ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে আংশিক শুল্কবিরতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়েই ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যাতে বাজারে ধাক্কা না লাগে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই নীতি দ্বিমুখী। একদিকে ভারতকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে চীনকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। হোয়াইট হাউস এখনো স্পষ্ট করে বলেনি চীনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আসবে কি না। ট্রাম্প নিজেও বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি হয়তো ‘দু-তিন সপ্তাহ পর ভাববেন।’
সূত্র : আল জাজিরা।