বাংলাদেশে আগামীতে যারাই রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে, তাদেরকে আলেমসমাজকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। এমন মন্তব্য করেছেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৯২ শতাংশ মুসলিম। এ দেশের আলেমসমাজ শৃঙ্খলা মেনে চলে। আলেমদের কোনো অভিলাষ নেই। আগামীতে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন, তাদের বলবো- আলেমসমাজকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ভাবতে হবে।
সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর মহাখালীতে গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের পেশাজীবী অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। পির-মাশায়েখ, ইসলামিক স্কলার, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্মানে এ ইফতারের আয়োজন করা হয়।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের নায়করা প্রায় সবাই মাদরাসায় পড়েছেন। মাহফুজ, আখতার মাদরাসার ছাত্র ছিলেন। তারা আগামীতে রাষ্ট্র নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। তাদের মধ্যে অনেক জ্ঞানভাণ্ডার লুকিয়ে আছে। যদিও অনেকেই এখন মাদরাসার পরিচয় দিতে চান না। তবে তাদের এ জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সেই কাজটা করবে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি বলেন, বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি মুসলিম রয়েছে। এরই মধ্যে নেতৃত্বের জন্য ছোট-খাটো যুদ্ধ হচ্ছে। কে নেতৃত্ব দেবে? সৌদি আরব নেতৃত্ব দেবে নাকি তুরস্ক? যেই নেতৃত্ব দিক, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সবারই কিন্তু শক্তির দরকার আছে। আজ মাহাথির মুহাম্মদের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে অতিক্রম করে যাবে ইন্দোনেশিয়া। এ শতাব্দি শেষে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আগামী দিনে বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় আসবেন, এটা আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন।
- আরও পড়ুন
করমুক্ত সুবিধার সুযোগ নিয়ে এক প্রবাসী ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন
বাংলাদেশ নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য বিভ্রান্তিকর
ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজের শৃঙ্খলা ভেঙে গেছে। কিশোর গ্যাংসহ নানান অপরাধে আমাদের সমাজের শৃঙ্খলা ভেঙেছে। এমন কোনো অপরাধ নেই, যা বর্তমান বিশ্বে সংঘটিত হচ্ছে না। বিশ্বের অনেক সম্পদশালী রাষ্ট্র সমাজ ঠিক করতে না পারার কারণে তারা আজ অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশের সৌভাগ্য বাংলাদেশে আলেমসমাজ খুবই সুশৃঙ্খল ও অত্যন্ত সংগঠিত। তারা দায়িত্বশীল কাজ করছেন।
এ এম এম বাহাউদ্দীন আরও বলেন, মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আজ পরিবার তৈরি করছেন। মাদরাসায় পড়া মেয়েটি কিন্তু সুন্দরভাবে পরিবারের দায়িত্ব পালন করছেন। আদর্শ মানুষ তৈরি করছেন। এ দেশে ৫ লাখ মসজিদ আছে, কয়েক লাখ কাজী আছেন, ৫ লাখ মসজিদের সঙ্গে ইমাম-মুয়াজিন আছেন। আলিয়া মাদরাসায় ৩ লাখ শিক্ষক ও ৭০ লাখ ছাত্র-ছাত্রী আছেন। কওমি মাদরায় লাখ লাখ ছাত্র আছেন। যারা আগামীদিনে রাষ্ট্র ক্ষমতার চিন্তা-ভাবনা করছেন। তাদের ভাবনায় আলেমসমাজকে রাখা উচিত, তাদের নিয়ে ভাবা উচিত। এ দেশের আলেমসমাজ সব সময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল, আগামীতেও থাকবে।
ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ওলামা বিভাগের সেক্রেটারি মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা জয়নুল আবেদীন, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র মোহাম্মদ ওসমান বিন হাদী, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি মাওলানা রুহুল আমীন, জমিয়তে হিযবুল্লাহর নাজেমে আলা ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শরাফত আলী, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।
ইফতার মাহফিলে দোয়া পরিচালনা করেন ছারছীনা দরবার শরীফের পির মাওলানা শাহ আবু নছর নেছার উদ্দীন আহমদ হুসাইন।
এএএইচ/কেএসআর