রাস্তার পাশে পাহাড়সম ময়লা, দুর্গন্ধে নাকাল নগরবাসী

কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দরে যাওয়ার পথে ঝাঁকুনিপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে চোখে পড়বে বিশাল স্তূপ। তবে এটি মাটি বা বালুর স্তূপ নয়। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে সিটি করপোরেশনের ময়লা-আর্বজনা ফেলা হচ্ছে এখানে। মানুষের বাসাবাড়ি, শিল্পকারখানা ও হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনা সড়কের পাশে ফেলায় পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের ৩০-৩৫ হাজার মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। সিটি করপোরেশনের এই অভিশাপ থেকে দ্রুত মুক্তি চান স্থানীয় বাসিন্দারা। সিটি করপোরেশনের সূত্রমতে, কুমিল্লা পৌরসভা থাকাকালীন থেকে আদর্শ সদর উপজেলার ঝাঁকুনিপাড়া-দৌলতপুর এলাকায় প্রায় ১০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। এরপর থেকে সেখানেই শহরের সব ধরনের বর্জ্য ফেলা শুরু হয়। ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা ও সদর দক্ষিণ দুই পৌরসভাকে একত্রিত করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয়। এরপর দুই পৌরসভার মিলে মোট ২৭টি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি, শিল্পকারখানা ও হাসপাতালের বেশিরভাগ ময়লা-আবর্জনা ঝাঁকুনিপাড়া-দৌলতপুরে ফেলতে শুরু করে সিটি করপোরেশন। বর্তমানে সেখানে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ টন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। খোলা স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণের প্রতিবা

রাস্তার পাশে পাহাড়সম ময়লা, দুর্গন্ধে নাকাল নগরবাসী

কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দরে যাওয়ার পথে ঝাঁকুনিপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে চোখে পড়বে বিশাল স্তূপ। তবে এটি মাটি বা বালুর স্তূপ নয়। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে সিটি করপোরেশনের ময়লা-আর্বজনা ফেলা হচ্ছে এখানে।

মানুষের বাসাবাড়ি, শিল্পকারখানা ও হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনা সড়কের পাশে ফেলায় পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের ৩০-৩৫ হাজার মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। সিটি করপোরেশনের এই অভিশাপ থেকে দ্রুত মুক্তি চান স্থানীয় বাসিন্দারা।

সিটি করপোরেশনের সূত্রমতে, কুমিল্লা পৌরসভা থাকাকালীন থেকে আদর্শ সদর উপজেলার ঝাঁকুনিপাড়া-দৌলতপুর এলাকায় প্রায় ১০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। এরপর থেকে সেখানেই শহরের সব ধরনের বর্জ্য ফেলা শুরু হয়। ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা ও সদর দক্ষিণ দুই পৌরসভাকে একত্রিত করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয়। এরপর দুই পৌরসভার মিলে মোট ২৭টি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি, শিল্পকারখানা ও হাসপাতালের বেশিরভাগ ময়লা-আবর্জনা ঝাঁকুনিপাড়া-দৌলতপুরে ফেলতে শুরু করে সিটি করপোরেশন। বর্তমানে সেখানে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ টন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।

খোলা স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদ জানিয়ে বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় গ্রামবাসীসহ পরিবেশকর্মীরা আন্দোলন করেছেন। তবে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন। উল্টো গত এক যুগেরও বেশি সময় সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে তৈরি করেছে পাহাড়-সদৃশ ময়লার স্তূপ। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবিদরা।

রাস্তার পাশে পাহাড়সম ময়লা, দুর্গন্ধে নাকাল নগরবাসী

তবে সিটি করপোরেশনের দাবি, প্রতিদিন বাসাবাড়ি, শিল্পকারখানা ও হাসপাতালের যে পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা উৎপন্ন হয়, সেই অনুযায়ী ময়লা ফেলার জায়গা নেই। তাই নতুন করে আরও ১৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে।

পাহাড়সম ময়লা-আবর্জনা ধ্বংস করে সম্পদে পরিণত করার জন্য ইসলামিক ডেবেলভমেন্ট উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি) পক্ষ থেকে ১০০ কোটি টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) পক্ষ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকাসহ ১৫০ কোটি টাকা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ার আগ পর্যন্তু মিলবে এই অর্থ। অধিগ্রহণ শেষ হলে পরিবেশ বিপর্যয় হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে বিষাক্ত দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি মিলবে স্থানীয়দের।

এর আগেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প গ্রহণের কথা একাধিকবার স্থানীয়দের বলা হলেও বাস্তুব চিত্র ছিল ভিন্ন। দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সিটি করপোরেশন।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খোলা স্থানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে ঝাঁকুনিপাড়া ও দৌলতপুর গ্রামের পাশাপাশি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাজগড্ডা, খামার কৃষ্ণপুর, শুয়ারা, জগন্নাথপুর, নবগ্রাম, বালুতুপাসহ আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের ৩০-৩৫ হাজার মানুষ। এসব ময়লা-আবর্জনার স্তূপ সিটি করপোরেশনের জায়গা ছাড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ির আশপাশসহ সড়কের পাশে ছড়িয়ে পড়ছে।

রাস্তার পাশে পাহাড়সম ময়লা, দুর্গন্ধে নাকাল নগরবাসী

ঝাঁকুনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বদিউল আলম বলেন, ‌‘এই স্থানটিতে শুরুতে কুমিল্লা পৌরসভা ময়লা-আবর্জনা ফেলতো। এরপর গত ১৪ বছর ধরে সিটি করপোরেশন প্রতিদিন টনকে টন ময়লা ফেলছে। এসব আবর্জনা বিশাল পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এর কারণে গ্রামবাসীর বসবাস করা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর মাসউদ বলেন, ‘দীর্ঘদিনের এ সমস্যার সমাধান না হওয়ায় স্থানীয়দের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ না করে ময়লা-আবর্জনাকে কীভাবে নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ রাখা যায়, সেই পরিকল্পনা সময়ের দাবি।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লার উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, ‘খোলা স্থানে বর্জ্য ফেলায় পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে বহুবার বলা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহ আলম বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে নতুন করে ১৫ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী ৬-৮ মাসের মধ্যে অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে আইএসডিবি ও জাইকার দেড়শ কোটি টাকার পৃথক দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয় কমে আসবে। তখন ওই এলাকার মানুষও বিষাক্ত দুর্গন্ধের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।

জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow