রিলাক্স নাকি অ্যাডভেঞ্চার: কোন ট্যুর আপনার জন্য?

3 weeks ago 7

ভ্রমণ মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একঘেয়েমি কাটাতে, মানসিক প্রশান্তি খুঁজতে কিংবা জীবনে নতুন কিছুর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে মানুষ ভ্রমণের পরিকল্পনা করে থাকে। তবে ভ্রমণ মানে শুধু নতুন স্থান দেখা নয়, এটি হতে পারে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকার সুযোগ কিংবা হতে পারে দুঃসাহসিক অভিযান। তাই অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, আসলে কোন ভ্রমণে যাওয়া উচিত? রিলাক্স ট্যুর নাকি অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর?

রিলাক্স ট্যুর হলো এমন এক ভ্রমণ যেখানে মূল উদ্দেশ্য থাকে শরীর ও মনকে বিশ্রাম দেওয়া। প্রতিদিনের ব্যস্ত নগর জীবনে অফিস, পড়াশোনা আর পারিবারিক দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে মানুষের ভেতর জমে ওঠে ক্লান্তি। এই ক্লান্তি দূর করতে অনেকে বেছে নেন নীরব ও শান্ত কোনো স্থান, যেখানে ভ্রমণের চাপ কম, আবার প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরপুর থাকে চারপাশ।

রাজধানীর নিকটে গাজীপুরের সবুজে ভরা রিসোর্টগুলোতে গিয়ে অনেকে সপ্তাহান্তে কিছু সময় কাটিয়ে আসেন। সেখানে সকালে পাখির ডাক শোনা যায়, দুপুরে সুইমিং পুলের পাশে বসে আড্ডা দেওয়া যায়, আর রাতে নিরিবিলি পরিবেশে পরিবার নিয়ে গল্প করার সুযোগ থাকে। দেশের ভেতরে কক্সবাজার, কুয়াকাটা কিংবা সিলেটের চা-বাগানও রিলাক্স ট্যুরের জন্য অসাধারণ জায়গা। সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে শুনতে বসে থাকা বা পাহাড়ি চায়ের সুবাসে ঘেরা গ্রামীণ পরিবেশে কিছু সময় কাটানো শরীর-মনকে সতেজ করে তোলে। এই ধরনের ভ্রমণ বিশেষ করে উপযুক্ত হয় পরিবার, দম্পতি কিংবা বয়স্ক সদস্যদের জন্য, যারা শান্ত পরিবেশে ভ্রমণ করতে চান, শারীরিক পরিশ্রমের ঝুঁকি নিতে চান না।

 কোন ট্যুর আপনার জন্য?

অন্যদিকে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ভ্রমণ। যেখানে প্রধান লক্ষ্য থাকে রোমাঞ্চ আর চ্যালেঞ্জ নেওয়া। এ ভ্রমণ সাধারণত তরুণ প্রজন্ম কিংবা দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতা খুঁজতে ভালোবাসেন এমন মানুষদের কাছে জনপ্রিয়। পাহাড় চড়া, জলপ্রপাতে গোসল, নৌকায় করে দুর্গম নদী পাড়ি দেওয়া, কিংবা লেকের মাঝখানে ক্যাম্পিং এসব কার্যক্রম একঘেয়েমি ভেঙে নতুন উদ্দীপনা এনে দেয়।

বাংলাদেশে বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। বর্ষাকালে ঝরনার রূপ আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে, তখন ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা হয় আরও প্রাণবন্ত। আবার শীতকালে পাহাড়ি পথে হাঁটা বা ক্যাম্পিং করার আলাদা মজা আছে। যারা দেশের বাইরে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তারা নেপালের হিমালয় ট্রেকিং, ভুটানের পাহাড়ি গ্রাম, থাইল্যান্ডের স্কুবা ডাইভিং কিংবা দুবাইয়ের মরুভূমি সাফারি বেছে নিতে পারেন। প্রতিটি অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরই ভ্রমণকারীর মনে তৈরি করে এক অনন্য স্মৃতি, যা সাধারণ ভ্রমণের চেয়ে একটু বেশি রোমাঞ্চকর।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, কখন কোন ট্যুর বেছে নেবেন? বিষয়টি আসলে নির্ভর করে শরীর ও মনের অবস্থা, ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং সঙ্গীর উপর। অফিসে চাপের মধ্যে থেকে কয়েক দিনের ছুটি মিললে রিলাক্স ট্যুরই সেরা বিকল্প। এতে শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া যায়, আবার মানসিক চাপও অনেকটাই কমে যায়। পরিবারের ছোট সদস্য বা বয়স্ক বাবা-মাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে চাইলে রিলাক্স ট্যুর বেশি আরামদায়ক হয়।

 কোন ট্যুর আপনার জন্য?

কিন্তু যদি বন্ধুদের সঙ্গে পরিকল্পনা হয়, আর সবার উদ্দেশ্য হয় রোমাঞ্চ খোঁজা, তাহলে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরই বেশি মানানসই। পাহাড়ি পথে একসাথে হেঁটে যাওয়া, ঝরনার ধারা ধরে নামা বা রাতের আঁধারে তাঁবুতে ক্যাম্পিং করার অভিজ্ঞতা বন্ধুত্বের বন্ধনকেও আরও মজবুত করে তোলে।

অনেকে আবার চান ভ্রমণে দুই অভিজ্ঞতাই একসাথে নিতে। যেমন ধরুন, বান্দরবানে গিয়ে একদিন নীলগিরির পাহাড়ি সৌন্দর্যে শান্তভাবে সময় কাটানো যেতে পারে, পরের দিন নাফাখুম ঝরনার পথে ট্রেকিং করা যায়। এভাবে একই ভ্রমণে পাওয়া যায় রিলাক্স আর অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ। আবার কক্সবাজারে গিয়ে দিনে রিলাক্স করে সময় কাটানো যায়, আর রাতে বিচে বনফায়ার করে অ্যাডভেঞ্চারের আনন্দ নেওয়া যায়। অর্থাৎ ভ্রমণের পরিকল্পনা করা যায় এমনভাবে, যাতে দুটো অভিজ্ঞতাই একসঙ্গে পাওয়া সম্ভব হয়।

শেষে বলতেই হয়, ভ্রমণ একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। কারো কাছে সমুদ্রের ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখা সবচেয়ে আনন্দের, আবার কারো কাছে পাহাড়ের চূড়া জয় করাই জীবনের সেরা মুহূর্ত। তাই ট্যুর প্ল্যান করার আগে একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি আসলে কোনটা চান? শরীর ও মনকে শান্ত করতে চান নাকি জীবনে নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে চান? উত্তরটি খুঁজে পেলেই সহজ হয়ে যাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া, আপনার পরবর্তী ভ্রমণ হবে রিলাক্স নাকি অ্যাডভেঞ্চার।

আরও পড়ুন

কেএসকে/এমএস

Read Entire Article