বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে অচলাবস্থা আরও গভীর হয়েছে। চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে এবার বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানও পদত্যাগ করেছেন। এর আগে কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, সদস্য ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন ও ডা. মাহমুদা আলম মিতু পদত্যাগ করেছিলেন।
পদত্যাগের এই ধারাবাহিকতায় বোর্ডে কার্যত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কোরামও হারিয়ে গেছে। তবুও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ২ নভেম্বর মাত্র পাঁচ সদস্যকে নিয়ে বোর্ড মিটিং করেছেন চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম। সভায় উপস্থিত ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ কিছু সদস্য, যেখানে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
শুধু তাই নয়, একই দিনে নিয়মবহির্ভূতভাবে উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদকে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় এক্সটেনশন দেওয়া হয় চেয়ারম্যানের নিজে সই করা চিঠিতে। অথচ প্রতিষ্ঠানের বিধিমালা অনুযায়ী বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, পরদিনই উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ পদত্যাগপত্র জমা দেন, যা রেড ক্রিসেন্টের অভ্যন্তরীণ সংকটকে আরও প্রকট করে তোলে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বোর্ডের একের পর এক পদত্যাগ, অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্থবিরতা পর্যবেক্ষণের পর সরকার বর্তমান বোর্ড ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন
একের পর এক অনিয়মে জর্জরিত রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বোর্ডে পদত্যাগের হিড়িক
সূত্রটি জানায়, ৪ নভেম্বর একজন অবসরপ্রাপ্ত নারী সচিবকে চেয়ারম্যান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট নতুন বোর্ড গঠনের প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সইয়ের পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। একই সঙ্গে রেড ক্রিসেন্টে চলমান অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ যাচাই করতে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত টিম গঠনের চিন্তাও চলছে মন্ত্রণালয়ে।
এদিকে, পদত্যাগের খবর প্রকাশের পর ৫ নভেম্বর বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে সাক্ষাৎ দেওয়া হয়নি বলে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এই প্রতিবেদককে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের বক্তব্য চাইলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারে জর্জরিত। দুর্যোগকালে মানবিক সহায়তার জন্য পরিচিত এই সংস্থাটিতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট নতুন বোর্ড গঠনের পর থেকেই অস্থিরতা দেখা দেয়।
বর্তমান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অভিযোগ ওঠে- নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ, নারী নির্যাতনের শাস্তি বাতিল, দুর্নীতিতে জড়িতদের পুনর্বহাল, রাজনৈতিক বিবেচনায় বদলি ও পদোন্নতি, এবং স্বেচ্ছাসেবক-অধিকর্তাদের দমনপীড়ন নিয়ে।
অক্টোবর মাসে এসব অনিয়মের প্রতিবাদে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকরা টানা এক সপ্তাহ আন্দোলন করেন। আন্দোলন দমন হলেও বোর্ডের অভ্যন্তরে অসন্তোষ আরও বেড়েছে। পরবর্তীতে ভাইস চেয়ারম্যান, কোষাধ্যক্ষসহ একে একে চার সদস্যের পদত্যাগে বোর্ড কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
এসইউজে/এএমএ

5 hours ago
5









English (US) ·