‘রোহিঙ্গারা আমাদের চেয়ে সুখে আছে’

3 months ago 50

‘মরার আগে একটু সুখ চাই। আমাদের থেকে রোহিঙ্গারা ভালো আছে। তারা বিভিন্ন দিক থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পায়। তারা খুব সুখে আছে। আমরা এদেশের নাগরিক হয়ে কী সুবিধা পাইতেছি? চিন্তা করতে করতে জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কেউ কোনো রকমের সহযোগিতা করছে না।’

এভাবেই আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা লালপুর এলাকার বাসিন্দা সোহেল খান। তিনি পেশায় একজন মুদি ব্যবসায়ী। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছেন না। কারণ তিনি যে এলাকায় বসবাস করেন তা পানিতে তলিয়ে গেছে। ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি বুক পর্যন্ত উঠে গেছে।

মুদি ব্যবসায়ী সোহেল খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই পানির এই সমস্যা চলছে। জনপ্রতিনিধি যারা আছেন তারা শুধু আশ্বাসই দেন। কেউ পানিতে নেমে যাবে...অ্যান করবো ত্যান করবো, রাস্তা করবো, ড্রেন করবো—এগুলো শুধু শুনেই যাচ্ছি। কিন্তু দিন শেষে সমস্যার সমাধান আর হয় না। এখন যে অবস্থা বাড়িওয়ালাদের বিপদ। ভাড়াটিয়ারা ভাড়া না দিয়েই পালিয়েছেন। একেকজনের দুই-তিনমাসের ভাড়া আটকে রয়েছে। ভাড়া চাইবে এই সুযোগ নাই।’

নারায়ণগঞ্জে জলাবদ্ধতা ‘রোহিঙ্গারা আমাদের চেয়ে সুখে আছে’

তিনি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরা শুধু আশ্বাস দিয়ে যান। এখন পর্যন্ত কোনো ফলাফল পাইনি। একদিনের বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেছে। গতবার এমপি সাহেব এসে বলেছেন, কাজ হবে। কিন্তু আমরা কোনো ফলাফল পাইনি। জনপ্রতিনিধিরা জানেন কী করবেন। প্রয়োজন হলে বাড়ি ভেঙে রাস্তা করুক। এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। কেউ যদি বাড়ির সামনে জায়গা দেন তাহলে তার জন্যই ভালো। তবুও একটু সুখে থাকতে চাই।’

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফতুল্লা লালপুর এলাকায় বুক পর্যন্ত ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি জমে উঠেছে। পানি আর নামছে না। পায়ে হেঁটে যাতায়াতের উপায় নেই। তাদের যানবাহনে পরিণত হয়েছে নৌকা আর ভ্যানগাড়ি। এসব এলাকায় যারা ভাড়া থাকেন তারা অন্য জায়গায় চলে গেছেন।

নারায়ণগঞ্জে জলাবদ্ধতা ‘রোহিঙ্গারা আমাদের চেয়ে সুখে আছে’

যারা স্থায়ীভাবে এই এলাকার বাসিন্দা তাদের ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে। না পারছেন এলাকা ছেড়ে চলে যেতে, না পারছেন এলাকায় থাকতে। এ অবস্থায় তারা কোনো স্থায়ী সমাধানে যেতে পারছেন না।

মোবারক হোসেন নামের আরেকজন বলেন, ‘আমাদের কোমরসমান পানি উঠেছে। কী করবো? কোনো কাজ-কাম নাই। দোকানপাট বন্ধ। চলাফেরায় কষ্ট। গতবার এমপি সাহেব এসে নিজে দেখে গেছে, কোনো ফলাফল পাইলাম না।’

নারায়ণগঞ্জে জলাবদ্ধতা ‘রোহিঙ্গারা আমাদের চেয়ে সুখে আছে’

স্থানীয় নার্গিস আক্তার বলেন, ‘ভোরে উঠে কাজে যেতে হয়। কিন্তু পানির কারণে যেতেই পারি না। কোমরের ওপরে উঠে যায় পানি। ভ্যানে করে যেতে হয়। এই ভাড়ার টাকা কোথায় পাই?’

জানতে চাইলে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফাইজুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে আমাদের কাজ চলমান। সমস্যা সমাধানে আমাদের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

নারায়ণগঞ্জে জলাবদ্ধতা ‘রোহিঙ্গারা আমাদের চেয়ে সুখে আছে’

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেদারুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধতা শুধু ফতুল্লা নয়, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত। আমরা জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করছি। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এটা নিয়ে কাজ করছেন। আমরা উপজেলা পরিষদ থেকে কাজ করছি। তবে এই সমস্যা এককভাবে সমাধান করা যাবে না। আমাদের সবার সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’

জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, এখানে একটা ট্রান্সফরমার ছিল। সেটি খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ কারণে এবার প্রচুর পানি জমে গেছে। বাড়িঘরতো রয়েছে, বাথরুমের ময়লা মসজিদ-মন্দিরে গিয়ে প্রবেশ করেছে। এজন্য আমি দুঃখিত এবং লজ্জিত। আমাদের ট্রান্সফরমার যেটা লাগবে সেটা আমি আমার নিজের টাকায় কিনে দেবো। আশা করি আগামী দু-তিনদিনের মধ্যে পানি নামিয়ে ফেলতে পারবো।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/জেআইএম

Read Entire Article