লন্ডনে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা, নিন্দা সরকারের

4 hours ago 5

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর লন্ডনে হামলার চেষ্টার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১২ সেপ্টেম্বর লন্ডনের এসওএএস–ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের এক অনুষ্ঠানের পর উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বের হওয়ার সময় একদল বিক্ষোভকারী বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাড়িতে ডিম নিক্ষেপ করে এবং অল্প সময়ের জন্য গাড়িবহরের পথ রোধের চেষ্টা করে। লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, হামলার সময় মাহফুজ আলম ওই গাড়িতে ছিলেন না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে উপদেষ্টার কার্যক্রমে ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করেছে।

লন্ডনের এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে নিউইয়র্কে সরকারি কাজে থাকা অবস্থায় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম হামলার শিকার হন। সেদিন বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিক্ষোভকারীরা ডিম ও (বিভিন্ন সূত্রে) বোতল নিক্ষেপ করে এবং কনস্যুলেটের কাচের দরজা ভাঙচুর করে। পরে মিশন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের স্থানীয় অফিসে লিখিত অভিযোগ করে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ ঘটনাকে ‘হয়রানির চেষ্টা’ হিসেবে নিন্দা জানিয়ে বলেন, নিউইয়র্কে যেমন নিন্দা জানানো হয়েছিল, তেমনই দৃঢ়ভাবে লন্ডনের এই হামলারও নিন্দা জানানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের সরকার, বাংলাদেশের জনগণ এবং দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ সভ্যতার পক্ষে; আর এ ধরনের ‘ঠগরা’ বর্বরতা ও ভয়ভীতির সংস্কৃতির প্রতিনিধি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে যুক্তির বদলে আগ্রাসন বা ভদ্র বিতর্কের বদলে সন্ত্রাসের জায়গা নেই। ‘নিউইয়র্কে যেমন বলেছিলাম— সহিংসতা প্রতিবাদ নয়, ভয়ভীতি প্রদর্শন মুক্ত মতপ্রকাশ নয়— সেই কথাগুলো লন্ডনেও সমানভাবে প্রযোজ্য।’

সরকার পুনরায় বলেছে, মতপ্রকাশ, সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মৌলিক স্বাধীনতা গণতন্ত্রের স্তম্ভ। কিন্তু এসব অধিকার দায়িত্বশীলভাবে ও সম্মান রেখে প্রয়োগ করতে হবে।

সরকারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, কূটনৈতিক বা কনস্যুলার যানবাহন লক্ষ্য করে হামলা বা বাধা দেওয়া দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ এবং দেশগুলোর মধ্যে সংলাপ রক্ষার যে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন আছে তা লঙ্ঘন করে। মেট্রোপলিটন পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা জানিয়ে এ ধরনের ঘটনার ফুটেজ ব্যবহার করে অপরাধীদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলা হয়, যদি সত্যিই কোনো মত থাকে, তা শান্তিপূর্ণ ও আইনি পথে তুলে ধরুন। ডিম, ঘুষি ও গণতান্ত্রিকতার নামে নাটক দেখিয়ে কোনো যুক্তি প্রতিষ্ঠা হয় না।’

সরকার বিশ্ববিদ্যালয়, আয়োজক প্রতিষ্ঠান ও প্রবাসী কমিউনিটিকে ‘সভ্য আলোচনার’ পক্ষে দাঁড়াতে এবং বক্তা, শ্রোতা ও আইনসংগত প্রতিবাদকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছে।

সরকারের বিবৃতিতে তিনটি আহ্বান জানানো হয়: সেগুলো হলো: ১. মেট্রোপলিটন পুলিশকে ফুটেজ ব্যবহার করে হামলাকারীদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনার জন্য পূর্ণাঙ্গ তদন্ত সম্পন্ন করতে।

২. প্রবাসে রাজনৈতিক নেতা ও সংগঠকদের যে কোনো ধরনের সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য অবস্থান নিতে।

৩. শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার ও একই সঙ্গে কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের ভয় ছাড়াই কথা বলার ও সমবেত হওয়ার অধিকারকে সমানভাবে স্বীকৃতি দিতে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গণতন্ত্র আবেগ দাবি করে, কিন্তু একই সঙ্গে আত্মসংযমও দাবি করে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিকাশের মূল শর্ত— সকল নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা— এর জন্যও এই দুই গুণ অপরিহার্য।’

এমইউ/এমআরএম

Read Entire Article