লন্ডভন্ড বঙ্গোপসাগরের ফাতরার বন

2 months ago 6

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে চার দিন ধরে প্রচণ্ড উত্তাল ছিল সাগর। এর প্রভাবে বরগুনার তালতলী উপজেলার বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন ১৩ হাজার ৬৪৪ একর বিস্তৃত ফাতরার বন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাতাস ও সাগরের জলোচ্ছ্বাসে উপড়ে পড়েছে ও ভেঙে গেছে কয়েক হাজার গাছ। স্থানীয়রা জানান, দ্রুত এই গাছগুলো সংরক্ষণ না করা হলে বনদস্যুরা তা নিয়ে যেতে পারে।

শুক্রবার (৩০ মে) সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত বন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতরার বনের শুভসন্ধ্যা, ট্যাংরাগিরি ও গৈয়মতলাসহ সাগরঘেঁষা এলাকাগুলোর গাছপালা লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে আছে। গাছগুলো সাগরের ঢেউয়ে ভেসে এসে অন্য গাছের সঙ্গে আটকে আছে।

নলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা রোজিনা আক্তার বলেন, বনের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এত গাছ ভেঙে পড়েছে যে গুনে শেষ করা যাবে না। বিগত বড় বড় বন্যায়ও এমন ক্ষতি দেখিনি।

শুভসন্ধ্যা এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম হাওলাদার জানান, সাগর খুবই উত্তাল ছিল। সাগরের ঢেউ তীরে এসে আছড়ে পড়ায় হাজার হাজার গাছ ভেঙে ও উপড়ে গেছে। দ্রুত গাছগুলো সংরক্ষণ করা দরকার।

ফকিরহাট ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. টুকু মিয়া কালবেলাকে বলেন, বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ে ফাতরার বনের অনেক গাছ উপড়ে পড়েছে। বন রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, নইলে গাছগুলো হারিয়ে যাবে।

বন বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

নলবুনিয়া বিট কর্মকর্তা মো. শাওন বলেন, সাগরের তাণ্ডবে অসংখ্য গাছ ধ্বংস হয়েছে। গাছ সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ না করা হলে ভবিষ্যতে বন রক্ষা করা কঠিন হবে।

নিশানবাড়িয়া বিট কর্মকর্তা মো. হায়দার আলী জানান, জোয়ারের পানিতে বনাঞ্চল তলিয়ে গেছে। গৈয়মতলা ইকোপার্কের পুকুরের মাছও ভেসে গেছে। তবে এখনো সাগর পাড়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আবহাওয়া ভালো হলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে।

ট্যাংরাগিরি ইকোপার্ক এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ইকোপার্কের ভেতরে পানি ঢুকলেও প্রাণীর কোনো ক্ষতি হয়নি। গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মতিয়ার রহমান মল্লিক কালবেলাকে বলেন, সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বনের অনেক গাছ উপড়ে গেছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়দের পাশাপাশি বন বিভাগের কর্মকর্তারাও মনে করছেন, ক্ষতিগ্রস্ত গাছ দ্রুত অপসারণ ও সংরক্ষণ না করলে একদিকে পরিবেশ বিপন্ন হবে, অন্যদিকে বনজসম্পদ লুটপাটের আশঙ্কা রয়েছে। তাই ফাতরার বন রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী।

Read Entire Article