লবণ মিল মালিকরা নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেট করে দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংস করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, মিল মালিকরা ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট’ নাম দিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে লবণ আমদানির অনুমোদন করার পাঁয়তারা করছে।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছে ‘কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ’।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ জামিল ইব্রাহিম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খোকন, মিডিয়া সেল পরিচালক শয়ন ইসলাম সবুজ ও সংগঠনের সদস্যরা। এতে লবণ শিল্প রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, চাষীরা চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের অতীতের রেকর্ড ভাঙতে চাইলেও লবণ মিল মালিকরা উৎপাদন কমানোর জন্য চাষীদের সঙ্গে মনস্তাত্বিক যুদ্ধে নেমেছে। যাতে লবণ চাষীরা তাদের আগ্রাহ হারিয়ে ফেলে এবং উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়। এরই অংশ হিসেবে চলতি মৌসুমে শুরুতেই লবণ মিল মালিকরা বস্তা প্রতি (প্রতি বস্তা ৮০ কেজি) লবণের দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে দফায় দফায় কমিয়ে ৬৪০ টাকায় নিয়ে এসেছে।
লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, মাঠ পর্যায়ে প্রতি কেজি লবণ উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫ টাকা হলেও মাঠ পর্যায়ে প্রতি কেজি মাত্র ৫ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে। এরপরও বিভিন্ন কোম্পানি প্রতি কেজি লবণ বাজারে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের একমাত্র স্বনির্ভর লবণ শিল্প ধ্বংস প্রায় নিশ্চিত।
তারা বলেন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা বাংলাদেশের একমাত্র দেশীয় লবণ উৎপাদন কেন্দ্র। এর মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজার জেলায়, অবশিষ্ট ৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। বিসিক এর তথ্য মতে গত অর্থবছরে উৎপাদিত লবণ চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে আরও ২ লক্ষ ২২ হাজার মেট্রিক টন মজুদ আছে। চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া ভালোভাবেই চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়, যা ক্রমান্বয়ে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশীয় লবণ শিল্পের সাথে প্রায় ৬৫ হাজার চাষি সক্রিয়ভাবে জড়িত। লবণের ব্যবসা করে কক্সবাজারের ৬০ শতাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।
বিসিক এর তথ্য মতে, ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনে গত ৬২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লক্ষ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৬৩ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে ২৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। বিসিক এর তথ্যমতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের লবণের চাহিদা রয়েছে ২৬ লক্ষ ১০ হাজার মেট্রিক টন। এই চাহিদাকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন অবিরাম গতিতে চলছে বলে জানান চাষি ও ব্যবসায়ীরা।