লবণাক্ত পানির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কুয়েট শিক্ষার্থীরা, দেখা দিয়েছে চর্মরোগ

3 weeks ago 13

খুলনা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) হলগুলোতে লবণাক্ত পানির কারণে তীব্র স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এমনকি অতিরিক্ত লবণাক্ত পানির কারণে শিক্ষার্থীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। প্রতিদিন নোনা পানি ব্যবহারে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে চর্মরোগ ছাড়াও দেখা দিয়েছে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দৈনন্দিন ব্যবহারে লবণাক্ত পানির কারণে তাদের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। গোসলের সময় এই পানি শরীরে নিলে অস্বস্তি অনুভূত হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে অনেকের ত্বকে চুলকানিসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং চুল পড়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট ৭টি আবাসিক হল রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি হল ছাত্রদের এবং একটি হল নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্ধ। সাতটি হলের মধ্যে- ড. এমএ রশিদ হল, শহীদ স্মৃতি হল, ফজলুল হক হল, রোকেয়া হল এবং ওমর একুশে হলের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। হলগুলোতে লবণাক্ত পানির সমস্যা পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে।

তবে কুয়েটের খান জাহান আলী হল, লালন শাহ হলের পানিতে নেই লবণাক্ততা। সূত্র বলছে, কুয়েটের এই দুটি হলের জন্য পানি তোলা হচ্ছে মাটির ১ হাজার ৭০০ ফিট গভীর থেকে। ফলে এখানকার পানিতে নেই লবণাক্ততা। বাকি পাঁচটি হলের জন্য পানি তোলার পাম্পের গভীরতা মাত্র ৬০০ ফিট।

অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার ও বিভাগের যন্ত্রপাতিতেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বেশ কয়েকটি মূল্যবান যন্ত্র লবণাক্ত পানির কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, যা শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশকে ব্যাহত করছে। বিভিন্ন হল ও বিভাগের পানির লাইনেও দ্রুত মরিচা ধরে যাচ্ছে, ফলে রক্ষণাবেক্ষণ খরচও বাড়ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কুয়েটের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজন কুমার রাহা বলেন, লবণাক্ত পানির কারণে আমাদের প্রায় ৮ লাখ টাকার অটোক্লেব নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং ল্যাবের বেশ কয়েকটি মূল্যবান যন্ত্রপাতিতে মরিচা ধরেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির মেকাট্রনিকস্ বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রুবাবক তাসনিম কালবেলাকে বলেন, লবণাক্ত পানি মুখে গেলে বমি ভাব আসে। গোসলের পর শরীর আরও বেশি অস্বস্তিকর লাগে। চুল পড়ে যাওয়া তো নিত্যদিনের ঘটনা। এই পানির কারণে চুল খরখরে হয়ে যাচ্ছে, কাপড় কাচতে গেলে বেশি সাবান ব্যবহার করা লাগে, নইলে ফেনা হয় না। কয়েক মাস পর পরই কল, ঝরনা বদলানো লাগে নইলে পানি প্রবাহ কমে যায়। প্রায় সব ওয়াশরুমেই লবণ জমে শাওয়ার বন্ধ হয়ে গেছে। ইলেকট্রিক কেটলিতে লবণের প্রলেপ পড়ে।

নিত্যদিনের এই দুর্ভোগের কথা জানাতে গিয়ে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী নোশিন বলেন, চুল তো দিন দিন পড়ে নাই হয়ে যাচ্ছে। হলের ট্যাপ, শাওয়ার কিছুদিন পরপর নষ্ট হয়ে যায়। আয়রনে দাঁত হলুদ হয়ে গেছে। স্কিনের সমস্যায় র‍্যাশ উঠে কালো হয়, জামা পরিষ্কার হয় না। হলের বাথরুমের ফ্লোর লালচে দাগে ভরে গেছে। ইলেকট্রিক পট বা কুকারে এই পানি ব্যবহার করলে দ্রুত লবনের স্তর জমে যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

নিরাপদ পানির সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. এমএ রশিদ হলের প্রভোস্ট প্রফেসর আশরাফুল ইসলাম বলেন, পানির সমস্যার সমাধান প্রশাসন চাইলে খুব সহজেই করা সম্ভব। শিক্ষার্থীরা যদি জোরালোভাবে দাবি জানায়, তাহলে এর দ্রুত সমাধানও হতে পারে। তবে আমি শুনেছি, খুব শিগগিরই এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে।

এ বিষয়ে কুয়েটের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এবিএম মামুনুর রশীদ বলেন, হলগুলোতে লবণাক্ত পানির উৎস ডিপ টিউবওয়েল। এখানে মাত্র ৬০০ ফিট গভীর থেকে পানি তোলা হচ্ছে। আর নতুন যে হলগুলোতে ভালো পানি সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে সেটা ১ হাজার ৭০০ ফিট নিচে থেকে তোলা হয়েছে। ১৭০০ ফিট লেয়ারে আমরা ভালো পানি পাচ্ছি। আমরা এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রোডাকশন টিউব বসানো হলে শিগগিরই এর সমাধান হবে।

সমস্যার কথা স্বীকার কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী বলেন, লবণাক্ত পানির সমস্যাটি আমাদের নজরে আছে। ইতোমধ্যে নতুন কয়েকটি হলে এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে এবং সেখানে এখন সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকি হলগুলোতেও দ্রুতই এই সংকট নিরসনের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই সব শিক্ষার্থীকে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে।

Read Entire Article