ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দাবানলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে শহর। এতে গত ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন নিহত এবং ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ভয়ংকর এই আগুনের কারণে শহরটির বিভিন্ন এলাকা যেন যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে।
জেপি মরগ্যান চেজের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক দাবানল বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিরোধ সম্ভব ছিল?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যথাযথ প্রস্তুতি নিলে দাবানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমানো সম্ভব ছিল। পরিবেশ ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাকে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন>>
লস অ্যাঞ্জেলেস বরাবরই প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ একটি শহর। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সেখানে দাবানলের ঝুঁকি আরও বেড়েছে। ভারী বৃষ্টির পরে গাছপালার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পরবর্তীতে খরার কারণে সেই গাছপালাই শুকিয়ে গিয়ে জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে। তীব্র গতির সান্তা আনা বাতাসে আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে আগুন।
অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও আইনগত সীমাবদ্ধতা
লস অ্যাঞ্জেলেসে নতুন বাড়ি নির্মাণে আগুন প্রতিরোধক ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক হলেও বেশিরভাগ বাড়িই পুরোনো ও দাহ্য কাঠ দিয়ে তৈরি। সেখানকার সিঙ্গেল-ফ্যামিলি বাড়িগুলো ফাঁকা এলাকায় অবস্থিত, যা আগুনের ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে।
এছাড়া, দাহ্য উদ্ভিদ পরিষ্কার বা নিয়ন্ত্রিতভাবে পোড়ানোর মতো কার্যকর উদ্যোগ পরিবেশগত বিধিনিষেধের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিলম্বিত হয়েছে।
১৯৮৮ সালে একটি আইন পাসের ফলে বিমা কোম্পানিগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের বাড়তি ঝুঁকি বিবেচনা করে প্রিমিয়াম বাড়াতে পারেনি। এর ফলে অনেক বিমা কোম্পানি ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে গেছে। যদিও নতুন আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে ঝুঁকির মডেল ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে সেটিও অনেক দেরিতে এসেছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার রাজনীতিতে গণভোটের মাধ্যমে আইন পাসের প্রবণতা রাজ্যের বাজেট ব্যবস্থাপনায় সীমাবদ্ধতা তৈরি করেছে। ১৯৭৮ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে সম্পত্তি কর বাড়ানো কঠিন হয়ে যায়, যার ফলে ফায়ার সার্ভিসের মতো সেবাগুলো ফি-নির্ভর হয়ে পড়ে।
ভবিষ্যতের শিক্ষা
বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এর ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম লস অ্যাঞ্জেলেস পুনর্নির্মাণে নতুন ‘মার্শাল প্ল্যান’-এর ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে লস অ্যাঞ্জেলেসের এই দুর্যোগ থেকে শিক্ষা নেওয়া শুধু ক্যালিফোর্নিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই জরুরি।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/