নাটোরের লালপুরে নাসির উদ্দিন নামে আওয়ামী লীগের এক নেতার নেতৃত্বে জোরপূর্বক জমি দখল ও বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার উধনপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম এ অভিযোগ করেন।
শহিদুল বলেন, বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা তুষার তার লোকজন নিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে লাগানো ইরি ধান জোর করে কেটে নেয়। এ সময় তাদের বাধা দিলে তারা আমাদের বাড়িতে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও আমাদের মারধরসহ খুন-জখমের হুমকি দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রহিমপুর গ্রামের মৃত মুনতাজ আলীর ছেলে নুরুল ইসলামের সঙ্গে আনিছুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, শাহাবুল ইসলাম, রায়হান আলী, আমের আলী, জামের আলী ও আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে উধনপাড়া মৌজার ১১৫ নম্বর আরএস খতিয়ানভুক্ত ৬৬ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলে আসছে। এ ব্যাপারে আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন ছিল।
গত মাসে বাদী নুরুল ইসলাম মামলায় রায় পান। কিন্তু বিবাদীরা গত ২২ অক্টোবর আদালতে আপিল করায় নুরুল ইসলামের ছেলে যুবলীগ নেতা তুষার, উধনপাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিরসহ কয়েকজন ওই জমিতে লাগানো ইরি ধান জোর করে কেটে নেওয়াসহ জমি দখল করার চেষ্টা করেন। এ সময় শহিদুল ইসলাম তাদের বাধা দিলে হাঁসুয়া, ফালা, বাঁশের লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার ওপর আক্রমণ করে এবং তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করেন।
শহিদুল ইসলাম জানান, নুরুল ইসলামের সঙ্গে এই জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলে আসছে। গত ২২ অক্টোবর আদালতে নুরুল ইসলামের পক্ষে রায় হয়। রায়ে উল্লেখ আছে, ৬০ দিনের মধ্যে বিবাদীরা তাকে তার সম্পত্তি বুঝিয়ে দেবেন। কিন্তু ২৮ দিনের মাথায় নুরুল ইসলামের তিন ছেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নাসিরসহ, মুল্লুক চাঁদ, দেরাজ আলী ও নাঈমকে ভাড়া করে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও জমিতে লাগানো ধান কেটে নষ্ট করে।
তিনি আরও জানান, এর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আমাদের ওপর হামলা ও গাছপালা কেটে নেয় তারা। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, এদের বিচারে আওতায় এনে সুবিচার করা হোক।
আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা বাড়িতে কেউ না থাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নাসির ও তার লোকজন নিয়ে নুরুল ইসলামের তিন ছেলেসহ আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও জমিতে লাগানো ধান কেটে জমি দখল করার চেষ্টা করে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করি প্রশাসনের কাছে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিন জানান, নুরুল ইসলামের সঙ্গে জমি নিয়ে তাদের দীর্ঘদিন মামলা চলার পর তিনি কোট থেকে রায় পান। সে কারণে তার ছেলে জমি পরিষ্কার করার জন্য আসে।
তিনি বলেন, তার কাছ থেকে আট কাঠা জমি নিয়েছি, সেজন্য সেখানে গিয়েছিলাম। তাদের ওপর হামলার বিষয়টি সত্য নয়।
এ বিষয়ে জানতে রহিমপুর গ্রামে নুরুল ইসলামের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী বলেন, তিনি বাইরে আছেন। নুরুল ইসলামের মোবাইল নম্বর চাইলে তিনি তার মোবাইল নম্বর দিতে অপারগতা স্বীকার করেন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, জমি দখলের বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পাঁচজনকে আটক করে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।