‘লাশ হয়ে বেঁচে আছি, ছেলে হত্যার বিচার চাই’, শহীদ ইয়াকুবের মা

1 month ago 11

গতবছর গণঅভ্যুত্থানের সময় ৫ আগস্ট রাজধানীর চাঁনখারপুলে পুলিশের করা গুলি লেগে শহীদ হন শিক্ষার্থী মো. ইয়াকুব।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সন্তান হত্যার বিচার চাইলেন শহীদ ইয়াকুবের মা। এই মামলার চতুর্থ সাক্ষী রহিমা আক্তার তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে আছি, ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

বুধবার (১৩ আগস্ট) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে জবানবন্দিতে তিনি একথা বলেন।

রহিমা আক্তার আরও বলেন, আমার ৩৫ বছরের ছেলে মো. ইয়াকুব নিউমার্কেটে ডেলিভারিম্যানের কাজ করতো। সে প্রায়ই ছাত্র আন্দোলনে যেত। গতবছর ৫ আগস্টও চাঁনখারপুল এলাকার আন্দোলনে গিয়েছিল। ওইদিন সে সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়। পেটের এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। প্রথমে আমাকে বলছিল না। সবাই সান্ত্বনা দিচ্ছিল। আমি সবাইকে বললাম, তোমরা কাঁদতেছ কেন? আমারে কাঁদতে দাও না কেন? একপর্যায়ে আমার ছেলের লাশ যখন খাটিয়ায় করে আনা হয়, তখন খাটিয়া বেয়ে অনেক রক্ত পড়ছিল।

একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের টিভি মনিটরে মো. ইয়াকুবের রক্তাক্ত অবস্থার ভিডিও দেখানো হলে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। অশ্রুসিক্ত রহিমা সে সময় বলতে থাকেন, আমি একটা মা, জিন্দা লাশ হয়ে বাঁচে আছি। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। হাসিনা, কাউয়া কাদেরসহ যারা গুলির অর্ডার দিয়েছে, আমি তাদের বিচার চাই।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এই শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটরসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত সোমবার (১১ আগস্ট) এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটর সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের পর শহীদ আনাসের বাবা সাক্ষ্য দেন।

এরপর মঙ্গলবার সাক্ষ্য দেন রাজধানীর বোরহান উদ্দিন কলেজের শিক্ষিকা আঞ্জুয়ারা ইয়াসমিন এবং চাঁনখারপুলে পুলিশের গুলিতে শহীদ সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের বাবা শেখ জামাল হাসান। এরপর শহীদ ইয়াকুবের মা সাক্ষী দিলেন আজ।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন।

মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। তারা হলেন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।

এদের মধ্যে প্রথম চারজন পলাতক। গ্রেফতার চারজনকে বুধবারও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এফএইচ/এসএনআর/এএসএম

Read Entire Article