লিচু বাংলাদেশের সুস্বাদু ও জনপ্রিয় ফল। এটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং রপ্তানিযোগ্য ফল। লিচু চাষ করে কৃষকেরা ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারেন। এটি ভিটামিন সি, খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
প্রথম পর্যায়ে
মুকুল আসার ১০-১৫ দিন আগেই মাকড়নাশক সালফার প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। অথবা এবামেকটি গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১.২৫ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে
মুকুল আসার পরে করণীয় হলো, মুকুল বের হওয়ার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগেই ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক বালাইনাশক প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। সাথে কার্বোডাজিম+মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।
তৃতীয় পর্যায়ে
লিচুর ফল ঝরা, ফল ফেটে যাওয়া প্রতিরোধে ফল মটরদানা আকৃতি ধারণের পরে ৪ সিপিএ ভেজিমেক্স বা অনুমোদিত মাত্রায় মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
চতুর্থ পর্যায়
লিচু মার্বেল আকৃতি পর্যায়ে লিচুর ফলছিদ্রকারী পোকা ও অ্যানথ্রাকনোজ রোগের আগাম প্রতিষেধক হিসেবে সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। সাথে ম্যানকোজেব+মেটালেক্সিল গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।
বিশেষ করণীয়
১. কলম চারার ক্ষেত্রে গাছের বয়স কমপক্ষে ৩ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মুকুল ভেঙে দিতে হবে। এতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় ও দীর্ঘ দিন ফল দেয়।
২. ফলন্ত গাছে মুকুল আসার ৩ মাস আগে থেকে সেচ প্রদান বন্ধ রাখতে হবে।
৩. লিচুর মুকুল ফোটা অবস্থায় স্প্রে করা যাবে না।
৪. লিচুর মুকুল ফোটার শেষ পর্যায়ে কমপক্ষে একবার ও ফল মটরদানা পর্যায়ে একবার এবং দ্বিতীয় সেচ ১৫ দিন পরে একবার দিতে হবে।
৫. গাছের গোড়া আগাছামুক্ত ও পরিষ্কার রাখতে হবে।
৬. অব্যশই গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালো ভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৭. ফল সংগ্রহের পরে লিচুর মাকড় আক্রান্ত ডাল ভেঙে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৮. বোরন ও জিংক সারের ঘাটতি থাকলে অন্যান্য সারসহ প্রতি গাছে ২০ গ্রাম বোরন ও ১০ গ্রাম জিংক সার লিচুর আটি শক্ত হওয়া পর্যায়ে গাছের গোড়ায় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। অথবা সলুবর বোরন ও চিলেটেড জিংক মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।
সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
মে-জুন মাসে লিচু সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। গাছে সম্পূর্ণ পরিপক্ব হলে লিচু সংগ্রহ করতে হবে, যাতে স্বাদ ও মিষ্টতা ভালো থাকে। তাজা লিচু সংরক্ষণের জন্য ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে বা কোল্ড স্টোরেজ ব্যবহার করা যেতে পারে।
লিচু চাষ সঠিক নিয়মে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় এবং এটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। উন্নত জাত নির্বাচন, পরিচর্যা ও সঠিক রোগ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরণ করে কৃষকেরা বেশি লাভবান হতে পারেন।
এসইউ/জিকেএস