একজন ব্যক্তি লিফটে চড়ার জন্য দৌড়ে আসছেন। আপনি কি তরিঘরি করে লিফট বন্ধ করে দেন? গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ শতাংশ ব্যক্তি এ রকম পরিস্থিতিতে দ্রুত লিফটের দরজা বন্ধ করে দেন।
বড় শহরের বহুতল অফিস, শপিং মল কিংবা অ্যাপার্টমেন্টে লিফটের ব্যবহার বেড়েছে। অফিস শুরুর সময় ভিড়, সপ্তাহান্তে শপিং মলে লম্বা লাইন – সব মিলিয়ে এই ছোট্ট ধাতব বাক্সে চলাচলের সময় কিছু আদবকেতা মেনে চলা শুধু সৌজন্য নয়, প্রয়োজনও। নয়তো সহযাত্রীর বিরক্তির কারণ হতে পারেন আপনিও। দেখুন তো সে রকম কোনো আচরণ নিজের অজান্তেই করছেন কি না?
এই সামাজিক শিষ্টাচারকে বলা হয় ‘এলিভেটর এটিকেট’। চলুন জেনে নেই, লিফটে ওঠা-নামার সময় কোন আচরণগুলো আপনাকে ভদ্র, সচেতন ও সবার কাছে প্রশংসনীয় করে তুলবে –
১. আগে নামতে দিন, পরে উঠুন
বাংলাদেশের অফিস ভবনে, বিশেষ করে সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে, লিফটের সামনে দীর্ঘ সারি দেখা যায়। অনেকেই দরজা খুলতেই ভেতরে ঢুকে পড়েন, ফলে নামতে থাকা মানুষদের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায়। তাই প্রথমেই অন্যদের নামতে দিন, তারপর উঠুন। এতে চলাচল সহজ হবে ও বিরক্তি কমবে।
২. দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়ান
লিফটে ঢুকে দরজার দিকে মুখ রাখুন। পেছন ফিরে বা বাঁকা হয়ে দাঁড়ালে অন্যদের দাঁড়ানোর জায়গা কমে যায়। বিশেষ করে সংকীর্ণ লিফটে এটি খুব জরুরি।
৩. বোতাম চাপার ভদ্রতা
নিজের তলার বোতাম নিজে চাপুন। যদি দেখেন অন্য কেউ বোতাম প্যানেলের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন, বিনয়ের সঙ্গে তাকে আপনার তলার বোতাম চাপতে বলুন। আপনাকে কেউ অনুরোধ করলে, তাদের সাহায্য করুন। মজার ছলে কখনও একসঙ্গে সব তলার বোতাম চাপার মতো আচরণ করবেন না।
৪. ব্যক্তিগত স্থান বজায় রাখুন
বাংলাদেশের লিফটে প্রায়ই বেশি ভিড় হয়, কিন্তু তবুও যতটা সম্ভব ব্যক্তিগত স্থান বজায় রাখুন। ব্যাগ, হাত বা শরীর যেন অন্যের খুব কাছে না যায়।
৫. অপ্রয়োজনীয় কথা এড়িয়ে চলুন
লিফটের ভেতরে উচ্চস্বরে ফোনে কথা বলা বা জোরে হাসাহাসি এড়িয়ে চলুন। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ লিফটের বাইরে করাই ভালো।
৬. ব্যাগ ও ব্যাকপ্যাকের সঠিক ব্যবহার
অফিস ব্যাগ বা স্কুল ব্যাকপ্যাক পেছনে ঝুলিয়ে রাখলে প্রায়ই অন্যের গায়ে লাগে। তাই লিফটে ঢোকার পর ব্যাগ সামনে নিয়ে আসুন বা হাতে রাখুন।
৭. ছোট দূরত্বে সিড়ি ব্যবহার
যদি মাত্র এক বা দুই তলা যেতে হয়, সিড়ি ব্যবহার করুন। এতে লিফটে ভিড় কমবে, আপনারও শরীরচর্চা হবে। শহরে, যেখানে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটি হতে পারে, সেখানে এই অভ্যাস থাকা ভালো।
লিফট এক ধরনের ক্ষুদ্র সামাজিক পরিসর। এখানে মাত্র কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটে আপনার সম্পর্কে আপনার সহযাত্রীর ধারণা তৈরি করে দেবে। ভদ্রতার এই ছোট ছোট নিয়মগুলো মানলে লিফট-যাত্রা হবে সবার জন্যই আরামদায়ক ও বিরক্তিহীন। এমনকি সভ্য ও স্মার্ট ব্যক্তি হিসেবে আপনার জন্য খুলে যেতে পারে অন্য কোনো সুযোগের দুয়ার।
বিশ্বজুড়ে লিফটে যে মজার বাস্তবতা দেখা গেছে :
• যথেষ্ট জায়গা থাকার পরও সহযাত্রীর গা ঘেষে দাঁড়ান ৩৬ শতাংশ ব্যক্তি
• জায়গা নেই তবু চেপে ঢুকতে চান ৩৬ শতাংশ ব্যক্তি
• লিফট ধরার জন্য কেউ দৌড়ে আসছে দেখেও দরজা খোলা রাখেন না ৩০ শতাংশ ব্যক্তি
• অন্যকে বের হওয়ার জন্য নিজে বের হয়ে দাঁড়ান না ২৮ শতাংশ ব্যক্তি
• মোবাইলে কথা বলেন ২৩ শতাংশ ব্যক্তি
• অাগে অপেক্ষমানদের পাত্তা না দিয়ে নিজে আগে উঠতে চান ২৩ শতাংশ ব্যক্তি
• এ সংক্রান্ত একটি জরিপের সঙ্গে জড়িত স্কট হেমেস জানাচ্ছেন, ২০ শতাংশ ব্যক্তি কারও জন্য অপেক্ষা করতে দীর্ঘ সময় লিফটের দরজা খোলা রাখতে চান না।
সূত্র: ডে এলিভেটর, গার্ডিয়ান, ইনক্লিনেটর, জিকিউ, দ্য ইকোনমিস্ট, এলিভেটর্স ডটকম
এএমপি/আরএমডি/এএসএম