আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় অনিয়মিত অভিবাসী হিসাবে আটকেপড়া আরও ১৪৪ জন এবং তিউনিশিয়া থেকে ১৭ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। ২৭ মার্চ ঢাকায় পৌঁছেছেন তারা।
লিবিয়ার ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ও লিবিয়ার ধারাবাহিক ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় ১৪৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের সঙ্গে ছিলেন, তিউনিশিয়ায় অনিয়মিত অবস্থায় থাকা আরও ১৭ জন বাংলাদেশি।
লিবিয়ার বুরাক এয়ারের একটি ফ্লাইটে করে বাংলাদেশিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২৭ মার্চ সকালে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফ্লাইটটি।
লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের মধ্যে ৫৫ জন ত্রিপোলির তাজুরা আটক কেন্দ্রে আটক ছিলেন। এছাড়া, ১৪ জন বাংলাদেশি ত্রিপোলিতে অনিয়মিত অবস্থায় অর্থনৈতিক ও মানসিক যন্ত্রণায় ছিলেন। অবশিষ্ট ৭৫ জন বিপদগ্রস্ত অবস্থায় মিসরাতা থেকে দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্য ছয় জন বাংলাদেশি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।
তাজুরা আটক কেন্দ্রে থাকা অভিবাসীদের লিবিয়ার অভিবাসন অধিদপ্তরের অভ্যর্থনা কেন্দ্রে বিদায় জানান দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার। মোট ৬৯ জন বাংলাদেশিকে ত্রিপোলি থেকে একটি ফ্লাইটে করে লিবিয়ার আরেক শহর মিসরাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সব বাংলাদেশিকে একসঙ্গে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এ সময়, অনিয়মিত অভিবাসনের ঝুঁকি ও এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত। দেশে ফিরে পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মিসরাতা থেকে ফিরেছেন ৭৫ বাংলাদেশি
লিবিয়ার আরেকটি শহর মিরসাতা থেকেও দেশে ফিরেছেন ৭৫ বাংলাদেশি। তবে তাদের মধ্যে ২৮ জন্য বাংলাদেশিকে নিয়ে দূতাবাস ছিল বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।
দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশি কর্মীরা লিবিয়ায় আসার পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না পাওয়া, বেতন বৈষম্য ও চুক্তির শর্ত নিয়ে অসন্তুষ্টিতে ভুগছিলেন। তাদের দিয়ে কাজ করানো হলেও ঠিকমতো বেতন পরিশোধ করা হচ্ছিল না। কেউ কেউ শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও দূতাবাসে অভিযোগ করেছেন।
এমনকি, তারা দেশে ফিরে যেতে চাইলেও নিয়োগকারী তৃতীয় কোম্পানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাদের ছাড়তে রাজি ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে দূতাবাসের সহযোগিতা চান এসব বাংলাদেশিরা। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আইওএম-এর সহযোগিতায় নিয়ে এসব বাংলাদেশিদের দেশের ফেরার ব্যবস্থা করেছে দূতাবাস।
এসব কর্মীদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় দূতাবাসকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে বলে জানিয়েছে দূতাবাস। গত বছরের ১০ নভেম্বর দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল মিসরাতা পরিদর্শন করেন। স্থানীয় প্রশাসন, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগী কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।
লিবিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় গত বছরের ১ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন দূতাবাসের প্রতিনিধি দল। সবার সমঝোতার ভিত্তিতে, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করা শ্রমিকদের ছাড় দেওয়া হয়। এরপর ওই ২৮ বাংলাদেশিকে নিয়োগকারী এজেন্সির ডরমিটরিতে রাখা হয়। সেখানে তাদের খাদ্য ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দূতাবাস।
আইওএম-এর সঙ্গে সমন্বয় করে শ্রমিকদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং লিবিয়ার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট তদন্ত বিভাগের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বহির্গমন ভিসা সংক্রান্ত জরিমানা মওকুফ করানো সম্ভব হয়েছে।
দেশে ফিরে এসব বাংলাদেশির অনেকেই টেক্সট এবং অডিও বার্তা পাঠিয়ে দূতাবাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এদের মধ্যে একজন লিখেছেন, আপনাদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে লিবিয়ায় নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষেরা যে পরিমাণ সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়েছে, তা বাংলাদেশের অন্য কোনো দূতাবাস থেকে পেয়েছে কি না, আমার জানা নেই। আমি মনে করি, যদি অন্য দূতাবাসগুলোও আপনাদের মতো এমন পরিশ্রম ও সহানুভূতি প্রদর্শন করতো, তাহলে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যেত।
এই ২৮ বাংলাদেশিকে প্রথম সচিব (শ্রম) রাসেল মিয়ার নেতৃত্বে দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল মিসরাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদায় জানায়। এ সময় তাদের নিরাপদে দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য দূতাবাসের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানানো হয়।
তাদের সঙ্গে একই ফ্লাইটে তিউনিশিয়ায় আটকেপড়া ১৭ জন বাংলাদেশিকেও দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।
এমআরএম/এএসএম