ভুগছেন কঠিন ব্যাধি লিভার সিরোসিস রোগে। পেট ফুলে রয়েছে অনেকটা। যেখানে হাঁটাচলাই কষ্ট, সেখানে পেটের দায়ে এই শরীরে ভ্যান চালাচ্ছেন সত্তর বছর বয়সি শাহালম মুন্সি। দীর্ঘ তিন বছর ধরে এভাবেই জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন এই বৃদ্ধ। কিছুদিন আগে কিছু জমানো টাকার সঙ্গে স্ত্রীর গহনা বিক্রির টাকা ও মানুষের সহযোগিতায় চিকিৎসা করালেও এখন অর্থের অভাবে তা থমকে গেছে। পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের থেকে চিকিৎসা সহযোগিতা চেয়েছেন সত্তরোর্ধ এই বৃদ্ধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড় গোপালপুর ইউনিয়নের চৌকিদার কান্দি এলাকায় স্ত্রী শিরিন বেগমকে নিয়ে বসবাস করেন বৃদ্ধ শাহালম মুন্সি। বসতবাড়ির একটুকরো জায়গাটি তার শ্বশুরের থেকে পাওয়া। দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে শারমিন আক্তারের বিয়ে হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। আর ছেলে সাগর মুন্সির বয়স মাত্র ১৯। দারিদ্র্যতার কারণে ছেলে এই বয়সে বেছে নিয়েছেন শ্রমিকের কাজ। সবকিছু ঠিকঠাক চললেও তিন বছর আগে হঠাৎ পাইলস রোগে আক্রান্ত হন শাহালম। চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানতে পারেন পাইলসের পাশাপাশি লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে পেট ফুলতে থাকলে উপায় না দেখে মানুষের থেকে সাহায্য সহযোগিতা ও স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে থাকেন।

কিছুদিন মোটামুটি ভালো গেলেও রোগ পুরোপুরি ভালো হয়নি। এরপর আবার ধীরে ধীরে পেট ফুলতে থাকে। তবে এবার টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারেননি তিনি। এই অবস্থায় সংসার চালাতে ভ্যান চালাচ্ছেন শাহালম। অতিদ্রুত চিকিৎসা না করালে জীবননাশের আশঙ্কার কথা জানান তিনি। তাই সরকার কিংবা সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রত্যাশা শাহলম মুন্সি ও স্থানীয়দের।
আরও পড়ুন
শেষ বয়সে খুপরিতে দিন কাটছে প্রবাসীর, পাশে নেই স্ত্রীসহ স্বজনরা
উপার্জনের শেষ সম্বল দুই গরু চুরি হওয়ায় নিঃস্ব বৃদ্ধা জরিনা বেগম
টিউমারে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মা-ছেলের জীবন
শাহালম মুন্সি বলেন, ‘রোগের পর মানুষের কাছ থেকে সাহায্য আর স্ত্রীর সব গহনা বিক্রি করে চিকিৎসা করেছি। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ। জমিজমা নেই যা বিক্রি করে চিকিৎসা খরচ চালাবো। অসুস্থ শরীর, পেট ফোলা, ঝাঁকি লাগলে পেটে ব্যথা হয়। এরপরেও সংসার চালাতে ভ্যান নিয়ে বের হই। ছেলের কাজ নাই, তারপরও যা দেয় তা দিয়ে ওষুধ কিনি। এখন হয়ত আর সামনে সেটাও হবে না। সবাই যদি আমাকে একটু সাহায্য করতো তাহলে চিকিৎসা করে সুস্থ হতে পারতাম।’

শাহালম মুন্সির স্ত্রী শিরিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের আর কিছুই নাই। বরকি আছিলো, মুরগি আছিলো সব বেইচ্চা (বিক্রি) দিয়া ওনার চিকিৎসা করাইছি। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হইয়া আছে। সবাই যদি আমাগো একটু সাহায্য করতো তাহলে ওনারে বাঁচানো যাইতো।’
প্রতিবেশী আলেয়া বেগম বলেন, ‘শাহালম মুন্সি অনেক অসহায়। তার টাকা পয়সা নাই তাই চিকিৎসা করাতে পারে না। ফোলা পেট লইয়া মাঝেমধ্যে ভ্যান চালায়। ভ্যান না চালাইলে খাবে কীভাবে? এখন সরকার যদি এই লোকটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো তাহলে হয়ত তিনি সুস্থ হতে পারতেন।’
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা টুটুল চৌকিদার বলেন, ‘ওনার এখন কিচ্ছু নাই। ওনি গরীব আর অসহায়। পেটের অবস্থাও খারাপ। সবাই মিলে তাকে একটু সাহায্য করলে চিকিৎসা করাতে পারতো। আমরা চাই ওনার চিকিৎসা হোক যাতে লোকটা বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।’
বিধান মজুমদার অনি/এমএন/জিকেএস

8 hours ago
6








English (US) ·