লেখার ভাবনা কখনো ছেড়ে যায় না: পাপড়ি রহমান

পাপড়ি রহমান বাংলাদেশের অন্যতম কথাসাহিত্যিক। তার সম্পাদনায় ‌‘বাংলাদেশের ছোটগল্প: নব্বইয়ের দশক’ ও গবেষণাগ্রন্থ ‘ভাষা শহীদ আবুল বরকত’ প্রকাশিত হয়েছে বাংলা একাডেমি থেকে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বই পঁয়ত্রিশের বেশি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে লিখেছেন ধ্রুপদী ঘরানার উপন্যাস। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ‘বয়ন’ (২০০৮), ‘পালাটিয়া’ (২০১১), বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী জনজীবন নিয়ে উপন্যাস ‘নদীধারা আবাসিক এলাকা’ (২০১৯), ঢাকার বর্তমান চালচিত্র নিয়ে উপন্যাস ‘ঊষর দিন ধূসর রাত’ (২০২৫)। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের বাংলা ভাষাভাষি পাঠকের কাছে তিনি বেশ সমাদরণীয় লেখক। এরই মধ্যে ভারত থেকে তার বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে অসংখ্য গল্প। প্রখ্যাত এই কথাসাহিত্যিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাসাহিত্যিক ও কবি নুসরাত সুলতানা— জাগো নিউজ: ৬১ বছরে পদার্পণ করলেন। আপনাকে উষ্ণ অভিনন্দন। পাঠকের বিপুল ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা পেয়েছেন। একজন কথাসাহিত্যিক হিসেবে আপনার প্রাপ্তিতে আনন্দিত? নাকি অতৃপ্তি আছে কোথাও?পাপড়ি রহমান: জন্মদিনের প্রাক্কালে তোমার এই আন্তরিক-আলাপে আমি আনন্দিত ও উল্লসিত। বেশ খানিকটা উজান বেয়ে এতটা পথ বয়ে চলা গে

লেখার ভাবনা কখনো ছেড়ে যায় না: পাপড়ি রহমান

পাপড়ি রহমান বাংলাদেশের অন্যতম কথাসাহিত্যিক। তার সম্পাদনায় ‌‘বাংলাদেশের ছোটগল্প: নব্বইয়ের দশক’ ও গবেষণাগ্রন্থ ‘ভাষা শহীদ আবুল বরকত’ প্রকাশিত হয়েছে বাংলা একাডেমি থেকে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বই পঁয়ত্রিশের বেশি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে লিখেছেন ধ্রুপদী ঘরানার উপন্যাস। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ‘বয়ন’ (২০০৮), ‘পালাটিয়া’ (২০১১), বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী জনজীবন নিয়ে উপন্যাস ‘নদীধারা আবাসিক এলাকা’ (২০১৯), ঢাকার বর্তমান চালচিত্র নিয়ে উপন্যাস ‘ঊষর দিন ধূসর রাত’ (২০২৫)।

বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের বাংলা ভাষাভাষি পাঠকের কাছে তিনি বেশ সমাদরণীয় লেখক। এরই মধ্যে ভারত থেকে তার বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে অসংখ্য গল্প। প্রখ্যাত এই কথাসাহিত্যিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাসাহিত্যিক ও কবি নুসরাত সুলতানা

জাগো নিউজ: ৬১ বছরে পদার্পণ করলেন। আপনাকে উষ্ণ অভিনন্দন। পাঠকের বিপুল ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা পেয়েছেন। একজন কথাসাহিত্যিক হিসেবে আপনার প্রাপ্তিতে আনন্দিত? নাকি অতৃপ্তি আছে কোথাও?
পাপড়ি রহমান: জন্মদিনের প্রাক্কালে তোমার এই আন্তরিক-আলাপে আমি আনন্দিত ও উল্লসিত। বেশ খানিকটা উজান বেয়ে এতটা পথ বয়ে চলা গেল। আমি কিন্তু ভাবিনি এতদিন বেঁচে থাকতে পারবো। বা বেঁচে থাকা হবে! অবাক হয়ে দেখলাম, কীভাবে যেন তিন কুড়ি বয়স পেরিয়ে এলাম! একজন লেখক হিসেবে বা মানুষ হিসেবে আমার সবকিছুই এতদিনে সত্যিকার আনন্দে ভরপুর। ওই গানটা গাইতে চাই—‘আমার জীবন পাত্র উচ্ছ্বলিয়া মাধুরী করেছ দান…’।

নাহ, তেমন কোনো অতৃপ্তি এখন আর নজরে পড়ে না। বা পড়লেও তেমন করে নোটিশ করি না। সাহিত্যিক হিসেবে তো নয়ই। আমি মনে করি, আমার যা যা লিখবার স্বপ্ন ছিল, সেসবের বেশিরভাগই আমি লিখে উঠতে পেরেছি। একদিন না একদিন সেসব লেখার সমঝদার পাঠকও তৈরি হয়ে যাবে। হয়তো সেদিন আমি আর বেঁচে থাকবো না। আমার লেখাপত্র বাংলা সাহিত্য ফেলে দিতে পারবে না, এ রকম ভাবি।

জাগো নিউজ: ঠিক কোন বয়সে বুঝতে পারলেন, আপনি লেখক হতেই জন্মেছেন। সেই উপলব্ধি কি আপনাকে সমূহ নাড়িয়ে দিয়েছিল? কেমন ছিল সেই উপলব্ধি?
পাপড়ি রহমান: আমার ক্ষেত্রে সবটাই উল্টা ঘটেছে। লেখক হবার জন্যই ক্রমাগত নিজেকে প্রস্তুত করে গেছি। যেমন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছি। দিন-রাত লাইব্রেরিতে পড়ে থেকেছি। ভালো লেখার জন্য ছুটে গেছি নিরন্তর। পড়াশোনার মাঝ দিয়ে যেতে যেতে লিখেছি। যখন ভালো কোনো পত্রিকায় নিজের লেখা ছাপা হয়েছে, প্রশান্তিতে মন পূর্ণ হয়ে উঠছে এই ভেবে, আমি সঠিক পথেই আছি। কোনো বড় লেখক আমার লেখার প্রশংসা করলে একই ব্যাপার ঘটেছে। আরও বেশি ভালো লেখার জন্য নিজের ভেতর তাড়া অনুভব করেছি। বলতে পারো, আমার আছে নিজের সঙ্গে নিজেরই প্রতিযোগিতা।

জাগো নিউজ: একজন লেখককে নিরবধি পাঠ করে যেতে হয়। আপনি প্রথম কোন লেখককে পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন? বইটির নাম কী?
পাপড়ি রহমান: এটা স্মরণ করা আমার জন্য প্রায় অসাধ্য ব্যাপার। কারণ আমাদের বাড়িতে মা-চাচি-ফুপুরা দিবারাত্রি আউটবই পড়তেন। মজার ব্যাপার হলো, এরা সব বইকেই বলতেন নভেল। উনাদের বইপড়ার সুবাধে আমার নাগালে প্রচুর বই ছিল। আমিও ছিলাম সর্বভুক। সব ধরনের বই-ই পড়তাম। তখন পড়তে পারলেই আনন্দিত হতাম। কী বা কার বই সেসব দেখার বা বোঝার মতো বড় আমি হইনি। তবে বড় হওয়ার পর বঙ্কিমচন্দ্র ছিল আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখক। এই লেখকের রচনাবলি আমি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার করেও পড়েছি। সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এবং কাজী নজরুল।

জাগো নিউজ: অনেকেই মনে করেন, পাপড়ি রহমান কথাসাহিত্যে আলাদা স্বাক্ষর সৃষ্টি করেছেন। নিঃসন্দেহে কঠিন অধ্যবসায়ের কাজ ছিল। শুধুই অধ্যবসায়? নাকি কোনো রহস্য নিহিত আছে?
পাপড়ি রহমান: আমি ঠিক জানি না, আমি কী বা কতটা করতে পেরেছি? তবে সিরিয়াসলি লেখা শুরুর পর্ব থেকেই আমি চেয়েছি, আমার লেখাটা আলাদা হোক। অন্য কারোর মতো যেন না হয়। অধ্যবসায় তো ছিলই। ছিল শান্ত থাকতে পারা। আমি অনেক বেশি কোনোদিনই লিখতে চাইনি। প্রতি বছর বই প্রকাশের কোনো তাড়া আমি অনুভব করিনি। বেছে বেছে ভালো বই পড়াটা এখনো অব্যাহত আছে। তবে আগের মতো অনেক আর পড়তেও পারি না। চোখ সায় দেয় না।

জাগো নিউজ: পেশা ও ব্যক্তিগত কাজের পরে বাকি সময় গল্পকার হিসেবে কীভাবে যাপন করেন? সাধারণত কখন লিখতে বসেন? একটি গল্প সর্বোচ্চ কতদিনে শেষ হয়?
পাপড়ি রহমান: এটাও একটা জটিল প্রক্রিয়া। আমার ধারণা সব লেখকই এসবের ভেতর দিয়েই যান। লেখক যাই করুক না কেন, লেখার ভাবনা তাকে কখনো ছেড়ে যায় না। আমার ক্ষেত্রে টানা লিখে গেলে যে কোনো লেখার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ থাকে। আমি সব লেখার জন্যই অনেক বেশি টাইম নিই। বছরে তিনটার বেশি গল্প আমি লিখতে চাইনি। এখন এটা আরও কমেছে। তবে গল্প লেখার তাড়না পিছু নিলে গল্প হয়ে যায়। আরেকটা বিষয়, গল্প শেষ করাটা অনেক সময় সম্পাদকের অ্যাপ্রোচের ওপর নির্ভর করে। যে বা যারা আন্তরিক আবদার নিয়ে আসেন, তাদের চাওয়ায় লেখাটা কীভাবে যেন দ্রুত সম্পন্ন হয়ে যায়। এই ম্যাজিক নিয়েও আমি বহুবার ভেবেছি। আদতে মানুষের কথা বলাটাও একটা আর্ট। যে যতো ভালোবাসা নিয়ে আবদার জানান, তার পত্রিকার জন্য লেখা কীভাবে যেন দ্রুত হয়ে যায়। আমার নিজের সমস্যা অনেক, আমি চাই পিন-ড্রপ-সাইলেন্স! এ জন্য রাতকে সঙ্গী বানাতে হয়। কিংবা অপেক্ষা করতে হয়, বাসায় কখন নীরবতা নেমে আসবে?

জাগো নিউজ: কী কী বৈশিষ্ট্য ছোটগল্প বা গল্পকে শিল্পসমৃদ্ধ করে বলে আপনার মনে হয়? বা একটি সার্থক ছোটগল্পের অনিবার্য বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
পাপড়ি রহমান: গল্প হলো মায়ার খেলা। খেলাটা যে যত কৌশলে খেলতে পারবেন; সে ততটাই সার্থক হয়ে উঠবেন। অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি বাক্য নির্মাণ এখানে প্রধান হাতিয়ার। বাক্যই তো নির্মাণ করে চরিত্র। যে গল্পটা আগে কেউ বলে যায়নি, সেটা শৈল্পিকভাবে বলতে পারলেই একটা গল্প টিকে যেতে পারে। একজন লেখক যদি একজীবনে এক-দুইটা উত্তম গল্প লিখতে পারেন, সেটাই তার জন্য যথেষ্ঠ মনে করি। একজন লেখককে অমর করতে খুব বেশি লেখাপত্রের দরকার হয় না। এক-দুইটা মাস্টারপিস লিখলেই তো হয়ে যায়। বছর বছর ট্র্যাশ লিখে স্তূপ না করে কম লিখে কালজয়ী হতে পারাটাই কাজের কথা। আর সার্থকতার কোনো সংজ্ঞা নেই। পাঠকের মনন যেভাবে যখন দেখবে; সেটাই কোনো গল্পকে সার্থকতা দেয়।

জাগো নিউজ: সেই রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে আজ অবধি বাংলা সাহিত্যের দশটি সার্থক ছোটগল্পের নাম বলুন প্লিজ। অবশ্যই আপনার গল্প সহকারে।
পাপড়ি রহমান: কোনো লেখা বা কোনো লেখক কেন বা কখন সার্থক হয়ে ওঠেন, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আমি আমার সব লেখার জন্য প্রচুর সময় নিই ও পরিশ্রম করি। তাই আমার প্রায় গল্পই আমার কাছে প্রিয় মনে হয়। সার্থক কি না জানি না। আমি যাদের গল্প পড়ি বা পছন্দ করি তাঁদের কথা বরং বলি। রবীন্দ্রনাথ, জগদীশ গুপ্ত, মানিক বাড়ুজ্যে, বিভূতিভূষণ, সোমেন চন্দ, আল মাহমুদ, হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শহীদুল জহির, আনসারউদ্দিন এঁদের গল্প আমার ভালো লাগে। ইদানীং মাহবুব মোর্শেদ, আনিফ রুবেদ, ইমরুল হাসানের গল্পও ভালো লাগে। তবে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণরাও আছে আমার পাঠ্য তালিকায়। তরুণদের বই প্রকাশ হলে আমি আগ্রহ নিয়ে কিনি। মন লাগিয়ে পড়ার চেষ্টা করি।

জাগো নিউজ: বিশ্বসাহিত্যের কোন কোন গল্পকারের গল্প আপনার প্রিয়? এমন কোনো গল্পকার আছেন, যাকে আপনার ঈর্ষা হয়? কিংবা এমন কোনো গল্প, যেটি আপনি লিখতে পারেননি বলে আফসোস হয়!
পাপড়ি রহমান: কাফকার গল্প ভালো লেগেছে বরাবর। মার্কেজ, অ্যালিস মানরো, হারুকি মুরাকামিকেও ভালো লাগে। চিত্রা ব্যানার্জি দেবাকরনী। বানু মুশতাক। যদিও রিপিটেশনের মতো শোনাবে, তবুও বলি—হাসান আজিজুল হক ও শহীদুল জহিরের গল্পগুলো আজও আমাকে সমানভাবে বিমোহিত করে। তবে আফসোস হয় না কোনো কিছু নিয়েই। কারণ একজন লেখকের লেখা কোনোভাবেই অন্যজনের মতো হয় না বা হবে না। সুতরাং কারো লেখা ভালো লাগলে তাঁর উদ্দেশে শুধু একটা প্রণাম হয়তো জানাতে পারি। আমি সেটাই করি।

জাগো নিউজ: ছোটগল্পের চরিত্র চিত্রণ আমার কাছে একটু জটিল মনে হয়। ছোটগল্পের চরিত্রায়ণে আপনি কী কী কৌশল অবলম্বন করেন?
পাপড়ি রহমান: শুধু ছোটগল্প বলছো কেন? সাহিত্যের যে কোনো মাধ্যমই জটিল। উপন্যাস লেখা তো আরও দুরুহ কাজ। একটা ক্ল্যাসিক উপন্যাস লেখার মতো পরিশ্রমের কাজ আর কিছুতেই নেই। চারপাশে যা ঘটছে, তা খুব মন দিয়ে দেখি। তুমিও জানো, কত শত চরিত্র আমাদের নাগালের মাঝেই চলাফেরা করে। তবে আমি চাই চরিত্রটিকে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে। পারি কি না জানি না। এ জন্যই আমার লেখায় টাইম বেশি লাগে। কারণ আমি বারবার করে সম্পাদনার ছুরি-কাঁচি চালিয়ে যাই। খুব দ্রুতই নিজের লেখা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারি না।

জাগো নিউজ: আপনার খুব প্রিয় পাঁচটি উপন্যাসের নাম বলুন—
পাপড়ি রহমান: এটা বলা বেশ মুশকিলই বটে। প্রিয় পাঁচ বের করাও কষ্টসাধ্য। তবুও বলি—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘যোগাযোগ’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘মৃত্যুক্ষুধা’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জননী’, হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’।

jagonews

জাগো নিউজ: পরিবেশ বিপর্যয়, বিশ্বায়নের নামে নতুন ঔপনিবেশিকতা, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ, চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি—এই সংকটগুলো তরুণ লেখকদের বা সমকালীন লেখকদের লেখায় কতখানি প্রতিফলিত হচ্ছে বলে আপনার মনে হয়? মানে লেখকেরা কি সময়ের নিবিড় চিত্রকল্প আঁকতে পারছেন?
পাপড়ি রহমান: সেরকম তীব্র কিছু চোখে পড়েনি। হয়তো লেখা হচ্ছে বা হয়েছে, আমার নজর এড়িয়ে গেছে। আরেকটি কথা কেউ কি নির্ভয়ে কিছু লিখতে পারছে নাকি পারবে? বিরুদ্ধমত সহ্য করার মানসিকতা কই? একই মত বা পথের না হলেই তার জীবন সংগীন করে তুলতে আমাদের তো জুড়ি নাই। মাথার ওপর খড়গ রেখে কে কবে সমকালীন বিষয় নিয়ে কী লিখতে পেরেছে? বিগত সরকারের রেজিমের সময় শুরু করা ২০২৫-এ বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত আমার নতুন উপন্যাসে আমি কিছু সংকট চিহ্নিত করতে চেয়েছি। জানি না পাঠক সেসব ধরতে পেরেছেন কি না? তবে কবিতায় কিন্তু ব্যাপক হারে এসব আসতে দেখেছি। যা আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক।

জাগো নিউজ: দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৪ বছর। অনেক বোদ্ধাই মনে করেন, গণতন্ত্র আজও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। গণতন্ত্রের দুর্বলতায় শিল্প-সাহিত্য স্বকীয় গতিতে দৃঢ় পায়ে গন্তব্যের দিকে হেঁটে যেতে পারে না। তারপরও এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের সাহিত্য। এই ৫৪ বছরে সেরা উপন্যাস আপনার দৃষ্টিতে কোনগুলো?
পাপড়ি রহমান: এ প্রশ্নের জবাব কিছুটা আমি আগের প্রশ্নে দিয়েছি। আমি আদতে জানি না সত্যিকার গণতন্ত্র আমাদের দেশে কখনো প্রতিষ্ঠা পাবে কি না? উন্নত বিশ্বে যেভাবে দেখা যায়। আগেই বলেছি, গুম-হত্যা আর জেলের ভয় থাকলে কীভাবে রচিত হয় বা হবে রাজনৈতিক ব্যাপারগুলো? বিগত ৫৪ বছরে ভালো কিছু রচিত হয়নি এমন কিন্তু নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু উপন্যাস আমরা পেয়েছি। দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে পরিমাণ কাজ হয়েছে আমাদের সমকালীন দুরাবস্থা নিয়ে সেরকম কাজ কিন্তু হয়নি। কারণ আগেই বলেছি। কলমের আগায় বারুদ পুরে রাখলে লিখতেই তো ভয় লাগার কথা। এখন হয়নি বলে আগামীতে হবে না এমন কিন্তু নয়। একজন লেখককে অবশ্যই দল বা অন্ধত্বের বাইরে অবস্থান নিতে হয়। নিতে হবে।

জাগো নিউজ: সাহিত্যে নারীবাদ বিষয়টি আপনার কাছে কেমন? বা নারীবাদী সাহিত্যের ব্যাপারে আপনার মতামত বলুন—
পাপড়ি রহমান: আমি আদতে মানবতাবাদী। নারী বা পুরুষের বিভাজন আমার কাছে খুব যুতসই লাগে না। আমি কাউকে ছোট বা বড় করে দেখাতে রাজি নই। যে যেরকমভাবে নিজের পারপাস সার্ভ করে, তাকে তেমনই দেখানো উচিত। নারীবাদ মানেই আমি উগ্রতা বুঝি না। আবার এটাও বলছি না যে, আমি কেবল পড়ে পড়ে মারই খাবো। আমি বুঝি, পুরুষের পাশের চেয়ারে বসার মতো যোগ্য যেন আমাকে মনে করা হয়। আমার মেধা বা ব্যক্তিত্ব কোনোভাবেই যে পুরুষের চাইতে হেয় নয়, এটা যেন স্মরণ রাখা হয়।

নোবেল লরিয়েট কানেইডিয়ান লেখক অ্যালিস মানরোর গল্পগুলো কিন্তু নারীর অন্তর্জগত উন্মোচন করে। কিন্তু তিনি কোথাও আক্রমণাত্মক নন। বা রুঢ় নন। সম্প্রতি ম্যান বুকার প্রাইজ পেলেন ভারতের খাণ্ডালার কন্নড় ভাষার লেখক বানু মুশতাক। তার ‘হার্ট ল্যাম্প’ বইটির বেশিরভাগ গল্পই কিন্তু নারীপক্ষের। কোথাও কিন্তু উচ্চকিত উগ্রতা নেই। বরং করুণ একটা আবহ আছে। যা ঘটছে তা-ই বলেছেন তিনি। উগ্রতা বা গালিগালাজ কোনোদিন প্রতিরোধের ভাষা হতে পারে না।

জাগো নিউজ: সৈয়দ শামসুল হক একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলা সাহিত্যে বিশ্বমানের কবিতা আছে। কিন্তু গদ্য সাহিত্যের অবস্থা করুণ। তেমন বৈশ্বিক মানের গল্প-উপন্যাস নেই বললেই চলে। আপনার পর্যবেক্ষণ কী এই বিষয়ে?
পাপড়ি রহমান: বাংলা সাহিত্য নাকি বাংলাদেশের সাহিত্য? বাংলা সাহিত্যের বিস্তার কিন্তু ব্যাপক। আর বাংলাদেশের সাহিত্যও কিন্তু কম শক্তিশালী নয়। হক ভাই নিজেই তো ছিলেন উত্তম গদ্য লেখক। তিনি কেন এমন বলেছেন আমি ঠিক জানি না। হক ভাইয়ের অন্তত ২-৩টা ক্লাসিক উপন্যাস তো রয়েছেই। আমাদের সাহিত্যে বৈশ্বিকমানের গল্প-উপন্যাস নেই মানে কী? প্রভূতই আছে। আমাদের যেটা মূল সমস্যা, সেটা হলো উন্নত অনুবাদ। সেরকম দক্ষ অনুবাদক কই? ভালো অনুবাদ হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আজ আমাদের শক্ত অবস্থান হতো। আর কিছু নয়; হাসান, ইলিয়াস এবং জহিরকেই অনুবাদ করা হোক না কেন? তারপর দেখো অবস্থা কী দাঁড়ায়?

জাগো নিউজ: লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা স্বপ্ন কী আপনার?
পাপড়ি রহমান: এই বয়সে এসে আর কোনো স্বপ্ন দেখার কোনো মানে নেই। আমার কাছে তাই-ই মনে হয়। তাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও নেই। ভালো লাগলে লিখবো, নইলে নয়। কোনো চাপ নেই। তাড়া নেই। অনেক বছর লেখা নিয়ে ম্যারাথন রেসে ছিলাম। এবার বিশ্রাম নিতে চাই। লিখলাম তো অনেক। ৫টি উপন্যাস। বেশ কিছু গল্প। প্রবন্ধ, নিবন্ধ, মুক্তগদ্য। করেছি সম্পাদনা। রইলাম সংগঠক হিসেবে বহুকাল।

বাদবাকি জীবন ভ্রামণিক হতে চাই। চারপাশের মানুষ আর প্রকৃতি দেখে কাটাতে চাই। সংসারের ঘেরাটোপ আমার কাছে তেমন আকর্ষণীয় লাগেনি কোনোদিনই। কেবল রান্না করা, খাওয়া আর ঘুমানোর মাঝে জীবন আবর্তিত হতে পারে না। তবে স্বপ্ন দেখলেও ক্ষতি নেই। ক্ষতি ছিল না কিছুই। আমি আদতে জানি না, আগামীতে কী করব বা কী করব না। ফের কবীর সুমনের গানে যাই—‘এই যে দেখছি আবছায়াটাই লাগছে ভালো/ ঘরের কোণে একটি মাত্র মোমের আলো কার তাতে কি?/ আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি/ আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি...’

জাগো নিউজ: আপনাদের মতো প্রতিষ্ঠিত লেখকদের তরুণদের প্রতি একটা উন্নাসিকতা দেখা যায়। দুয়েকজনের কথা ফাটিয়ে বলেন, কিন্তু আমাদের কাছে মনে হয় সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ব্যাপারে কী বলতে চান? প্রতিষ্ঠিত এবং তরুণ লেখকদের সেতুবন্ধন কতটা আছে বলে মনে করেন?
পাপড়ি রহমান: এটি একটা ভালো পয়েন্ট। উন্নাসিকতা? নাকি তৈলবাজিতে আক্রান্ত হয়ে ফাটিয়ে বলা? কিংবা টেক অ্যান্ড গিভ? অথবা দলকানা হয়ে চলা। আমি এটা বরাবরই অপছন্দ করেছি। অপছন্দ করেছি বলে ওরকম বলা থেকে বিরত থেকেছি। তরুণ কেউ লিখতে এলে তাকে নিয়ে তখনি কিছু বলা অনুচিত। তাকে লিখবার বা নিজেকে বোঝার জন্য সময় তো দিতে হবে। আর ধরো একটা দশকে একজন বা দুইজন তো লিখতে আসে না, আসে একঝাক করে লেখক। এদের সকলকেই কম-বেশি পড়তে হবে। দুয়েকজনের নাম আলাদা করে বলা মানেই বুঝতে হবে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।

অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখককেই দেখেছি, যেসব অনুজ উপযাচক হয়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করে বা রাখে শুধু তাদের নাম ফলাও করে বলতে। বা তাদের হয়ে লড়তে। আমি কখনোই সত্য থেকে সরে আসি না। বা শুধু ব্যক্তিগত যোগাযোগের ভিত্তিতে কারো নাম মেনশন করা থেকেও বিরত থাকি। যে ভালো লিখছে বা লিখবে তার লেখা নিয়ে বলতেই হবে। এটা আমি আগবাড়িয়েই করি। এবং একজন অগ্রজ লেখক হিসেবে দায়িত্ব বলে মনে করি।

সেতুবন্ধন না চাইলেও তৈরি হয়ই। আর সেটা হয় পাঠের মাধ্যমেই। বিষয়টি ভাইসভার্সার মতো। একজন তরুণ যেমন তার অগ্রজ লেখকের উত্তম রচনাটি পড়বে, তেমনই অগ্রজদের উচিত সদ্য তরুণ লিখিয়ের উত্তম রচনা নিয়ে কথাবার্তা বলা। কারো লেখা ভালো লাগলে আমি ফোন করে তাকে অবশ্যই অভিনন্দন জানাই। আমি মনে করি, একজন লেখককে অনুপ্রাণিত করার জন্য এটা করার দরকার আছে।

জাগো নিউজ: প্রেম-যৌনতা আর শিল্প যেন হাত ধরাধরি করে চলে। লেখকমাত্রই সংবেদনশীল মানুষ। তাই লেখকের জীবনে প্রেমও আসে বারবার। বলা যায় প্রেমই সৃষ্টিকে তাড়িত করে। প্রেম আপনাকে কতটা কাঁদিয়েছে, কতটা ভাসিয়েছে? জীবনে সিরিয়াস প্রেম কতবার এসেছে?
পাপড়ি রহমান: হা হা হা, গোপন প্রশ্নপত্র ফাঁস করার মতলব এঁটেছো? এ প্রশ্নের জবাবে মিথ্যা কথাই বলবে প্রায় সকলে। কিন্তু আমি সাধারণত মিথ্যা বলে অভ্যস্ত নই। বা মিথ্যা বলতে চাই না। প্রেম একটা সময় সিরিয়াস বিষয় বটে! প্রেমে পড়া বা প্রেমে থাকাও মন ও শরীরের জন্য উত্তম। প্রেম আদতে কী? শরীর? শরীরই তো। শরীর ছাড়া নিস্কাম প্রেম ইয়াদ রাখে কয়জন? আর নিস্কাম প্রেম বলে কিছু নেইও। আমার জন্য প্রেমে পড়া সহজ কম্ম নয়। কেউ বহু কায়দা কিনারা না করলে আমি সহসা কারো প্রেমে পড়ি না। এটা আমার মন্দ স্বভাব বলে ধরে নিতে পারো।

প্রেমের নাম ছলনা হলেই ভালো হতো বা ভালো হয়। প্রেম আমাকে হাসানোর চাইতে কাঁদিয়েছেই বেশি। আর সব প্রেমই সিরিয়াস। সব প্রেমই প্রথম। কারণ সকল প্রেমের অনুভূতি প্রায় একই। তবে দীর্ঘদিন সিরিয়াস প্রেমে থাকার পর এখন ম্যালাদিন হয়ে গেল সেরকম করে কারো প্রেমে আর পড়ছি না। হয়তো বয়স হয়েছে, তাই। কবীর সুমনের গলায় বলি, ‘গলার কাছে পাল তুলেছে আজগুবি এক স্মৃতির খেয়া/ বয়স হওয়া মানেই বোধহয় স্মৃতির সঙ্গে আড্ডা দেওয়া,/ কে বলে হে আড্ডা নাকি কম বয়সের কথকথা/বয়স হলেই বরং জমে আড্ডা এবং নীরবতা!’

জাগো নিউজ: রবীন্দ্রনাথ এবং লালনকে খারিজ করছেন বহুজন। তাদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, রবীন্দ্রনাথ ও লালনের সাথে আপনার কেমন পরিচয় বা বন্ধুত্ব? কতটা পিঁড়ি পেতে বসতে দেন আর কতটা উপেক্ষা করেন?
পাপড়ি রহমান: এইগুলো খুবই ইম্যাচিউর কাজকারবার। যে কোনো শিল্পই খারিজ করার এখতিয়ার কারোর নেই। যদি না সময়ের ধূলি তাকে মুছে না দেয়! এসব খামাখাই ধুয়া তুলে নিজেকে বিশাল কিছু দেখানোর অপচেষ্টা মাত্র। ১০০-১৫০ বছর পরে এসে এই খারিজি ব্যাপারটাই আমার কাছে হাস্যকর লাগে। শিল্পের কোনো ধর্ম থাকে নাকি? যে বা যারা খারিজ করছে তারা কারা? তাদের এই খারিজের এখতিয়ার কীসের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে? রবীন্দ্রনাথ না পড়ে সাহিত্য এতদূর আসতো নাকি? আর লালন যা বলে গিয়েছেন, তাঁর চিন্তাকে অগ্রাহ্য করাটা অর্থহীন। এসব যারা করছে, তাদের হয়তো অ্যাটেনশন সিকিংয়ের অসুস্থতা রয়েছে। এই খারিজি-মারিজিতে না গিয়ে নিজে কিছু শিল্প তৈরি করতে পারলেই তো এসব ফালতু কায়কারবার করতে হয় না। যে বা যারা খারিজ করতে চায়, তাদের খারিজ মানে কে? বললাম না, ধুয়া তুলে নিজেকে বিশাল কিছু প্রমাণ করার অপচেষ্টা মাত্র। এখন পাহড়ের গায়ে ঢিল না ছুড়লে কেউ তাকে তো গ্রাহ্য করবে না। লোকজনের গ্রাহ্যের ভেতর থাকতে এসবই আমার কাছে বালখিল্যসুলভ আচরণই মনে হয়।

জাগো নিউজ: নারী স্বাধীনতা ব্যাপারটি আপনার কাছে কেমন? এরসাথে পোশাক বা বাহ্যিক বিষয়টি কতটা সংশ্লিষ্ট মনে করেন?
পাপড়ি রহমান: আগেই বলেছি, যে কোনো স্বাধীনতা মানে আমার কাছে উগ্রতা নয়। অপব্যবহার বা স্বেচ্ছাচারিতা নয়। নিজেদের মন্দ কাজগুলোকে অ্যাপ্রুভ করার নাম স্বাধীনতা হলে আমি সে স্বাধীনতায় নাই। নারীকে আগে মানসিকভাবে উন্নত হতে হবে। অথচ দেখছি বেশিরভাগই মানসিকভাবে হিন্দি জি বাংলার ভিলেন একেকজন আর পোশাকে ওয়েস্টার্ন! এমন হলে এটাকে কী নারীবাদ বলা যাবে? আউটলুকের চাইতে ইনারলুকে প্রগতিশীল হওয়া জরুরি। অন্যের জানালা গলিয়ে ব্যক্তিগত বিষয়াদিতে মনোনিবেশ করার চাইতে লাইব্রেরিতে বসে বইয়ের পাতা উল্টালে স্বাধীনতার সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে করি।

জাগো নিউজ: আপনি কি মনে করেন, কেবল নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নারীকে মুক্তি দিতে পারে? পুরুষতান্ত্রিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে সমাজ, পৃথিবীর রক্ষা পাবার আসলে উপায় কী?
পাপড়ি রহমান: ভার্জিনিয়া উলফ কিন্তু বলেছিলেন, নারীর জন্য নিজের জন্য একটা আলাদা ঘর থাকা জরুরি। একজন নারীকে অর্থনৈতিকভাবে অবশ্যই স্বাধীন হতেই হবে। এতে অনেক কনফ্লিক্ট এড়ানো যায়। এই জগতে কে আর নিজের উপার্জন দ্বিধাহীনভাবে অন্যকে খাওয়াতে চায়? তদুপরি বোকা নারীকে কৌশলীও হতে হবে। প্রেম-ভালোবাসার মতো জলো ব্যাপারগুলোকে বাস্তবতার দৃষ্টিতে দেখতে পারাটাই নারীর জন্য মাঙ্গলিক। দেখবে বেশিরভাগ নারী ধরা খায় প্রেম-ভালোবাসা নামক আলেয়ার ফাঁদে পড়ে। ভেন্টিলেশনের জন্য নারীর একেবারে নিজস্ব আলাদা আলাদা উইন্ডো থাকা উচিত। শুধু পরিবারকেন্দ্রিক থাকলে নারীর মরণ অবধারিত। বহু বন্ধুর করুণ পরিণতি দেখে আজ উচ্চস্বরে কথাটি বলে গেলাম।

জাগো নিউজ: নতুন যারা কথাসাহিত্য চর্চায় এসেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে কী কী পরামর্শ দেবেন?
পাপড়ি রহমান: তাদের জন্য তিনটি কাজ করতে হবে—পাঠ, পাঠ এবং পাঠ। পাঠের কোনো বিকল্প নাই। অগ্রজদের ক্ল্যাসিকগুলো পড়তেই হবে। সেইসাথে বহির্বিশ্বে কী বা কেমন লেখা হচ্ছে? নিজের লেখার কড়া সমালোচক নিজেকেই হতে পারা। কেন আমার লেখাটি ভালো হচ্ছে না, সে বিষয়ে দূরদৃষ্টি থাকা দরকার বলে মনে করি। আর কিছুতেই তাড়াহুড়া না করা। কাটাকুটির খেলা যেন চলতেই থাকে। চলতেই থাকে।

আমাকে রাতারাতি লেখক হতেই হবে—উহু, এরকম ভাবলে চলবে না। লেখা এবং ভালো লেখক হওয়ার প্রক্রিয়াটিই ধীর। অনেকটা ধ্যানমগ্ন সন্ন্যাসীর মতো। কাউকে খারিজ করার আগে তাকে ভালো করে জেনে বুঝে পড়ে নিতে হবে। আজকে যে নবীন লেখকের প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হলো, তাকে আমার অভিবাদন পৌঁছে দিতে চাই। বলতে চাই, লেগে থাকো। একদিন তুমি পারবে। আদতে এই লেগে থাকার ধৈর্য্যটাই সকল উত্তম কিছুর মূলমন্ত্র।

এসইউ/

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow