লোকসানি আইএসএন ছুটছেই

1 week ago 3

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্তের নির্দেশ, প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করা—কোনো কিছুতেই থামছে না লোকসানে নিমজ্জিত ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেডের (আইএসএন) শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা। বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা আরও বেড়েছে।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কের শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততোটাই বেড়েছে। এমনকি লেনদেনের এক পর্যায়ে দিনের সর্বোচ্চ দামে কোম্পানিটির শেয়ারের বিপুল ক্রয়াদেশ এলেও বিক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। এতে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়ে একশো টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

কোম্পানিটি শেয়ারের এই দাম বাড়ার প্রবণতা চলছে তিন মাসের বেশি সময় ধরে। অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তাও প্রকাশ করা হয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিএসইসি থেকে ডিএসইকে তদন্তের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এমন দাম বাড়াকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ইনফরমেশন সার্ভিসেসে নেটওয়ার্কের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল। কোম্পানিটি লোকসানের মধ্যে রয়েছে। আবার লভ্যাংশের অতীত ইতিহাসও খুব একটা ভালো না। এমন একটি কোম্পানির শেয়ার দাম এভাবে বাড়া কিছুতেই স্বভাবিক ঘটনা না। এই দাম বাড়ার পেছনে কোনো বিশেষ চক্রের হাত থাকতে পারে।

শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ডিএসই থেকে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশের জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্প্রতি শেয়ারের যে দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে তার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদশীল তথ্য নেই।

ডিএসই থেকে এমন তথ্য প্রকাশ করা হলেও বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততোটাই বেড়েছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন শুরুর দাম ছিলো ৯৬ টাকা ১০ পয়সা। এখান থেকে বেড়ে দিনের লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ১০৫ টাকা ৭০ পয়সায়। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৯ টাকা ৬০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সার্কিট ব্রেকারের কারণে একদিনে এর বেশি দাম বাড়ার সুযোগ নেই।

দিনের সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হওয়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির বড় অঙ্কের শেয়ার হাতবদল হয়েছে। ৩ হাজার ৫৯৯ বারে কোম্পানিটির ১৬ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া এই শেয়ারের মূল্য ১৫ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

কোম্পানিটির শেয়ারের এই দাম বাড়ার প্রবণতা চলছে গত ৩০ এপ্রিলের পর থেকেই। গত ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিলো ৩৩ টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ সাড়ে তিন মাসের ব্যবধানে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭২ টাকা বা ২১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

অন্যভাবে বলা যায়, যদি কোনো বিনিয়োগকারী গত ৩০ এপ্রিল ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কের ১০ লাখ টাকার শেয়ার কিনেন, তাহলে এখন তার বাজার মূল্য ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৮ টাকা। এ হিসেবে ১০ লাখ টাকা খাটিয়ে সাড়ে তিন মাসেই মুনাফা পাওয়া গেছে ২১ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বেশি।

শেয়ার এমন দাম এবাবে বাড়া কোম্পানিটির সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের ব্যবসায় লোকসান হয়েছে ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৪ টাকা। এতে শেয়ার প্রতি ১৭ পয়সা লোকসান হয়েছ।

এদিকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগে ২০২৩ সালে ১ শতাংশ, ২০২২ সালে ৩ শতাংশ, ২০২০ সালে ১ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। অর্থাৎ কোম্পানিটির লভ্যাংশের হার খুব একটা ভালো না।

২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার ৩টি। এর মধ্যে ২১ দশমিক ৪৭ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ শেয়ার আছে।

যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য এরই মধ্যে ডিএসইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএসই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।’

এমএএস/এমকেআর

Read Entire Article