লোকসানের ঝুঁকি নিয়েও আলু চাষে নেমেছেন কৃষকরা

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় আলুর বীজের বাজারে ব্যাপক ধস নেমেছে। গত মৌসুমের তুলনায় এবার বীজ বিক্রি কমেছে প্রায় ৭৭ শতাংশ। দামও অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। তার পরও লোকসানের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে অনেক কৃষক মাঠে নেমেছেন আলু চাষে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ১৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। সে সময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২.০৫ টন উৎপাদন। পরবর্তী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে একই পরিমাণ (১৪০ হেক্টর) জমিতে চাষ বজায় রাখা হলেও লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ টনে। কিন্তু আলুর বাজারদর কমে যাওয়ায় কৃষকদের আগ্রহে ভাটা পড়ে। ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে উপজেলায় আলু চাষের জমি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭৮ হেক্টরে। মাটিরাঙ্গার সারের ডিলার ও বীজ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হাকিম স্টোরের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হাকিম জানান, গত বছর তার দোকানে প্রায় ৭০ টন আলুর বীজ বিক্রি হয়েছিল। দেশি জাতের বীজ বিক্রি হয়েছিল কেজিপ্রতি ৭০ টাকায় এবং উন্নত জাতের ডায়মন্ড কেজি প্রতি ৭৫ টাকায়। কিন্তু চলতি রবি মৌসুমে মাত্র ১৬ টন বীজ বিক্রি হয়েছে গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় ৭৭ শতাংশ কম। এর মধ্যে ১৪ টন ডায়মন্ড জাত বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৪৭ টাকায় এবং দেশি জাত

লোকসানের ঝুঁকি নিয়েও আলু চাষে নেমেছেন কৃষকরা

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় আলুর বীজের বাজারে ব্যাপক ধস নেমেছে। গত মৌসুমের তুলনায় এবার বীজ বিক্রি কমেছে প্রায় ৭৭ শতাংশ। দামও অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। তার পরও লোকসানের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে অনেক কৃষক মাঠে নেমেছেন আলু চাষে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ১৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। সে সময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২.০৫ টন উৎপাদন। পরবর্তী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে একই পরিমাণ (১৪০ হেক্টর) জমিতে চাষ বজায় রাখা হলেও লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ টনে। কিন্তু আলুর বাজারদর কমে যাওয়ায় কৃষকদের আগ্রহে ভাটা পড়ে। ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে উপজেলায় আলু চাষের জমি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭৮ হেক্টরে।

মাটিরাঙ্গার সারের ডিলার ও বীজ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হাকিম স্টোরের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হাকিম জানান, গত বছর তার দোকানে প্রায় ৭০ টন আলুর বীজ বিক্রি হয়েছিল। দেশি জাতের বীজ বিক্রি হয়েছিল কেজিপ্রতি ৭০ টাকায় এবং উন্নত জাতের ডায়মন্ড কেজি প্রতি ৭৫ টাকায়। কিন্তু চলতি রবি মৌসুমে মাত্র ১৬ টন বীজ বিক্রি হয়েছে গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় ৭৭ শতাংশ কম।

এর মধ্যে ১৪ টন ডায়মন্ড জাত বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৪৭ টাকায় এবং দেশি জাতের ২ টন বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকায়। চাহিদা এত কম যে ২ টন বীজ অবিক্রীত থেকে যায় এবং শেষ পর্যন্ত পাইকারকে ফেরত দিতে হয়েছে।

হতাশা প্রকাশ করে আব্দুল হাকিম বলেন, কুমিল্লার চান্দিনা বাজার থেকে পাইকারি কিনে এনে মাটিরাঙ্গায় বিক্রি করি। কিন্তু এবার বেচাকেনা এত কমেছে যে অনেক বীজ ব্যবসায়ীই লোকসান গুনছেন। তবে উপজেলার তাইন্দং ও গোমতী ইউনিয়নে তুলনামূলক বেশি বীজ বিক্রি হয়েছে। সার্বিকভাবে পুরো উপজেলায় আলু চাষের জমি এবার অনেকটাই কমে গেছে।

কৃষকরা জানান, গত মৌসুমে আলুর দাম খরচও তুলতে না পারায় অনেকেই এবার আলু চাষ ছেড়ে অন্য ফসলে ঝুঁকেছেন। যারা চাষ করছেন, তারাও আগের তুলনায় অনেক কম জমিতে আলু লাগাচ্ছেন। ফলে বীজের চাহিদা হুড়মুড় করে কমে গেছে।

তবে বীজ ব্যবসায়ী থেকে কৃষক সবাই একবাক্যে বলছেন, আলুর বাজারদর না বাড়লে আগামী মৌসুমে এ অঞ্চলে আলু চাষ আরও কমে যাবে।

মাটিরাঙ্গা নতুন পাড়ার কৃষক মো. দুলাল মিয়া ১.২ একর জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছেন। তিনি প্রতি মণ ডায়মন্ড জাতের আলু ২ হাজার টাকা দরে মোট ১৬ মণ বীজ কিনেছেন। পুরো জমিতে সার বাবদ খরচ হবে প্রায় ৬০ হাজার টাকা, চার দফা সেচে পানির খরচ ৮ হাজার টাকা, কীটনাশক ৩ হাজার টাকা এবং জমির পরিচর্যা, মজুরিসহ ফসল তোলা পর্যন্ত প্রায় ৬০ জন শ্রমিকের মজুরি বাবদ ৪২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে উৎপাদন ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

এই জমি থেকে প্রায় ১২ টন আলু উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। হিসাব অনুযায়ী প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়বে ২২-২৫ টাকা। বাজারে দাম না বাড়লে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

দুলাল মিয়া বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ভর্তুকির আশ্বাস পেয়েছি। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।

কৃষক আব্দুর রব বলেন, গত মৌসুমের লোকসান কাটিয়ে উঠতেই এবার অল্প জমিতে আবার আলু চাষে নেমেছি। এবার কিছু খরচ কমেছে। আশা করছি, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং ফলন ভালো হলে গতবারের লোকসান কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারব।

নতুন পাড়ার কৃষক ধনা মিয়া বলেন, গত বছর আলু চাষ করে আমি বেশ বড় ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম। তাই এবার খুব সতর্কতার সঙ্গে অল্প জমিতেই আলু বীজ রোপণ করেছি। কিন্তু এবার গাছগুলো দেখে মনে হচ্ছে ফলন খুবই ভালো হবে। যদি বাজারে আলুর দাম একটু বাড়ে, তাহলে এবার বেশ লাভবান হতে পারব ইনশাআল্লাহ।

মাটিরাঙ্গা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ চাকমা বলেন, বাজারদর স্থিতিশীল থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন। তবে দাম না বাড়লে কিছুটা ক্ষতির ঝুঁকি থেকেই যায়। আমরা কৃষকদের বিকল্প বাজার খোঁজা, গুদামজাতকরণ এবং উৎপাদন পরিকল্পনায় আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, গত মৌসুমে লোকসান হওয়ায় এবং কৃষকদের বিকল্প শস্য আবাদে উৎসাহিত করতে চলতি মৌসুমে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কম রাখা হয়েছে। তার পরও অনেক কৃষক ঝুঁকি নিয়েই আলুর বীজ রোপণ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ, রোগ-বালাই ব্যবস্থাপনা, পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং সার-বীজ ব্যবহারের সঠিক নির্দেশনা দিচ্ছি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow