শঙ্কায় ফুলবাড়ী স্থলবন্দরের শ্রমিক-ব্যবসায়ী

3 months ago 12

নিজেদের স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশি পোশাকসহ বেশকিছু পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। শনিবার (১৭ মে) ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে।

নির্দেশনায় বলা হয়, বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ও তাৎক্ষণিকভাবে তা কার্যকর হবে। এদিকে, ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি পণ্য এই সীমান্ত দিয়ে ভারতে না প্রবেশ করার কারণে পণ্য ওঠানো নামানোর কাজে কর্মরত শ্রমিকের রুটি রুজিতে টান পড়ার ভারতীয় আমদানিকারকদের প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।

ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে নিশ্চিত ভাবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিবহণ ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। তেমনি সরকারের এই সিদ্ধান্তে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন, ঠিক সেভাবেই আমদানি বন্ধ হলে কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হবে ভারতীয় ট্রাক মালিক, চালক ও বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের। তবুও দেশের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আপাতত স্বাগত জানিয়েছেন তারা।

রোববার (১৮ মে) সকাল থেকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির ফুলবাড়ী শুল্ক পয়েন্টে দেখা গেলো- প্রতিদিনের মতোই বাংলাদেশে যাচ্ছে পাথর। তবে দুপুর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সেভাবে কোনো গাড়ি ভারতে ঢুকতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ থেকে মূলত কাটা কাপড়, তুলার বর্জ্য, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কার্বনেটেড পানীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাবার ভারতে আসে ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে।

ফুলবাড়ী এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও স্থানীয় এক্সপোর্টার শুভংকর নস্কর জানান, ফুলবাড়ী শুল্ক পয়েন্ট দিয়ে মূলত বাংলাদেশ থেকে কাঠের আসবাবপত্র, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কার্বনেটেড পানীয়, চিপস, তুলার বর্জ্য- এই ধরনের পণ্য আমদানি হতো। স্থলপথে সবচেয়ে কম দূরত্বের মধ্যে এই ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে কাজ হতো। কিন্তু এখন তার পরিবর্তে কলকাতা ও মহারাষ্ট্রের নাভা শেভা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের নির্দেশনা আসায় বাংলাদেশের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়বে ও তারা সমস্যায় পড়বেন। ভারতের অর্থনীতিতেও এর একটা প্রভাব পড়বে বলে অভিমত তার।

ফুলবাড়ী স্থলবন্দরের ট্রাক ওনার্স প্রেসিডেন্ট মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাট, কাটা কাপড় ও তুলা আসতো। কিন্তু এই ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার কারণে বাংলাদেশকে অন্য পথে এসব পণ্য রপ্তানি করতে হবে। এতে পরিবহণ খরচ বেড়ে যাবে ও সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছুটা প্রভাব পড়বে।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে ভারতের অর্থনীতিতেও সামান্য প্রভাব পড়তে পারে, কিন্তু তারপরও দেশের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিতে বাধ্য।

ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে এখন থেকে বাংলাদেশ থেকে কোনো তৈরি পোশাক ভারতের মহারাষ্ট্রের নাভা শেভা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ছাড়া অন্য কোনো স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। পাশাপাশি আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের কোনো শুল্ক পয়েন্ট এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী শুল্ক পয়েন্ট দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কার্বনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, তুলাবর্জ্য, প্লাস্টিকের পণ্য (শিল্প-উৎপাদনের নির্দিষ্ট কাঁচামাল ছাড়া) ও কাঠের আসবাবপত্র আমদানি করা যাবে না। যদিও ওই নিষেধাজ্ঞা মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল ও চূর্ণ পাথরের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না।

ডিডি/এসএএইচ

Read Entire Article