শনির আখড়া হাটে ঢুকছে পশু, জমেনি বেচাকেনা

3 months ago 32

ঈদুল আজহা সামনে রেখে ধীরে ধীরে জমে উঠছে রাজধানীর পশুর হাটগুলো। দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাটে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকায় দনিয়া কলেজ মাঠে বসেছে পশুর হাট। এরই মধ্যে সেই হাটে এসেছে পাঁচ হাজারেরও বেশি গরু।

ব্যাপারী ও হাট ইজারা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যে হারে গরু আসছে সেভাবে বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি। বিক্রি খুবই কম। যারা হাটে আসছেন তাদের অনেকেই গরু দেখছেন, দাম বোঝার চেষ্টা করছেন, আবার চলেও যাচ্ছেন। এখন দু-একটি করে গরু টুকটাক বিক্রি হচ্ছে।

শনির আখড়া হাটে ঢুকছে পশু, জমেনি বেচাকেনা

আগামী সোমবার (১৭ জুন) দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন হবে। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এ উৎসবে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তাদের প্রিয় বস্তু অর্থাৎ পশু কোরবানি করে থাকেন।

আরও পড়ুন

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকাল থেকে শনির আখড়া হাট ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল এলাকাজুড়ে গরু-ছাগল নিয়ে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন ব্যাপারীরা। বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ট্রাকে আসা গরু নামানো হচ্ছে হাটের বিভিন্ন পয়েন্টে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুপাশে কাজলা থেকে একেবারে রায়েরবাগ পর্যন্ত বসেছে হাট। এ মহাসড়কের দুপাশে গোবিন্দপুর, নয়াপাড়া, শেখদীসহ আশপাশের সড়কগুলোতে হাট বসার কারণে যানবাহন চলাচল এখনই প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন সেসব এলাকার বাসিন্দারা। আগামী দুদিনে দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ব্যাপারীরা ইচ্ছেমতো দাম চাইছেন এখন। ক্রেতারাও ঘুরে ঘুরে দাম বোঝার চেষ্টা করছেন। যাদের দু-একদিন গরু লালন-পালন বা রাখার জায়গা আছে তারা দামদরে মিললে কিনেও নিচ্ছেন।

শনির আখড়া হাটে ঢুকছে পশু, জমেনি বেচাকেনা

তবে ব্যাপারীদের ধারণা, সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এবার কোরবানির পশুর দাম কিছুটা কম থাকতে পারে। শুক্রবার থেকে মূলত বেচাকেনা শুরু হয়ে আগামী রোববার পর্যন্ত চলবে বলেও জানিয়েছেন তারা। তখনই দামের প্রকৃত অবস্থাটা বোঝা যাবেও বলেও মনে করছেন তারা।

শনির আখড়া বাগানবাড়ী ঢালে গরু নিয়ে বসেছেন মো. কামরুল ইসলাম, তিনি এসেছেন মাগুরা থেকে। কথা হলে জাগো নিউজকে বলেন, আমি মোট আটটা গরু নিয়ে এসেছি। এরই মধ্যে দুটি বিক্রি করে দিয়েছি।

গরুর দাম গত বছরের মতোই রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তবে বাজার একটু কম কম মনে হচ্ছে এবার। আমি দুটি গরুর একটি ১ লাখ ৬১ হাজার এবং অন্যটি দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেছি।

শনির আখড়া হাটে ঢুকছে পশু, জমেনি বেচাকেনা

কামরুল বলেন, এবার দাম একটু কম মনে হচ্ছে। কারণ, একদিন আগেও ক্রেতারা যে দাম বলে গেছেন আজকে এসে তার থেকেও কম বলছেন। বুধবার যে গরু ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দাম উঠেছে আজ সেটি দেড় লাখ টাকার উপরে যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

বৃহস্পতিবারই সিরাজগঞ্জ থেকে বড় আকৃতির একটি গরু নিয়ে এসেছেন পাঁচজন। গরুটি নিয়ে তারা শনির আখড়া ফ্লাইওভারের উত্তর পাশে অবস্থান নিয়েছেন। গরুর যত্নে পাঁচজনই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। গরুর দাম হাঁকছেন ১০ লাখ টাকা। এ গরুর সঙ্গে থাকা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এ গরুটা চার বছর লালন-পালন করেছি। ১০ লাখ টাকা হলে বিক্রি করবো।

ফরিদপুর ভাঙ্গা থেকে ১৫টি গরু নিয়ে এসেছেন বিল্লাল শেখ। তিনি বলেন, গত বুধবার আমরা আসছি, এখনো একটা গরুও বিক্রি করতে পারিনি। বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। তবে ফাঁকে ফাঁকে দু-একটা বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি শুক্রবার থেকেই মূল বেচাকেনা শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের খরচ অন্যান্য বছর থেকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে বাজারের কী অবস্থা হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন।

সিরাজগঞ্জ থেকে পাঁচটি গরু নিয়ে আসা মুকাদ্দির বলেন, এখনো একটা গরুও বিক্রি হয়নি। আমার মামা এসেছেন চল্লিশটা গরু নিয়ে, তারও এখনো বিক্রি হয়নি।

‘আমার গরুর দাম আড়াই থেকে দুই লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত বাজারে দাম কম মনে হচ্ছে। মূল বেচাকেনা হবে আগামী শনি ও রোববার। দেখি কী হয়’- বলেন মুকাদ্দির।

শনির আখড়া হাটে ঢুকছে পশু, জমেনি বেচাকেনা

ফরিদপুর থেকে বড় আকৃতির ছয়টি নিয়ে এসেছেন আকমত শিকদার। প্রত্যেকটি গরুই দাম ৫ লাখ টাকার বেশি চাইছেন। তিনি বলেন, আমি ছয়টি গরু নিয়ে এসেছিলাম। খরচ মোটামুটি গত বছরের মতই পড়েছে।

আকমত শিকদার বলেন, একটি গরু নামানোর সময় পা ভেঙে গিয়েছিল। পা ভাঙার কারণে ব্যথায় জ্বর এসে গিয়েছিল। পরে ৫ লাখ টাকার গরু ২ লাখ টাকায় কসাইদের কাছে বিক্রি করতে হয়েছে।

হাটে অনেকেই ঘুরে ঘুরে গরু দেখছিলেন। তাদের একজন মাতুয়াইল কবরস্থান রোডের সিদ্দিকুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দাম বোঝার চেষ্টা করছি। তবে ব্যাপারীরা অনেক দাম চাইছেন। মাঝারি ধরনের গরু দেড় লাখ টাকার নিচে নেই।

আরও পড়ুন

শনির আখড়া পশুর হাটের ইজারাদার মো. কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, এখনো বেচাবিক্রি শুরু হয়নি বলা যায়। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫টি গরু বিক্রি হয়েছে। আমরা আশা করছি, আজকে রাত থেকে বিক্রি শুরু হবে।

শনির আখড়া হাটে ঢুকছে পশু, জমেনি বেচাকেনা

তিনি বলেন, আমরা কমপক্ষে ১৫ হাজার গরু হাটে আনতে চাই। ১৫ হাজার গরুর বিক্রি না হলে আমরা লোকসানে পড়বো। আমরা গতরাতে একটা গণনা করেছিলাম, সে অনুযায়ী দেখেছি এখন পর্যন্ত হাটে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো গরু উঠেছে।

দামের বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো ব্যাপারীরা দাম ছাড়ছেন না। তারা এলোমেলো দাম চাইছেন। প্রকৃত দামটা বোঝা যাবে আর একদিন পর।

দনিয়া কলেজ মাঠ ছাড়াও আশেপাশের সব ফাঁকা জায়গায় হাট বসানো হবে জানিয়ে ইজারাদার বলেন, অনুমোদিত স্থানের বাইরে আমরা হাট বসাচ্ছি না। মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমাদের ভলান্টিয়াররা কাজ করছেন। রাস্তার দুপাশে দুজন করে চারজন ট্রাফিক পুলিশ রয়েছেন। হাটের কারণে যেন যানজট না হয় সেটি নিশ্চিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা আমরা করছি।

আরএমএম/এমকেআর/জিকেএস

Read Entire Article