শরীয়তপুরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা অমিত ঘটক চৌধুরীর নেতৃত্বে মানববন্ধন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পোস্টার লাগানো ও ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার প্রতিবাদে এ মানববন্ধন করা হয়।
রোববার (১০ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে আওয়ামী লীগ নেতা অমিত ঘটক চৌধুরীসহ শরীয়তপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শংকর প্রসাদ চৌধুরীকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। পাশাপাশি দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
স্থানীয়রা জানান, শরীয়তপুর সদরের বালুচরা এলাকার বাসিন্দা অমিত ঘটক চৌধুরী একজন আইনজীবী। তিনি শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাকে ওই কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। বর্তমানে তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
অভিযোগ রয়েছে, গত বছর জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে অমিত ঘটক চৌধুরী আওয়ামী লীগের পক্ষে লাঠিসোটা নিয়ে মিছিলে অংশ নেন। ওই কর্মসূচিগুলোর বিভিন্ন ছবি তার ফেসবুকে পোস্ট করেন। এছাড়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের উস্কানিমূলক পোস্ট দেন ফেসবুকে। সম্প্রতি তার ওই সব কর্মকাণ্ড নিয়ে লিফলেট ছাপিয়ে শরীয়তপুরের বিভিন্ন দেওয়ালে পোস্টার লাগায় একটি পক্ষ। শরীয়তপুরের সাধারণ ছাত্র-জনতা ও সচেতন মহলের ব্যানারে ওই সব পোস্টার লাগানো হয়।
অপরদিকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে শরীয়তপুর সদরের দাসাত্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ দত্ত। তার বিচার চেয়েও সম্প্রতি একটি মহল শহরের লিফলেট বিতরণ করেন। ওই লিফলেট ও পোস্টার লাগানোর প্রতিবাদে এবং যারা পোস্টার লাগিয়েছেন তাদের বিচারের দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নিজেকে শরীয়তপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরিচয় দিয়ে অমিত ঘটক চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি একটি ফেসবুক পেজে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করছে। পরবর্তীতে তারা সেটি মুছে দেয়। পরবর্তীতে পূজা উদযাপন পরিষদের আরও দুই নেতার নামে কুরুচিপূর্ণ ও অসত্য মিথ্যা লিফলেট কে বা কারা গোপনে প্রচার করে চলে গেছে। আমরা এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পূজা উদযাপন পরিষদ মনে করে পালং হরিসভা কেন্দ্রীয় মন্দিরের নতুন কমিটি হওয়াকে কেন্দ্র করে কুচক্রী মহল এমন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।
আপনি ৫ আগস্ট তৎকালীন সরকারের পক্ষ নিয়ে ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ওই আন্দোলনের সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু পোস্ট করিনি। এছাড়া আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন ওই সরকারের আমলে কারা সুবিধা নিয়েছে। আমি কখনোই ওই সরকারের আমলে কোনো সুবিধা নেইনি।
দাসাত্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ দত্ত বলেন, একটি মিথ্যা ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত করে আমাকে হেনস্থা করা হয়েছে। সেই অপবাদ থেকে মুক্ত করে আবার চাকরি করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। পালং হরিসভার কেন্দ্রীয় মন্দির কমিটি গঠনে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কথা বলতে গিয়ে কিছু লোকের বিরাগভাজন হয়েছি। তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিষয়টি ফাইল দেখে বলতে হবে। নির্দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, আর দোষী হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।
জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, মানববন্ধনের বিষয়ে আমার জানা নেই, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না। তবে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয় সেক্ষেত্রে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বিধান মজুমদার অনি/জেডএইচ/জেআইএম