সবেমাত্র আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। এসব জমিতেই এখন চলছে রসুন রোপণের তোড়জোড়। মূলত ধান কাটার পর জমির খড় সরিয়ে সেই জমিতেই আবাদ করা হবে বিনা চাষ পদ্ধতিতে রসুন। শরীয়তপুরে এই পদ্ধতিতে আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কম খরচ ও আগাম উঠায় কৃষকদের সবাই এখন ঝুঁকছেন এই পদ্ধতির চাষে। তবে দিন দিন সার কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা বিপাকে কৃষক। তাই সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলা শরীয়তপুরের প্রত্যেকটি উপজেলায় কমবেশি রসুনের আবাদ হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের মাটি বেলে দোআঁশ হওয়ায় রসুনের উৎপাদনও বেশ ভালো। তবে জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় জেলার মধ্যে সবচাইতে বেশি রসুন আবাদ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে জেলায় রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন।
কৃষকরা জানায়, এক সময় এই অঞ্চলে চাষ পদ্ধতিতে রসুন আবাদ করা হতো। এতে গরুর লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষাবাদ করায় তাদের শ্রম ও অর্থের বেশি প্রয়োজন হতো। তাছাড়া চাষ করা পদ্ধতিতে কীটনাশক ও সারের ব্যবহার বেশি দরকার হতো। তবে এখন দিন দিন বিনা চাষ পদ্ধতিতে আবাদ হচ্ছে রসুন। মূলত আমনের জমিতে বিনা চাষ পদ্ধতিতে রসুন বেশি আবাদ হয়ে থাকে। বর্ষার পানি জমি থেকে নেমে যাওয়ার পর আমন ধান কাটা হয়। সেই ভেজা জমিতে ধানের খড় সরিয়ে রসুন গেঁথে দেওয়া হয়। অক্টোবর মাসের শেষের দিক থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়টি বিনা চাষ পদ্ধতিতে রসুন আবাদের উপযুক্ত সময় ধরা হয়।
রোপণ করা রসুনের সুরক্ষার জন্য জমিতে পড়ে থাকা খড় রসুনের উপরে মালঞ্চিং পদ্ধতি অবলম্বন করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে জমির মাটির উর্বরতা ধরে রাখা সম্ভব হয় এবং ফসলে কীটপতঙ্গের আক্রমণও কম হয়। তাছাড়া বিনা চাষ পদ্ধতিতে যেহেতু মৌসুমের শুরুতে রসুন আবাদ করা হয় সেক্ষেত্রে রসুন খুব তাড়াতাড়ি উত্তোলন করা যায়। এতে বাজারে বেশ ভালো দামেই বিক্রি করা যায়।

নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের কৃষক নিরঞ্জন মাল। চলতি মৌসুমে ৪০ শতাংশ জমিতে বিনা চাষ পদ্ধতিতে রসুন আবাদ করেছেন তিনি। বাজারে ভালো দাম পেলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, বিনা চাষ পদ্ধতিতে রসুন আবাদ আমাদের জন্য বেশি সুবিধা। একবার রোপণ করে দিলেই হয়, শুধু উঠানোর সময় টেনে উঠাতে হয়। আগে চাষ পদ্ধতিতে রসুনের জমি হাল দিয়ে চাষ করে উপযোগী করতে হতো। তারপর কোটা (লোহার ফল লাগানো এধরনের কৃষিযন্ত্র) দিয়ে টেনে মাটি মসৃণ করতে হতো। এতে আমাদের খরচ দ্বিগুণ হয়ে যেতো। বিনা চাষে রসুনের উৎপাদন খরচ কম ও রসুনের ফলন বেশি হয়। এই পদ্ধতিতে আবাদ করে আমরা লাভবান হচ্ছি।
জাজিরার জামতলা এলাকার কৃষক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিনা চাষ পদ্ধতি রসুন আবাদ আমাদের কৃষকদের মধ্যে বেশ সারা ফেলেছে। এতে ফসল দ্রুত ঘরে তোলা যায়। আর দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। তবে এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে দিন দিন সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, যাতে আমাদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়।’
জামাল দেওয়ান নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘বিনা চাষ পদ্ধতি আমাদের জন্য ভালো। তবে বৃষ্টি আসলে নিচু জমিতে কিছুটা ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে রসুন একবার গজিয়ে গেলে তেমন সমস্যা হয় না। তাছাড়া ধানের খড় আর কচুরিপানা দিয়ে ফসল ঢেকে রাখার এই পদ্ধতিতে ক্ষতির সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।’
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, ‘বিনা চাষ পদ্ধতিতে রসুন আবাদ কৃষকদের জন্য খুব লাভজনক। এই পদ্ধতিতে একদিকে খরচ কম, অন্যদিকে মৌসুমের শুরুতে ফসল ওঠায় বাজারে বেশ ভালো দাম পাওয়া যায়। তাছাড়া খড় দিয়ে মালচিং পদ্ধতি অবলম্বন করায় ফসলের তেমন সমস্যা হয় না। আমরা সব সময় কৃষক ভাইদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের হাওরে হাঁস পালনে সম্ভাবনার আশা
পানিফল চাষে কম খরচে বেশি লাভ
বিধান মজুমদার অনি/কেএসকে/এএসএম

4 hours ago
7








English (US) ·