শহীদ মিনারে রাত কাটছে প্রাথমিক শিক্ষকদের, রোববার থেকে কর্মবিরতি

2 hours ago 7

১০ম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন। আজ রাতে তারা সেখানেই থাকবেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা শহীদ মিনার ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

শনিবার (৮ নভেম্বর) রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষকরা সঙ্গে আনা পলিথিন, মাদুর ও বিছানার চাদর বিছিয়ে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে আছেন। অনেকে দিনভর ঘটে যাওয়া নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। অনেকে আবার ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’র নেতারাও শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন। তারা আহত শিক্ষকদের মধ্যে যারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে শহীদ মিনারে ফিরে এসেছেন, তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন।

পটুয়াখালী থেকে আসা সহকারী শিক্ষক আনসারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করে শিক্ষকতা পেশায় এসেছি। যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে এ চাকরি করছি। তাহলে আমাদের কেন দশম গ্রেড দেওয়া হবে না? অথচ ১৬তম গ্রেডে চাকরিতে যোগ দেওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দশম গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দশম গ্রেড দিতে হবে। অন্যথায় আমরা ঘরে ফিরবো না।’

নাজমুন নাহার এসেছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে। তিনি মাদুর বিছিয়ে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে আছেন। সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষিকা। নাজমুন নাহার বলেন, ‘নারী হয়ে আমরা আজকে খোলা আকাশের নিচে কেন, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। শখ করে কেউ এখানে আসবে না। ১৩তম গ্রেডে আমাদের যে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য। আমার অনেক সহকর্মী ঋণগ্রস্ত। শিক্ষকদের আর্থসামাজিক উন্নতি না হলে এ জাতিরও উন্নতি হবে না।’

রাতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন
এদিকে, শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলা, পাঁচজন শিক্ষককে আটকের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি করবেন আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষকরা।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আজ রাত ১২টা ১ মিনিটে আমরা মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করবো। শাহবাগ থানায় আটক থাকা শিক্ষকদের মুক্তি ও আহতদের সুচিকিৎসা দেওয়ার দাবি এবং পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি করা হবে।

রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি
তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সহকারী শিক্ষকরা।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ।

তিনি বলেন, ‘দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল (রোববার) থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে।’

আটক ৫ শিক্ষকের মুক্তি দাবি
তিন দফা দাবিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের চলমান কর্মসূচি থেকে পাঁচজন শিক্ষককে পুলিশ আটক করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। অবিলম্বে আটকদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’র পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তির তথ্যমতে, শাহবাগ থেকে আটক শিক্ষকরা হলেন- জয়পুরহাটের সহকারী শিক্ষক ও সরকারি প্রাথ‌মিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় প‌রিষদের সমন্বয়ক মু. মাহবুবুর রহমান, পটুয়াখালীর লিটন মিয়া, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের আব্দুল কাদের, ধামরাইয়ের শরিফুল ইসলাম ও কুমিল্লার মো. সোহেল।

তবে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি
সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবিগুলো হলো—দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা তিন লাখ ৮৪ হাজার। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে দশম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে থাকা শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে এ পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকরা।

শিক্ষকদের আন্দোলন অযৌক্তিক: গণশিক্ষা উপদেষ্টা
এদিকে, খুলনায় এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, দশম গ্রেডের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের এ আন্দোলন অযৌক্তিক।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ সহকারী শিক্ষক মনে করেন দশম গ্রেডের এ দাবি যৌক্তিক নয়। প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে তাদের দশম গ্রেডে আনা; এটি সম্ভব নয়। একবারে ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে আনার কোনো যুক্তিই নেই।

‘তারা যেন ১১তম গ্রেড পেতে পারেন, সেজন্য আমরা কাজ করছি। তাদের এ মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়াটাও যৌক্তিক নয়।’ যোগ করেন বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

এএএইচ/এমকেআর

Read Entire Article