চব্বিশের জুলাই আন্দোলনকে স্মরণ করে বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় স্থাপন করা হয়েছে ‘৩৬ জুলাই’ স্মৃতিস্তম্ভ। তবে এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রক্রিয়া ও নকশা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুলাই আন্দোলনকারী ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
তাদের অভিযোগ, পুরো প্রক্রিয়ায় তারা উপেক্ষিত ছিলেন ও শহীদদের নাম ফলকের নিচের অংশে স্থাপন করা হয়েছে, যা অসম্মানজনক।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে স্মৃতিস্তম্ভটি দৃশ্যমান হওয়ার পর থেকেই অসন্তোষ দেখা দেয়। স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে থাকা শহীদদের নামফলকের ওপর দিয়ে মানুষ চলাচল করছে ও অনেকে না বুঝেই পা রাখছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বগুড়ার সাবেক সদস্যসচিব সাকিব খান বলেন, এই কাজটি খুবই নিম্নমানের হয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভটি এমনভাবে নির্মাণ করা প্রয়োজন যেন এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্ম জুলাই আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারে। এই স্থাপনাকে নতুনভাবে সংস্কার করে প্রতিটি জেলায় পুনঃস্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মূল প্রশ্ন শহীদদের নাম কেন নিচে রাখা হলো? এখানে অনেকেই পা রাখছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
জুলাই যোদ্ধা বিপ্লব মিয়া জানান, বিগত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বগুড়ায় যে ১৬ জন শহীদ হয়েছেন, তাদের নাম এই স্মৃতিসৌধে রাখা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের কাজে ঘাটতি রয়েছে। শহীদদের নাম স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে রাখা সত্যি লজ্জাজনক। এমন জায়গায় করা হয়েছে যেখানে অনেকেই চলাফেরা করে, ফলে না বুঝেই শহীদদের নামের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। নামগুলো যদি স্মৃতিস্তম্ভের ওপরে বা মাঝ বরাবর দেওয়া হতো, তাহলে ভালো হতো। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দ্রুত এটি সংস্কারের অনুরোধ করছি।
আরেক জুলাই যোদ্ধা জাকিরুল ইসলাম বলেন, অনেক প্রতীক্ষিত জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে, এতে আমরা খুশি। তবে সাতমাথায় বীরশ্রেষ্ঠ স্মৃতিস্তম্ভেও যেমন মাদকসেবীদের আনাগোনা দেখা যায়, এখানেও একই পরিস্থিতি লক্ষ্য করছি। স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের পর থেকেই শহীদদের নামের ওপর পা রেখে অনেকে ছবি তুলছেন। প্রশাসনের কাছে দাবি, দ্রুত এই স্মৃতিস্তম্ভটি সংরক্ষণ করা হোক ও রেলিং দেওয়া হোক।
শহীদ রাতুলের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, স্মৃতিস্তম্ভটি শহরের কেন্দ্রস্থলে স্থাপন করায় আমরা স্বাগত জানাই। তবে সংশ্লিষ্টদের স্বীকৃতি ও সম্মানের বিষয়ে আরও অধিক সতর্ক থাকার প্রয়োজন ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, এখন স্মৃতিস্তম্ভ ঘিরে কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে না। কেন্দ্র থেকেই এটি স্থাপন করা হয়েছে ৫ আগস্টে ফুল দেওয়ার জন্য।
জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের নাম নিচে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে আমি এই বিষয়ে বলেছি। এর নকশা করেছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। শহীদদের নাম নিচে দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে আমারও আপত্তি ছিল। আমি বলেছিলাম শহীদদের নাম ওপরে এবং নিচে স্লোগান দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি, নিজেরাই এসব করেছে। শুধু নিচের ঢালাইয়ের অংশটুকু জেলা প্রশাসন করেছে।
এমএন/জেআইএম