মাহমুদা আক্তার
সন্ধ্যা নামতেই মহাখালীর তিতুমীর কলেজ সংলগ্ন শাকিল চত্বরে ভাপা পিঠার সুমিষ্ট গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়া ওঠা গরম পিঠার টানে ভিড় জমায় শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পথচারীরা। তাদের পিঠার স্বাদ পূরণ করছেন বিলকিস বানু। চার বছর ধরে এখানে পিঠার দোকান চালাচ্ছেন তিনি।
প্রতিদিন বিকাল চারটা বাজতেই তিনি সাজিয়ে ফেলেন তার ছোট্ট দোকান। লাকড়ির চুলায় ভাপা পিঠা সিদ্ধ হতে থাকে, আর চিতই পিঠা ধোঁয়া ছড়ায় তাওয়ার ওপর। একপাশে সাজানো থাকে গুড়, নারকেল, খেজুরের রসের শিরা। ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকে, কেউ আসেন এক কাপ চায়ের সঙ্গে গরম গরম পিঠা খেতে, কেউবা ব্যাগ ভরে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যদের জন্য।
এখানে আসার আগে বিলকিস বানু গুলশানে পিঠার দোকান চালাতেন। তিনি জানান, এক আত্মীয়র পরামর্শে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে তিনি মহাখালীতে চলে আসেন, কারণ এখানে ক্রেতার সংখ্যা বেশি। শীতের সন্ধ্যায় কিংবা ব্যস্ত দিনের অবসরে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, কিংবা স্থানীয়রা-সবাই একটুখানি উষ্ণতার জন্য তার দোকানে আসে।
তবে বিলকিস বানুর জীবনযাত্রা একদিনে এমন হয়নি। তিনি বলেন, ‘একসময় সংসার চালানোর জন্য অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়েছে। তবুও নিজের কিছু করার স্বপ্ন ছিল। পরিশ্রমের ফলস্বরূপ এখন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হতে পেরেছি। আমার দোকান এখন শুধু উপার্জনের মাধ্যম নয়, আত্মসম্মানের জায়গাও।’
বিলকিস বানুর স্বামী বেঁচে না থাকলেও ব্যবসার সার্বক্ষণিক তদারকিতে থাকেন তার ছেলের বউ স্বপ্না বেগম। স্বপ্না বেগম বলেন, সকাল থেকে সংসা রের কাজ সামলে বিকেলে দোকানে আসি শাশুড়ির পাশে দাঁড়াতে। শীতের মৌসুমে কাজের চাপ বেশি থাকে, তাই শ্বাশুড়ির পাশে থাকি। এরপর শাশুড়ি-বউ মিলে গুছিয়ে ফেলি পিঠার দোকান, আর ক্রেতারাও তৃপ্তির হাসি নিয়ে ফিরে যান।
বিলকিস বানুর দোকানে নিয়মিত পিঠা খেতে আসেন মো. হৃদয় । আজও ব্যতিক্রম নয়। তিনি বলেন, ‘শীতের সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা খেতে দারুণ লাগে। বন্ধুদের সঙ্গে এখানে বসে গল্প করি, ক্লাসের চাপ ভুলে কিছু সময় ভালো কাটাই। বিলকিস চাচির হাতের পিঠায় যেন মায়ের হাতের স্বাদ পাই।’
বিকাল চারটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চলে এই পিঠার আয়োজন। বিলকিস বানু বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ পিস ভাপা পিঠা বিক্রি করি, চিতই বিক্রি হয় ১৫০ পিসের মতো। প্রতিদিন গড়ে লাভ থাকে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। তবে কিছুদিন বেশি, কিছুদিন কম হয়-ব্যবসায় এই ওঠানামা তো থাকবেই। তবুও আমি খুশি, কারণ নিজের পরিশ্রমেই সংসার চলছে।’
বিলকিস বানু মনে করেন, ‘কেউ বসে থাকলে জীবনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য, আত্মসম্মান বজায় রাখার জন্য কিছু না কিছু করা উচিত। চাকরির পেছনে ছুটে না থেকে ব্যবসার দিকে ঝোঁকার পরামর্শ দেন তিনি। তার ভাষায়, কাজ করলে আল্লাহ বরকত দেন। চেষ্টা করলে সব হয়।’
- আরও পড়ুন
সবচেয়ে দুর্গন্ধময় যেসব জিনিস স্থান পেয়েছে গিনেস রেকর্ডে
৮৭ সন্তানের বাবা এক কৃষক, গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী
কেএসকে/জেআইএম