শাহানাজ শিউলীর পত্রকাব্য: হেমন্তের চিঠি

মমতাময়ী হেমন্ত, ভোরের শিউলি-ঝরা সুবাস আর শিশিরে ভেজা সজল চোখে আনন্দাশ্রু নিয়ে তোমায় লিখতে বসলাম। কারণ, তুমি ছিলে আমার এক অনন্ত অপেক্ষা। আজ সেই অপেক্ষার অবসান হলো। তাই মনের বাতায়ন খুলে তোমায় লিখতে খুব ইচ্ছে করছে। আমি লিখছি এমন এক সময়ে, যখন সময়ের পালা বদলে নীরব, অঘোষিত এক যুদ্ধ চলছে—ক্ষুধার্ত শিশুর উদাস দৃষ্টি, মনুষ্যত্ব ও বিবেকের পচনের দুর্গন্ধে দূষিত বাতাস, আর এক আসন্ন ঘোর তমসায় কাতর পৃথিবী। এই দুঃসময়ের মাঝেও তুমি হৃদয়ে উঁকি দিয়ে এলে। তাই তোমাকে স্বচক্ষে গভীরভাবে দেখার লোভটা আর সামলাতে পারলাম না। চলে এলাম মমতামাখা মাটির স্পর্শে—আমার সবুজ-শ্যামল গাঁয়ে। প্রাতঃভ্রমণে যখন তুমি আমার কুয়াশার চাদরে জড়িয়ে নিলে, আর আমার আলতাপরা দুটি পা শিশিরে ভিজিয়ে দিলে, তখন এক অন্যরকম শিহরণে কেঁপে উঠেছিল মন। সত্যি, তোমার কাশফুল আর কচি ধানের সবুজ পাতায় দোলানো হালকা বাতাসের মোলায়েম মমতার স্পর্শ আমাকে এক মুহূর্তে নিয়ে গিয়েছিল সবুজ দিগন্তে। তারার মতো ফুটে থাকা শাপলারা তখন খিলখিল করে হেসেছিল। তুমি এত মমতাময়ী, এত স্নিগ্ধ, এত আত্মদানকারী—ভাবতেই মনটা উদার হয়ে যায়। চাষির চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি দে

শাহানাজ শিউলীর পত্রকাব্য: হেমন্তের চিঠি

মমতাময়ী হেমন্ত,
ভোরের শিউলি-ঝরা সুবাস আর শিশিরে ভেজা সজল চোখে আনন্দাশ্রু নিয়ে তোমায় লিখতে বসলাম। কারণ, তুমি ছিলে আমার এক অনন্ত অপেক্ষা। আজ সেই অপেক্ষার অবসান হলো। তাই মনের বাতায়ন খুলে তোমায় লিখতে খুব ইচ্ছে করছে। আমি লিখছি এমন এক সময়ে, যখন সময়ের পালা বদলে নীরব, অঘোষিত এক যুদ্ধ চলছে—ক্ষুধার্ত শিশুর উদাস দৃষ্টি, মনুষ্যত্ব ও বিবেকের পচনের দুর্গন্ধে দূষিত বাতাস, আর এক আসন্ন ঘোর তমসায় কাতর পৃথিবী। এই দুঃসময়ের মাঝেও তুমি হৃদয়ে উঁকি দিয়ে এলে। তাই তোমাকে স্বচক্ষে গভীরভাবে দেখার লোভটা আর সামলাতে পারলাম না। চলে এলাম মমতামাখা মাটির স্পর্শে—আমার সবুজ-শ্যামল গাঁয়ে।

প্রাতঃভ্রমণে যখন তুমি আমার কুয়াশার চাদরে জড়িয়ে নিলে, আর আমার আলতাপরা দুটি পা শিশিরে ভিজিয়ে দিলে, তখন এক অন্যরকম শিহরণে কেঁপে উঠেছিল মন। সত্যি, তোমার কাশফুল আর কচি ধানের সবুজ পাতায় দোলানো হালকা বাতাসের মোলায়েম মমতার স্পর্শ আমাকে এক মুহূর্তে নিয়ে গিয়েছিল সবুজ দিগন্তে। তারার মতো ফুটে থাকা শাপলারা তখন খিলখিল করে হেসেছিল।

তুমি এত মমতাময়ী, এত স্নিগ্ধ, এত আত্মদানকারী—ভাবতেই মনটা উদার হয়ে যায়। চাষির চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে আমি মুগ্ধ হই। ধানের শীষে নুয়ে থাকা সোনালি আশার দোলায় আমি আপ্লুত হয়ে পড়ি। সত্যি বলতে কি, তুমি আমার হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক অন্যরকম অনুভূতি—যা ভাষায় সম্পূর্ণ প্রকাশ করা অসম্ভব।

আরও পড়ুন
উম্মে মাহবুবা ইমার দুটি কবিতা 
নভেম্বর রেইন আসলে কী? 

তুমি বুকের পাঁজরে শিউলির গালিচা বিছিয়ে দিয়ে সরিষার হলুদ পাঁপড়িতে বরণ করলে আমায়। তাই তোমার মায়াবী রূপের প্রেমে পড়েছিলাম। হৃদয়ের গভীর মমতা দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলে। খেজুরের মিষ্টি রস আর নলেন গুড়ের পায়েসের তৃপ্ত স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। হালকা ঠান্ডা নরম বাতাসের সঙ্গে মিষ্টি রোদ—এক অমৃত স্বাদ, যা সারাজীবন মনে থাকবে।

তুমি জেনে অবাক হবে, তোমার এই স্পর্শটুকু পাওয়ার জন্য আমি কত রাত-দিন অপেক্ষা করেছি, কত দিন গুনেছি। তুমি আমার কাছে কুয়াশার আলতো ঘোমটায় ঢাকা এক মায়াবী সকাল। আমার প্রতিটি সুখকর মুহূর্ত তোমাকে নিয়েই রচিত। তোমার মায়াবী চাহনি গভীর, তোমার উষ্ণ ছোঁয়া হাসির মতো লেগে থাকে আমার হৃদয়ে। দূরের মাঠে যখন বাতাস দোলে, মনে হয়—তোমার কণ্ঠে কেউ আমার নাম ধরে ডাকছে—মৃদু, কোমল, অথচ অদ্ভুত মায়ায় ভরা।

প্রিয়, সারাদিন তোমার মিষ্টি রোদের আবেশ আমার সারা শরীরে যেমন জড়িয়ে থাকে, তেমনই বিকেলগুলো তোমাকে ছাড়া ভাবতে পারি না। ধানের সোনালি সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, আমি তোমার হাত ধরে পৃথিবীর সব রোদ, সব বাতাস, সব ভালোবাসা ছুঁয়েছি। সন্ধ্যার কুয়াশা যখন নামে, গোধূলি লগ্নে আমি চোখ বুজে তোমার মুখখানা বুকের সঙ্গে জড়িয়ে রাখি—শান্ত, মায়াময়, তোমার আলোয় গলে যাওয়া এক রূপকথার মতো।

তুমি—নীরব, মুগ্ধ অথচ হৃদয়ভরা উষ্ণতা নিয়ে আসা এক মায়াবিনী। আমি তোমাকে ভালোবাসি ঠিক সেই আলোর মতো—যা নরম, অন্তহীন, চিরন্তন।

ইতি,
তোমারই মিষ্টি রোদের মায়াবী প্রিয়া।

এসইউ/

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow