শিক্ষক ছাত্রের অনুপাতকে যৌক্তিক সীমায় আনতে হবে : সলিমুল্লাহ খান

1 month ago 22

চিন্তাবিদ, লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, শিক্ষক ছাত্রের অনুপাতকে একটা যৌক্তিক সীমায় নিয়ে আসতে হবে। যথেষ্ট শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা সর্বজনীন করতে হবে আর এজন্য এটা জাতীয়করণ করতে হবে। শিক্ষায় পরিবর্তন আনা যাবে না যদি অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনা না যায়।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী শিক্ষা ভাবনা নিয়ে ‘কেমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই’ শিরোনামে আয়োজিত এক সংলাপে এ মন্তব্য করেন তিনি।

ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, ড. সামিনা লুৎফা নিত্রা, রাখাল রাহা, অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ, শামীম জামান প্রমুখ।

এসময় অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, বর্তমানে শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত নয়, রাষ্ট্র শিক্ষার অধিকার পূরণ করতে বাধ্য নয়। কতটুকু শিক্ষা হলে একজন মানুষ কর্মজীবনের জন্য যোগ্য হবে। কমপক্ষে ১২ বছর স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক শিক্ষা হিসেবে পৃথিবীর সব দেশেই স্বীকৃত। এটুকু শিক্ষা যদি অবৈতনিক না হয় তাহলে এটাকে অধিকার হিসেবে বলা যাবে না। শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল চাকরি হওয়া ঠিক না। জাতিসংঘ ঘোষিত ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের নীতি অনুসারে পেশাগত এবং উচ্চশিক্ষায় মেধার প্রশ্ন তোলা যাবে না, শিক্ষার সুযোগ সবার থাকতে হবে। বলা হয়েছে, জতীয় আয়ের সর্বোচ্চ ৬ ভাগ খরচ করতে হবে। শিক্ষক-ছাত্রের অনুপাত একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। শিক্ষক ছাত্রের অনুপাতকে একটা যৌক্তিক সীমায় নিয়ে আসতে হবে। যথেষ্ট শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা সর্বজনীন হতে হবে। এজন্য এটা জাতীয়করণ করতে হবে।  শিক্ষায় পরিবর্তন আনা যাবে না যদি অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনা না যায়।

সংলাপে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, পাঠ্য বইয়ে কী করে ক্ষমতাসীনদের রাজনীতি ঢুকানো যায় এটার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের শিক্ষার যে প্রধান ধারা আছে এগুলোর কোনো মিলনস্থল নাই। ইংরেজি মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ধনীদের স্বার্থেই হয়েছে। বাংলা ভাষা অত্যন্ত রিচ। আমি আর কোনো ভাষা এমন দেখি না। গত তিপ্পান্ন বছরে বাংলাকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি নাই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমান উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোতে শিক্ষক সাপ্লাই দেওয়ার আয়োজন নাই। যে শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে চার জায়গায় পড়ায় সে কী শখের বসে পড়ায়? শিক্ষকতার পেশাকে বাংলাদেশে আকর্ষণীয় করা যায়নি। শিক্ষার উন্নয়ন না ঘটিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটানো যাবে না। উন্নয়ন করতে হলে উন্নত মানুষ গড়ে তুলতে হবে। একজন সচিবের পাঁচকের বেতন পনের হাজার, অথচ যে মানুষটি আপনার সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে তার টিফিন খরচ সাড়ে ছয় টাকার চেয়ে বড় দুর্ভাগের কী হতে পারে? নতুন সরকারের কাছে আমি দেখতে চাই, আসন্ন বাজেটে একটা ভালো বরাদ্দ থাকবে। আমি দেখতে চাই, সরকার একটা কার্যকর শিক্ষা কমিশন গড়ে তুলবে।

অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, শিশু মন খুবই জটিল জিনিস। শিক্ষাক্রম বারবার পরিবর্তন করলে ভালো ফল বয়ে আনবে না। আগস্ট থেকে আমি রাখাল রাহা, কামরুল হাসান মামুন স্যার আগস্ট থেকে পাঠ্যবই নিয়ে কাজ করা শুরু করি। এর ফলাফল আপনারা জানেন। ২০১২-এর কারিকুলামের কোন প্রাকটিক্যাল ছিল না, ২০২১ এরটা পুরোই প্রাকটিক্যাল। দুইটাকে কোওর্ডিনেট করে ভালো কারিকুলাম করা সম্ভব। শিক্ষা একটা জটিল কাজ। এটাকে একটা চাকুরি হিসেবে দেখলে চলে না।

লেখক ও গবেষক রাখাল রাহা বলেন, আমি কোন স্বপ্নের শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশে চাই না। স্বপ্নের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চিত্র বাংলাদেশে বিরাজ করছে না। মৃত শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচানোর চেষ্টা করাটা আশু কর্তব্য।

অধ্যাপক নাভিন মুরশিদ বলেন, ফ্যাসিজম একটা ইনস্টিটিউটশন। শিক্ষকদের যদি আমরা ভয় পাই তাহলে সেটা মননের ফ্যাসিজম। আমরা এমন একটা শিক্ষা ব্যবস্থা চাই যেখানে শিক্ষার্থীরা ক্রিটিক্যালি চিন্তা করতে পারবে। যেখানে আমরা আমরা হয়ে উঠতে পারি।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম জামান বলেন, অভ্যুত্থানের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিপরীত ক্ষমতার কেন্দ্র গড়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে ব্যর্থ হয়েছে শিক্ষাখাতে। অথচ অভ্যুত্থান পরবর্তীতে এখনো একটা শিক্ষা সংস্কার কমিশন গড়ে ওঠেনি। অবিলম্বে একটা শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা দরকার।

Read Entire Article