শিক্ষা ছুটিতে গিয়ে লাপাত্তা পাবিপ্রবির ১২ শিক্ষক

1 month ago 18

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) শুরু থেকে এখন পর্যন্ত উচ্চ শিক্ষার জন্য ছুটি নিয়ে কর্মস্থলে ফেরেননি ১২ জন শিক্ষক। শিক্ষা ছুটি নিয়ে এদের কেউ নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর চাকরি ছেড়েছেন, অনেকে আবার ছুটি শেষ হওয়ার আগেই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এই ১২ জন শিক্ষকের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রায় ৫০ লাখ টাকা পাওনা।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ছুটির নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের ২ বছর পর বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ছুটির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তখন একজন শিক্ষককে ১ বছর করে ছুটি দেওয়া হয়। একজন শিক্ষক বিদেশে মাস্টার্স বা এমফিল করার জন্য সবেতনে সর্বোচ্চ ৩বার ছুটি নিতে পারবেন। অন্যদিকে পিএচডি করার জন্য একজন শিক্ষক ১ বছর করে ৫ বছর সবেতনে ছুটি নিতে পারবেন। এরপর কোনো শিক্ষক চাইলে আরও ২ বার ২ বছরের জন্য ছুটি নিতে পারবেন। তবে ওই ২ বছরে তিনি কোনো বেতন পাবেন না। ৭ বছর শেষ হলে তাকে কর্মস্থলে ফিরে আসতে হবে। অন্যথায় তার চাকরি চলে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সংস্থাপন শাখা এবং স্কলারশিপ শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা ১৯২ জন। এর মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে বিদেশে আছেন ৫৫ জন, দেশে আছেন ২ জন। এই ৫৭ জন শিক্ষকের মধ্যে এরইমধ্যে ৩ জন ৫ বছরের ছুটি শেষ করেছেন, যাদের বেতন ভাতা বর্তমানে বন্ধ আছে। এর মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইসিই) বিভাগের একজন, পরিসংখ্যান বিভাগের একজন এবং ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষক রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা এরইমধ্যে ৫ বছরের ছুটি শেষ করেছেন তাদের অধিকাংশের দেশে ফেরার সম্ভবনা কম।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে এই পর্যন্ত শিক্ষা ছুটি নিয়ে ১২ জন শিক্ষক কর্মস্থলে ফেরননি। এদের মধ্যে অনেকে ৭ বছরের ছুটি শেষ করেছেন, অনেকে শিক্ষা ছুটি শেষ হওয়ার আগেই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এদের মধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের ২ জন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ৩ জন, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইসিই) বিভাগের একজন, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) বিভাগের একজন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের একজন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩ জন এবং ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষক রয়েছেন। ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬ জন আমেরিকা, ৫ জন অস্ট্রেলিয়া এবং ১ জন জাপানে উচ্চ শিক্ষার জন্য গিয়েছেন। যার মধ্যে ১০ জন পিএইচডি, ১ জন এম.এসসি (মাস্টার্স) এবং ১ জন পোস্ট ডক. করতে ছুটি নিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষকদের বিদেশে পাড়িতে শিক্ষক শূন্যতায় তাদের একাডেমিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে।

অন্যদিকে শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষা ছুটি নিয়ে কর্মস্থলে যোগদান না করা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সাবেক সদস্য ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গালিব হাসান বলেন, ‘শিক্ষা ছুটি নিয়ে যারা একেবারে চলে যাচ্ছেন সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশাল ক্ষতি। যাদেরকে ছুটি দেওয়া হচ্ছে তারা যেন আরও বেশি অভিজ্ঞ হয়ে কর্মস্থলে আসেন সেই প্রত্যাশা থাকলেও এখন হিতে বিপরীত হচ্ছে। এখান থেকে ছুটি নিয়ে আর ফেরেন না। ফলে ওই পদে পুনরায় নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, যারা শিক্ষা ছুটি নিয়ে চলে যান তারা ফেরত না আসলে আমাদের কিছু করার থাকে না। শিক্ষকদের নির্ধারিত ছুটি শেষ হলে আমরা তাদেরকে ফেরত আসার জন্য চিঠি দিয়ে থাকি। অনেকে ফিরে আসেন অনেকে ফিরে আসেন না। যারা ফিরে আসেন না তাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো পাওনা থাকলে সেটা ফেরত দিয়ে চাকরি থেকে ইস্তফা নিতে হয়।

এফএ/জিকেএস

Read Entire Article