• শিক্ষার্থী কমছে ঢাকাসহ ১০ সিটির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
• সবচেয়ে করুণ অবস্থা বরিশাল সিটির ১০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
• শিক্ষার্থী না থাকলেও স্কুলে দৃষ্টিনন্দন ভবনের ‘বায়না’
• মানহীন শিক্ষা ও শিক্ষকদের অমনোযোগিতাই দায়ী
ঢাকার নবাবপুরের মদনপাল লেনে অবস্থিত বঙ্গবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৫৩ বছর বয়সী বিদ্যালয়টির আশপাশে ব্যাপক ঘনবসতি। সেই হিসেবে শ্রেণিকক্ষগুলো শিক্ষার্থীতে ঠাসা থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাত্র ১৭ জন শিক্ষার্থী এ বিদ্যালয়ে। শ্রেণিপ্রতি শিক্ষার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে—প্রথম শ্রেণিতে মাত্র একজন, দ্বিতীয়তে তিনজন, তৃতীয়তে দুজন, চতুর্থতে ছয়জন ও পঞ্চমে পাঁচজন। অথচ স্কুলটিতে কর্মরত আটজন শিক্ষক-কর্মচারী।
শিক্ষার্থীশূন্য হওয়ার পথে থাকা এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে নারাজ। তাদের ভাষ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর স্কুলটির বিষয়ে অবগত। এখানে শিক্ষকদের কিছুই করার নেই। যে শিক্ষকদের এখানে পাঠানো হয়, তারা দ্রুত স্কুল ছাড়তে তদবির করেন। এখন যারা আছেন, তারাও বঙ্গবাসী স্কুল ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চান।
শুধু বঙ্গবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ সিটি করপোরেশন এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একই দশা। শিক্ষকে ঠাসা থাকলেও নেই শিক্ষার্থী। সন্তানকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির চেয়ে অভিভাবকরা ঝুঁকছেন কিন্ডারগার্টেনে। বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে সন্তানকে পড়াতে বেশি আগ্রহী তারা। অনেকে আবার নুরানি ও হাফেজি মাদরাসায় পড়তে পাঠাচ্ছেন সন্তানকে।
আরও পড়ুন
- প্রাথমিক শিক্ষায় শহর-গ্রামের বৈষম্য দূরীকরণে নানা পদক্ষেপ
- থাকছে না কিন্ডারগার্টেন, চলবে ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে
- জ্ঞানসুধার শিশুস্বর্গ কুতুবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
উপবৃত্তি, মিড ডে মিল, বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থাসহ নানান ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েও শিক্ষার্থী ধরে রাখতে পারছে না প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। তবে শিক্ষক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না’। অভিভাবকদের অবশ্য সোজাসাপ্টা জবাব, ‘প্রাইমারি স্কুলে পড়ালেখা হয় না। স্যার-ম্যাডামরা গল্প-গুজব করে চলে যায়। ক্লাস নেয় না।’
শিক্ষার্থী সংকটে শহুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো
সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী, শিক্ষকের সংখ্যা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপাত জানতে গত এপ্রিল-মে মাসে অভ্যন্তরীণ জরিপ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সম্প্রতি সেই জরিপের প্রতিবেদন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে অধিদপ্তর। তাতে দেশের ১০টি সিটি করপোরেশন তথা মহানগর এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংকটের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। সিটি করপোরেশনগুলো হলো—ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, সিলেট, গাজীপুর ও রাজশাহী।
শিক্ষার্থী কমতে কমতে শূন্যের কোটায় নেমেছে। ছাত্র-ছাত্রী না থাকলেও শিক্ষকের কোনো সংকট নেই। অনেক স্কুলে পদের চেয়ে বেশি শিক্ষক। কিছু স্কুলে প্রেষণে শিক্ষক পদায়নও করা হয়েছে। - জরিপ
জরিপে দেখা যায়, শহুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো তীব্র শিক্ষার্থী সংকটে ধুঁকছে। শিক্ষার্থী কমতে কমতে শূন্যের কোটায় নেমেছে। ছাত্র-ছাত্রী না থাকলেও শিক্ষকের কোনো সংকট নেই। অনেক স্কুলে পদের চেয়ে বেশি শিক্ষক কর্মরত। কিছু স্কুলে প্রেষণে শিক্ষক পদায়নও করা হয়েছে। জরিপ করা অধিকাংশ স্কুলেই তিনজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক কর্মরত। অর্থাৎ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩।
জরিপের তথ্যমতে, ঢাকা সিটি করপোরেশনে ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঢাকায় বঙ্গবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংকট চরমে। তালিকায় সবার ওপর মুসলিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুই শিফটে চলে এ বিদ্যালয়। সবমিলিয়ে স্কুলটির শিক্ষার্থী সংখ্যা ২১ জন। অথচ এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ আছে পাঁচজন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩।
আরও পড়ুন
- পটুয়াখালীতে শিশুকল্যাণ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
- শিক্ষার মানোন্নয়ন হলে প্রাথমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে
- জেলা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেয়ার প্রস্তাব
স্কুলটির প্রাক-প্রাথমিকে রয়েছে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি পাঁচজন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চারজন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতেও শিক্ষার্থী সংখ্যা চারজন করে। পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী মাত্র দুজন।
বরিশাল সিটির প্রাথমিকের অবস্থা সবচেয়ে করুণ
জরিপে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই চরম শিক্ষার্থী সংকট। বরিশাল সিটির হরিজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ১৩ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে দুজন, দ্বিতীয়তে দুজন, তৃতীয়তে মাত্র একজন, চতুর্থতে পাঁচজন ও পঞ্চমে মাত্র তিনজন।
বরিশাল সিটির চরজাগুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও আরও খারাপ। বিদ্যালয়টিতে মাত্র আটজন শিক্ষার্থী রয়েছে। শ্রেণিপ্রতি শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রথমে একজন, দ্বিতীয়তে তিনজন, চতুর্থ ও পঞ্চমে মাত্র একজন করে। সেখানে আটজন শিক্ষার্থীকে পড়ানোর জন্য কর্মরত চারজন শিক্ষক। অর্থাৎ প্রতি দুজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক।
বরিশাল সিটির বাকি আটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও শিক্ষার্থী সংকটে ধুঁকছে। অধিকাংশ স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পঞ্চাশের নিচে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২ থেকে ১:৭-এর মধ্যে।
বাকি ৮ সিটির প্রাথমিকেও শিক্ষার্থী সংকট
সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। এসব স্কুলে কর্মরত শিক্ষক ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৪ জন। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:২৮। সেই হিসাবে সিটি করপোরেশনে শিক্ষক বেশি, শিক্ষার্থী কম।
আরও পড়ুন
- প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কোটিপতি!
- গাইবান্ধায় ৬৬ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার
- জাতীয়করণের সুপারিশে নামসর্বস্ব স্কুল
যেমন—নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অধীন ৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে অন্তত ১০টি সরকারি প্রাথমিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৫ থেকে ১:৯-এর মধ্যে। গাজীপুর, চট্টগ্রাম, খুলনার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩ থেকে ১:৭ এবং কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও রাজশাহীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৬ থেকে ১:৯-এর মধ্যে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার পরিবেশ, মানহীনতা, পুরোনো পদ্ধতি আঁকড়ে থাকায় অভিভাবকরা সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না। ফলে দিন দিন শিক্ষার্থী কমছে। সরকারি চাকরি হওয়া শিক্ষকরা মাস গেলেই বেতন তুলছেন। কোনো জবাবদিহিতা নেই।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন গ্রামের অভিভাবকরাও সন্তানকে পড়াতে চাইছেন না। যারা একটু সচেতন তারা সন্তানকে কিন্ডারগার্টেন অথবা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার্থী কমতেই থাকবে। - প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
বরিশালের একটি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন গ্রামের অভিভাবকরাও সন্তানকে পড়াতে চাইছেন না। যারা একটু সচেতন তারা সন্তানকে কিন্ডারগার্টেন অথবা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াচ্ছেন। এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সন্তানদের প্রাথমিকে পড়তে দিচ্ছেন না। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার্থী কমতেই থাকবে।’
আরও পড়ুন
- যে স্কুলে খাওয়া-পড়া একসঙ্গে
- ময়লার গন্ধে নাক চেপে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা
- অবশেষে বন্ধ হলো খুলনার প্রাথমিক বিদ্যালয়
শিক্ষার্থী না থাকলেও দৃষ্টিনন্দন ভবনের ‘বায়না’
সিটি করপোরেশন এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যত শিক্ষার্থী, সে অনুযায়ী যথেষ্ট অবকাঠামো রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্কুলের শ্রেণিকক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। সামনের কয়েকটি বেঞ্চে শিক্ষার্থী দেখা যায়। অনেক স্কুলে সামনের কয়েকটি বেঞ্চ পরিষ্কার রেখে পেছনের বেঞ্চগুলো উল্টে রাখা হয়।
অথচ শিক্ষার্থী সংকট দূর করতে পদক্ষেপ না নিয়ে দৃষ্টিনন্দন ভবনের বায়না করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত জুলাইয়ে দেশের ১০টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকা ৫৩৪টি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।
সিটি করপোরেশন এলাকায় দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অবকাঠামো ভালো না থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চায় না। অভিভাবকরাও সন্তানদের ভাঙাচোরা স্কুলে পাঠাতে চান না। সার্বিক দিক বিবেচনায় সিটি করপোরেশন এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে দৃষ্টিনন্দন ভবন করা হবে। - প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা
তবে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়মুখী করতেই দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এলাকায় দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অবকাঠামো ভালো না থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চায় না। অভিভাবকরাও সন্তানদের ভাঙাচোরা স্কুল; বিশেষ করে যেগুলোতে এখনো টিনশেড বা পলেস্তারা খসে পড়ছে; সেসব স্কুলে পাঠাতে চান না। সার্বিক দিক বিবেচনায় সিটি করপোরেশন এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে দৃষ্টিনন্দন ভবন করা হবে। ঢাকা সিটিতে আমরা বেশ কিছু ভবন করেছি। বাকিগুলো অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।’
প্রাথমিক শিক্ষায় যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে, তা কাজে আসছে না। ‘দৃষ্টিনন্দন স্কুল ভবন নির্মাণ’ নামের এ প্রকল্পের মধ্যে বৈষম্য লুকিয়ে আছে। মহানগর বা শহর এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থী কমলেও শিক্ষকদের পদায়নে সুপারিশের কমতি নেই। তারা শহরে আসতে চান, কারণ কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর জন্য। - ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ
‘শিক্ষার্থী সংকটের কারণ মানহীন শিক্ষা’
শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব না হলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ক্রমে শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে, তা কাজে আসছে না। ‘দৃষ্টিনন্দন স্কুল ভবন নির্মাণ’ নামের এ প্রকল্পের মধ্যে বৈষম্য লুকিয়ে আছে। মহানগর বা শহর এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থী কমলেও শিক্ষকদের পদায়নে সুপারিশের কমতি নেই। তারা শহরে আসতে চান, কারণ কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর জন্য। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। যে কারণে মহানগর এলাকায় শিক্ষার্থীই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন
- প্রাথমিকে বিস্কুট বিতরণ বন্ধ, ক্লাসে কমছে উপস্থিতি
- মাল্টিমিডিয়ার আওতায় যশোরের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়
- নটর ডেমে ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উপচেপড়া ভিড়
ড. মনজুর আহমদ বলেন, প্রাথমিক অধিদপ্তর ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ান না। তারা পাশের বেসরকারি স্কুলে পড়ান। শিক্ষার মানের বিষয়টি উপলব্ধি করেই তারা এমন পথে হাঁটছেন। তাই শিক্ষার মান বাড়ানো না গেলে কোনোভাবেই দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা করে শিক্ষার্থী ভর্তি ও উপস্থিতির হার বাড়ানো সম্ভব নয়।
শিক্ষার ভিত্তিই হলো প্রাথমিকস্তর। এটি নড়বড়ে হলে আমরা আর এগোতে পারবো না। প্রাথমিক শেষ করে কেউ ন্যূনতম কোনো কাজে যোগ দিতে পারছে না। আবার যারা মাধ্যমিকে যাচ্ছে, সেখানে গিয়ে তারা ফেল করছে; ঝরে যাচ্ছে। - তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষার ভিত্তিই হলো প্রাথমিক স্তর। এটি নড়বড়ে হলে আমরা আর এগোতে পারবো না। প্রাথমিক শেষ করে কেউ ন্যূনতম কোনো কাজে যোগ দিতে পারছে না। আবার যারা মাধ্যমিকে যাচ্ছে, সেখানে গিয়ে তারা ফেল করছে; ঝরে যাচ্ছে। তার মানে শিক্ষার মানটা মোটেও ভালো নয়।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগ উপজেলাভিত্তিক। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব, আর্থিক শক্তির কারণে অনেকেই পদ না থাকার পরও মহানগর এলাকায় পোস্টিং নিচ্ছেন। তারা এসেই কোচিং বাণিজ্যে জড়াচ্ছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
এএএইচ/এমআরএম/এমএফএ/এমএস