ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা এখন তুঙ্গে। প্রার্থীরা বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে রাজনৈতিক ও স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে। ভিপি-জিএসের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ আন্তর্জাতিক সম্পাদক। এ পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে নেমেছেন মুস্তাকিম মাহমুদ রাহীম।
নির্বাচন নিয়ে তার চিন্তা-ভাবনা, পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেমনভাবে তুলে ধরতে চান—সেসব বিষয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক হাসান আলী।
জাগো নিউজ: নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আপনি ইশতেহার প্রকাশ করেছেন ‘নতুন বাংলাদেশের ডাকসু ইশতেহার, বিশ্ব হোক ঢাবির সবার’ স্লোগান নিয়ে। এই স্লোগান বেছে নিলেন কেন?
মুস্তাকিম: আমি সব সময়ই ভেবেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে কেন? আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে প্রতিযোগিতা করতে পারে। আমার স্লোগানটা আসলে একটা দৃষ্টিভঙ্গি—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে এমন এক প্রতিষ্ঠান, যেখানে পড়াশোনা করলে যে কোনো দেশে সহজেই ক্রেডিট ট্রান্সফার করা যাবে, মাস্টার্স বা পিএইচডির জন্য কোর্স ম্যাচ হবে এবং আমাদের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাঁড়াতে পারবে।
জাগো নিউজ: আপনার ইশতেহারে ১২ দফা রাখা হয়েছে। সেগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কীভাবে উপকৃত হবে বলে মনে করেন?
মুস্তাকিম: আমি প্রতিটি দফাই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে করেছি। প্রথমেই বলি কারিকুলাম নিয়ে—আমরা চাই উন্নত দেশের মতো আন্তর্জাতিক মানের কারিকুলাম চালু হোক। এতে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে গেলে সমস্যায় পড়বে না। Erasmus Mundus প্রোগ্রামে ঢাবিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্যও কাজ করবো। এখনো দেশের কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ সুযোগ পাচ্ছে, অথচ ঢাবির মতো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত। এটা পরিবর্তন করা জরুরি।
Erasmus Mundus প্রোগ্রামে ঢাবিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্যও কাজ করবো। এখনো দেশের কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ সুযোগ পাচ্ছে, অথচ ঢাবির মতো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত। এটা পরিবর্তন করা জরুরি
আরও পড়ুন
- নারী শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতার বিষয়ে সোচ্চার থাকবো
- প্রথম বর্ষ থেকেই বৈধ সিটের বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবো
- আমরা কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবো: আল সাদী ভূঁইয়া
জাগো নিউজ: বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিয়ে আপনার পরিকল্পনাটা অনেক শিক্ষার্থীর কাছে আকর্ষণীয় হবে। একটু বিস্তারিত বলবেন?
মুস্তাকিম: অবশ্যই। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রেডিট ট্রান্সফার বা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম খুব জনপ্রিয়। Erasmus Mundus-এ ঢুকতে পারলে আমাদের অনার্স বা মাস্টার্স শিক্ষার্থীরা এক থেকে চার সেমিস্টার পর্যন্ত ইউরোপে সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। এছাড়া আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তিন শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স প্রোগ্রামে ‘স্টাডি লোন’র ব্যবস্থা করবো। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু এক্সক্লুসিভ স্কলারশিপ আনার চেষ্টা করবো।
জাগো নিউজ: শিক্ষার্থীদের সামনে অনেক সময় তথ্যের অভাব বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ নিয়ে আপনার চিন্তা কী?
মুস্তাকিম: একদম ঠিক বলেছেন। তথ্যের অভাবে অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক শিক্ষামেলার আয়োজন করবো। সেখানে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি আসবেন, সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন, স্কলারশিপ, কোর্স আর সুযোগ নিয়ে তথ্য দেবেন। পাশাপাশি আমি একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবো, যেখানে প্রতিদিন আপডেট থাকবে স্কলারশিপ, সেমিনার, কর্মশালা আর আন্তর্জাতিক সুযোগের খবর।
আমি একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবো, যেখানে প্রতিদিন আপডেট থাকবে স্কলারশিপ, সেমিনার, কর্মশালা আর আন্তর্জাতিক সুযোগের খবর।
জাগো নিউজ: গবেষণা নিয়ে আপনার দফাগুলোতেও অনেক কিছু আছে। সেটা নিয়ে বলুন।
মুস্তাকিম: গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবো। যারা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশ করতে চান, তাদের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করবো। পাশাপাশি ‘ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ ও ফান্ডিং সেল’ গঠন করা হবে। এখানে একটি বিশেষ টিম থাকবে যারা শিক্ষার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করবে—কীভাবে প্রপোজাল লিখতে হয়, কীভাবে আবেদন করতে হয়—এসব গাইড করবে।
জাগো নিউজ: আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও নেটওয়ার্কিংয়ে আপনার প্রতিশ্রুতির বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?
মুস্তাকিম: আমি চাই ঢাবির শিক্ষার্থীরা শুধু ক্লাসেই নয়, বাইরের প্রতিযোগিতায়ও উজ্জ্বল হোক। বিজ্ঞান, গণিত, ভাষা, প্রযুক্তি—সব ধরনের আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে ঢাবির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবো। এর জন্য কোচিং ও সাপোর্ট দেওয়া হবে। আবার আন্তর্জাতিক ইন্টার্নশিপ আর ভলান্টিয়ারশিপের জন্যও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করবো, যাতে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা আর নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে।
জাগো নিউজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে?
মুস্তাকিম: বিদেশি শিক্ষার্থীরা যেন ঢাবিতে এসে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ পায়, সেটাই মূল লক্ষ্য। তাদের জন্য ইন্টিগ্রেশন কার্যক্রম চালু করবো। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ইভেন্টে তাদের অংশগ্রহণ বাড়াবো। একই সঙ্গে বিদেশি দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করবো। এতে আমাদের শিক্ষার্থীদের সুযোগ বাড়বে এবং বিদেশিরাও ঢাবি সম্পর্কে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা নিয়ে যাবে।
জাগো নিউজ: ভোটারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে?
মুস্তাকিম: আমি বলবো—ডাকসু নির্বাচন শুধু একটা ভোট নয়, এটা ঢাবির ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা। আমি চাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের প্রতিযোগিতা করুক, গবেষণায় সাফল্য পাক, আর আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করুক। সেজন্য তারা যেন যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেয়।
এমএইচএ/এএসএ/এমএফএ/এমএস