নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বছরে দুটি মূল্যায়ন নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। একটি বছরের মাঝামাঝি, যার নাম ‘ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন’। আরেকটি বছরের শেষে, যা ‘বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়ন’ নামে পরিচিতি। দুটি মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের পোস্টার প্রেজেন্টেশনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে। এতে যেসব উপকরণ প্রয়োজন হবে, তা কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোট অংকের ফি নেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে আগের নিয়মে পরীক্ষায় যে ফি নেওয়া হতো, তার চেয়ে নতুন নিয়মে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে গত মাসে একটি চিঠির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিখন-শেখানো কার্যক্রম চলমান। এতে ষাণ্মাসিক ও বাৎসরিক নামে দুটি মূল্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সভায় এ মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে সামষ্টিক মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি মৌখিক এবং প্রদর্শনধর্মী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য কাগজ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য উপকরণ সংক্রান্ত ব্যয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হয়।
এতে আরও বলা হয়, আর্থিক ব্যয় সংস্থানের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগের প্রচলিত বিধি অনুসারে ‘মূল্যায়ন ফি’ গ্রহণ করতে কোনো বাধা নেই। আসন্ন ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের জন্য প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মূল্যায়ন ফি গ্রহণ করতে পারবে কি না, তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন। এ সংক্রান্ত পরবর্তী সিদ্ধান্তসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠানোর জন্য জানানো হলো।
এনসিটিবির চিঠিটি সংযুক্ত করে মাউশি ও মাদরাসা অধিদপ্তর থেকে ‘এ নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো’ উল্লেখ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক মাউশির মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এনসিটিবি যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অনুসরণ করতে বলেছি আমরা। কারণ এ সিদ্ধান্তটা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে।’
শিক্ষার্থীদের থেকে প্রতিষ্ঠান কত টাকা ফি নিতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে কি না, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, এটা আমরা এখানো ঠিক করিনি। যদি ঠিক করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে তা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
মাদরাসা অধিদপ্তরের পরিদর্শক (সহকারী অধ্যাপক) মোহম্মদ হোসাইন বলেন, ‘চিঠিতে এনসিটিবি বিস্তারিত সবই বলে দিয়েছে। চিঠির অর্থ এটাই যে শিক্ষার্থীদের থেকে মূল্যায়ন ফি গ্রহণে কোনো বাধা নেই। আমরাও সেই নির্দেশনাটা দিয়েছি।’
পরীক্ষার চেয়ে মূল্যায়ন ফি বেশি
শিক্ষার্থীরা আগের নিয়মে বছরে তিনটি পরীক্ষা দিতো। প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক ও বার্ষিক পরীক্ষা। সেই নিয়মে তিন পরীক্ষা মিলিয়ে যত টাকা ফি গুনতে হতো, তার চেয়ে এখন দুটি মূল্যায়নে ফি দিতে হচ্ছে। বাড়তি ফি নেওয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা।
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে রুবায়েত ইসলাম। তার বাবা রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পড়েছে তার সন্তান। তার আগে ষষ্ঠ শ্রেণিতে আগের নিয়মে পড়ালেখা করেছে। সেসময় পরীক্ষার ফি ছিল ৩৫০ টাকা করে। অর্থাৎ তিন পরীক্ষা মিলিয়ে ফি দিতে হতো ১ হাজার ৫০ টাকা। বর্তমানে শুধু ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের জন্যই ফি গুনতে হচ্ছে ৮০০ টাকা। দুই মূল্যায়নের জন্য ফি দিতে হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ ৫৫০ টাকা খরচ বেড়েছে।
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সরকার বলছে, নতুন শিক্ষাক্রমে নাকি খরচ কমবে। আমরা তো উল্টো দেখছি। খরচ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মূল্যায়ন ফি নিয়ে স্কুল থেকে পোস্টার দেবে হয়তো, তাতে লেখার জন্য, আঁকা-আাঁকির জন্য তো আবার রং পেন্সিলসহ বিভিন্ন নতুন উপকরণ লাগবে। তা কিনতেও অনেক খরচ।’
ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর অভিভাবক মারজান আক্তারও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা সমালোচনা তো আছেই। তার সঙ্গে এই যে খরচটা বেড়ে যাওয়া, এটা আরেক ঝামেলা। আগের শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, খরচ কমানো হবে। এখন বাড়ছে। নতুন মন্ত্রীও বলছেন খরচ কমাবেন। কিন্তু স্কুল তো ফি বাড়াচ্ছে। সরকারের এদিকে নজর দেওয়া উচিত।’
শুধু বেসরকারি স্কুলে নয়, সরকারি স্কুলেও মূল্যায়ন ফি বেশি। গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে যে খরচ, তা মেটাতে স্কুলে তো কোনো ফান্ড নেই।শিক্ষার্থীদের থেকে নিয়ম অনুযায়ী যে ফি নেওয়া হয়, তা দিয়েই খরচ মেটানো হয়। মূল্যায়নের জন্য উপকরণ কিনতে খরচ বাড়লে ফি টাও একটু বেড়ে যাবে।’
তবে এখনো গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের ফি নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
এএএইচ/এসএনআর/জিকেএস