দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকগুলো স্তরে বিভাজিত। শিক্ষা কাঠামোতে থাকা এত উপধারা বৈষম্য বাড়ানোর হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এর কারণ, আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ কাঠামো (রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক) নেই। সিপিডি আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন বক্তারা।
তারা আরও বলেন, আমার সন্তানরা কোথায় পড়ছে, কী পড়ছে, তাদের আয়ের উৎস কী- এসব আমরা জানবো না, সেটি কীভাবে হয়। এমন বাস্তবতায় আমাদের একটি সমন্বিত ফ্রেমওয়ার্ক প্রয়োজন। যেখানে সবাই দায়বদ্ধ থাকবে। সেটি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যম কিংবা কওমি মাদরাসা যেটাই হোক। বিভাজিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টার ইনে ‘রিকমেন্ডেশনস বাই দ্য টাস্কফোর্স অন রিস্ট্র্যাটেজিং দ্য ইকোনমি’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলন হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে শিক্ষা, যুব বেকারত্ব ও যুব উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রাশেদা কে চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. রুমানা হক এবং বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাসরুর। তারা দুজনই টাস্কফোর্সের সদস্য।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষার চাহিদা সর্বস্তরে বিদ্যমান। একজন রিকশাচালকও তার সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে চান। এটি ইতিবাচক। তবে বাস্তবতা হচ্ছে গত ৫৪ বছরে শিক্ষার এই চাহিদা আমরা পূরণ করতে পারিনি। এটি আমাদের ব্যর্থতা। এখন এই ব্যর্থতা নিয়ে বসে থাকবো, নাকি সামনে আগাবো, সে আত্মজিজ্ঞাসা করার সময় হয়েছে।
- আরও পড়ুন
শিক্ষার মানের ভয়াবহ অবনতি, বেড়েছে রমরমা বাণিজ্য: শিক্ষা উপদেষ্টা
ফেসবুকে লিখলেই সমাজ বদলাবে না, কর্মে পরিবর্তন জরুরি
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদিও ছাত্রদের কারণেই এসেছে, তবে শিক্ষা সংক্রান্ত কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই এই সরকার এসেছে। অথচ নানান সংস্কারের আলাপের মধ্যেও শিক্ষা নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে আলাপ-আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়নি। এই অবহেলা ৫৪ বছরে ধরে চলে আসছে।
২০১০ সালের শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে অতিসংবেদনশীল বিভাজিত, শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। ধনীদের জন্য একরকম, মধ্যবিত্তের জন্য আলাদা, গরিবদের জন্য আলাদা। এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা বৈষম্য তো দূর করছেই না, বরং বিভাজিত শিক্ষাব্যবস্থা বৈষম্য আরও বাড়াচ্ছে। এটা নিয়ে এখন প্রশ্ন তোলা উচিত। সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আলাদা না হয়ে বৈষম্যবিরোধী, মানসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে।
বৈষম্যের সূচনাই হয় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে- এমন মন্তব্য করে অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, প্রাথমিক থেকেই বৈষম্যের শুরু, যা পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। এর জন্য মানোন্নয়ন করতে হবে। এই সমস্যা সমাধানে ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে বিকেন্দ্রীকরণ, একীভূত শিক্ষার কথা বলা হয়েছিল। তবে তা জটিল। তাই একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন করা যেতে পারে। এতে লাভ হবে কি না সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সরকার এই সংস্কার করবে সেটাও ভরসা করা যায় না। বিএনপির ৩১ দফার ২৫ নং দফায় শিক্ষা নিয়ে সাধারণ কিছু কথা বলা হয়ছে। এর ওপর ভরসা করা যায় না। নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছেন কিন্তু করতে পরেননি। এর জন্য একটা পরামর্শক কমিটি করে কিছু সুপারিশ দেওয়া যেতে পারে। পরে স্থায়ী শিক্ষা কমিশন করা যেতে পারে।
শিক্ষিত বেকার সবদেশে আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক কিছু সমস্যা আছে। সেখানে নিয়োগ রাজনীতি হয়। এসব জায়গায় কাজ করতে হবে, যোগ করেন অধ্যাপক মনজুর আহমেদ
এসআরএস/কেএসআর