১০০ মিটারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর নিজ দলের সুমাইয়া দেওয়ানের কাছে হারের পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শিরিন আক্তারের ধ্যান-জ্ঞান ছিল ২০০ মিটারে। সামার অ্যাথলেটিকসের তৃতীয় দিন বিকেলে শিরিন-সুমাইয়ার এরকটি দ্বৈরথ দেখতে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ছিল অনেকের উপস্থিতি। তবে দু’দিন আগে দ্রুততম মানবীর মুকুট উদ্ধার করা সুমাইয়া অংশ নেননি ২০০ মিটারে। পায়ে ব্যথার কারণে বাংলাদেশ নৌবাহনীর কর্মকর্তারা সুমাইয়াকে ট্র্র্যাকে নামানোর ঝুঁকি নেননি।
তাহলে কি শিরিনের পথ উম্মুক্ত? সুমাইয়া না থাকায় কে জানাতে পারেন শিরিনকে চ্যালেঞ্জ? ২০০ মিটারেও হলো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ২০০ মিটারেও পারলেন না শিরিন আক্তার। দৌড় শেষ করে পড়ে গেলেন ট্র্যাকে। অন্য পাশে শারিফা খাতুনের উচ্ছ্বাস। গণমাধ্যমকর্মীরা ক্যামেরা তাক করে ছুটছেন তার পিছুপিছু।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাথলেট ১১ বছর ধরে অংশ নিয়ে আসছেন সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে। ২০০ মিটারে বেশ কয়েকবার ব্রোঞ্জ ও রৌপ্য জিতলেও স্বর্ণ ছোঁয়া হয়নি কখনো। অবশেষে সেই সাফল্য আসলো খুলনার এই যুবতির। তাও শিরিনকে হারিয়ে।
শারিফার পছন্দের ইভেন্ট ৪০০ মিটার স্প্রিন্ট। তবে কিছুটা চোটে থাকায় ৪০০ মিটারে অংশ না নিয়ে খেলেছেন ২০০ মিটারে। সেখানেই পেয়ে গেলেন সেরা সাফল্য। শিরিনকে হারিয়ে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না শারিফা।
‘কখনো ভাবিইনি যে, ২০০ মিটারে স্বর্ণ জিতবো। আমি ৪০০ মিটারের খেলোয়াড়। ওই ইভেন্টের স্বর্ণজয়ী আমি। ৪০০ মিটারে আমার চারটি ব্যক্তিগত স্বর্ণ আছে। এবার আমি শুধু ৪০০ মিটারেই অনুশীলন করেছিলাম। ১০০ ও ২০০ মিটারের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। ৪০০ মিটারে ট্রেনিং করে ২০০ মিটারে এত ভালো হবে নিজেই জানতাম না। আগে এই ইভেন্টে স্বর্ণ জিততে না পারলেও শিরিন আপুর সাথেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। উনিশ-বিশের ব্যবধানে পারতাম না। এবার কিভাবে সেটা কাভার করলাম নিজেই বুঝতে পারছি না’- দৌড় শেষ করে বলছিলেন শারিফা খাতুন।
১০০ মিটারেও তো অংশ নিয়েছিলেন। কেমন ছিল সেই লড়াই? শারিফা বলেন, ‘তখনো তীব্র লড়াই হয়েছিল আমাদের মধ্যে। আমি তো দৌড়াচ্ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না কে প্রথম হয়েছেন। প্রথমে ভেবেছিলাম শিরিন আপু স্বর্ণ পেয়েছেন। পরে দেখলাম সুমাইয়া। আমি হয়েছিলাম তৃতীয়।’
পছন্দের ইভেন্ট না হলেও স্বর্ণ পেয়েছেন। সামনে এসএ গেমস আছে। কি ভাবছেন? ‘আমি এখন থেকে ১০০ ও ২০০ মিটারেও নজর দেবো। ঠিকমতো ট্রেনিং করতে পারলে আশা করি এর চেয়েও ভালো রেজাল্ট করতে পারবো’- বলেছেন শারিফা খাতুন।
খুলনার দৌলতপুরের দীঘলিয়ায় বাড়ি শারিফার। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় শারিফা। বাবা কৃষিকাজ করেন। নিজেদের জমির পাশাপাশি অন্যের জমিও চাষাবাদ করেন। তার বড় বোন অ্যাথলেট ছিলেন। এখন চাকরি করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। দুই বোনের বেতনেই এখন স্বচ্ছ্বলভাবে চলছে তাদের সংসার।
কিভাবে অ্যাথলেট হলেন সংক্ষেপে সেই গল্পও শোনালেন শারিফা খাতুন। ‘আমার বড় বোন মুক্তা খাতুন তখন বিজেএমসিতে খেলাধুলা করতেন। তিনি হার্ডল করতেন। ২০১৪ সালে আমি বিজেএমসির হয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলাম। পরের বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেই। তার পিছুপিছু যেতাম ও দৌড়াতাম। তারপর থেকেই আমি অ্যাথলেট’- বলছিলেন শারিফা খাতুন।
আরআই/আইএইচএস/