শিশুদের জন্য ইন্টারনেট নিরাপদ করবেন কীভাবে
ইন্টারনেট এখন আর শুধু বড়দের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, শিশুদের দৈনন্দিন ব্যবহারের অংশ হয়ে ওঠেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি তারা অনলাইন গেম, ভিডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোরাফেরা সবই করে। প্রযুক্তি অনেক সুবিধা নিয়ে এলেও এর ভেতরে লুকিয়ে আছে নানা হিংসাত্মক কনটেন্ট, সাইবার বুলিং, আসক্তি, প্রতারণা, এমনকি গোপনীয়তার ঝুঁকি। প্রযুক্তির এই যুগে আপনার শিশুকে ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারবেন না। কিন্তু কিছু আচরণ আপনার আড়ালেই শিশুকে বিপদে ফেলতে পারে। যেমন- ১. অনলাইন গেম শিশুদের কাছে অনলাইন গেম খুবই জনপ্রিয়। বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে খেলার সুযোগ, রোমাঞ্চকর মিশন ও পুরস্কার - সবই পাওয়া যায় এখানে। সব মিলিয়ে গেমিং দুনিয়া তাদের কাছে টানে। কিন্তু এখানেই ঘটে মহাবিপত্তি। অনেক গেমেই পাওয়া যায় হিংস্রতা, গালাগাল এবং অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কথোপকথনের সুযোগ। অনেক শিশুই দীর্ঘ সময় ধরে গেম খেলতে গিয়ে পড়াশোনা, ঘুম, এমনকি খাওয়ার সময়ও হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া কিছু গেমে শিশুদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি হয়। জিততে না পারলে হতাশা, রাগ ইত্যাদি কাজ করে। এছাড়াও গেমের চ্যাটবক্সে অপরিচিত কেউ ব্যক্তিগত তথ্য চাইলে বা গালি দিলে শিশুরা মানসিকভাবে আঘাত পায়। অ
ইন্টারনেট এখন আর শুধু বড়দের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, শিশুদের দৈনন্দিন ব্যবহারের অংশ হয়ে ওঠেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি তারা অনলাইন গেম, ভিডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোরাফেরা সবই করে।
প্রযুক্তি অনেক সুবিধা নিয়ে এলেও এর ভেতরে লুকিয়ে আছে নানা হিংসাত্মক কনটেন্ট, সাইবার বুলিং, আসক্তি, প্রতারণা, এমনকি গোপনীয়তার ঝুঁকি। প্রযুক্তির এই যুগে আপনার শিশুকে ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারবেন না। কিন্তু কিছু আচরণ আপনার আড়ালেই শিশুকে বিপদে ফেলতে পারে। যেমন-
১. অনলাইন গেম
শিশুদের কাছে অনলাইন গেম খুবই জনপ্রিয়। বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে খেলার সুযোগ, রোমাঞ্চকর মিশন ও পুরস্কার - সবই পাওয়া যায় এখানে। সব মিলিয়ে গেমিং দুনিয়া তাদের কাছে টানে। কিন্তু এখানেই ঘটে মহাবিপত্তি।
অনেক গেমেই পাওয়া যায় হিংস্রতা, গালাগাল এবং অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কথোপকথনের সুযোগ। অনেক শিশুই দীর্ঘ সময় ধরে গেম খেলতে গিয়ে পড়াশোনা, ঘুম, এমনকি খাওয়ার সময়ও হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া কিছু গেমে শিশুদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি হয়।
জিততে না পারলে হতাশা, রাগ ইত্যাদি কাজ করে। এছাড়াও গেমের চ্যাটবক্সে অপরিচিত কেউ ব্যক্তিগত তথ্য চাইলে বা গালি দিলে শিশুরা মানসিকভাবে আঘাত পায়। অভিভাবকেরা বুঝতেই পারেন না কখন তাদের সন্তান নিরাপদ পরিবেশ থেকে সরে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে প্রবেশ করছে।
২. হিংসাত্মক কনটেন্ট
ইউটিউব, টিকটক কিংবা রিলস সবই এখন হাতের মুঠোয়। শিশুরা চাইলেই সহজে যেকোনো কনটেন্টে প্রবেশ করতে পারে। অনেক শিশুই কার্টুন দেখতে পছন্দ করে। কিন্তু জটিল অ্যালগরিদমের কারণে কখনো কখনো ভিডিওর তালিকায় উঠে আসে প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট, হরর ভিডিও বা হিংসাত্মক দৃশ্য।
এই ধরনের কনটেন্ট শিশুর মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন - ঘুমের সমস্যা, ভয়, আক্রমণাত্মক আচরণ, মনোযোগের ঘাটতি হরহামেশাই দেখা যায়। গবেষণা বলছে, শিশু যখন দীর্ঘদিন হিংসাত্মক কনটেন্ট দেখে, বাস্তব জীবনে সেটাকে স্বাভাবিক মনে করতে শুরু করে। ফলে সহপাঠীদের প্রতি রাগ, মারামারি বা অনুকরণের প্রবণতা বেড়ে যায়।
৩. সাইবার বুলিং
বুলিং এখন রাস্তাঘাটে বা স্কুলে সীমাবদ্ধ নয়; সোশ্যাল মিডিয়ার ভেতরেও ঢুকে পড়েছে। শিশুর ছবি বা ভিডিও নিয়ে ঠাট্টা, গালি, অপমানজনক মন্তব্য কিংবা ভয় দেখানো — এসবই সাইবার বুলিংয়ের আওতায় পড়ে।
অনেক শিশুই অপমানের ভয় বা অভিভাবকের বকুনি এড়াতে এসব কথা কাউকে বলে না। তাদের ভেতরে জমে থাকে ভয়, লজ্জা ও আত্মবিশ্বাসহীনতা। সাইবার বুলিংয়ের কারণে অনেক শিশু পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে, সামাজিক সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যায়, এমনকি বিষণ্নতাতেও আক্রান্ত হয়।
এসব কারণে শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে আশার কথা হলো, অভিভাবক সচেতন হলে শিশুকে এমন ঝুঁকি থেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব। জেনে নিন উপায় -
১. ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা
শিশুকে শেখাতে হবে—কখনও নিজের ছবি, ঠিকানা, স্কুলের নাম বা পারিবারিক তথ্য অপরিচিত কাউকে পাঠাতে নেই।
২. স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের বেশি স্ক্রিন ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়া। এতে করে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পাবেন কিছুদিনের মধ্যেই।
৩. শিশুদের জন্য ফিল্টার ও প্যারেন্টাল কন্ট্রোল
ইউটিউব কিডস, গুগল ফ্যামিলি লিংক বা ডিভাইসের প্যারেন্টাল সেটিংস ব্যবহার করলে অনাকাঙ্ক্ষিত কনটেন্ট অনেকটাই বন্ধ করা যায়।
৪. খোলামেলা আলোচনা
শিশুকে এমন পরিবেশ দিতে হবে যেন তারা মা-বাবাকে খোলামেলা সব বলতে পারে। এতে করে নিরাপদ অনলাইন সেবা অনেকটাই নিশ্চিত করা সম্ভব।
৫. অনলাইন বন্ধু সম্পর্কে সতর্কতা
সন্তানকে ইন্টারনেটে অচেনা মানুষ সম্পর্কে সচেতন করুন। শিশুকে জানান – বাস্তবে পরিচিত নয় এমন কেউ কথা বলতে চাইলে আগে আপনাকে জানাতে। কারণ, ইন্টারনেটে শিশু যাদের সঙ্গে কথা বলে, তারা বাস্তবে কে — তা জানা না থাকলে শিশুকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে।
শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে গবেষকরা অনেক আগেই সতর্ক করেছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জুন ঝাও এবং তার সহকর্মীরা বলেন, শিশুদের জন্য অনলাইন সেবা তৈরি করতে হলে 'সেফটি বাই ডিজাইন' নীতি অনুসরণ করা জরুরি — যেখানে শুরু থেকেই গোপনীয়তা রক্ষা, বয়সভিত্তিক কনটেন্ট ফিল্টার, সতর্কতামূলক নির্দেশনা এবং শেখার উপযোগী বৈশিষ্ট্য থাকবে।
এছাড়াও শুধু প্যারেন্টাল কন্ট্রোল যথেষ্ট নয়; শিশু যেন বুঝতে পারে কোন তথ্য শেয়ার করা ঠিক নয় এবং কোন আচরণ ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আজ ২০ নভেম্বর, বিশ্ব শিশু দিবস। অর্থাৎ দিনটি আজ শিশুদের, শিশুদের অধিকার নিশ্চিতের। এবছরের প্রতিপাদ্য হলো 'মাই ডে, মাই রাইটস'। তাই শিশুর নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করতে আজ থেকেই বাস্তব জীবনের খেলাধুলা, বন্ধু, বই — এসবের সঙ্গে শিশুদের বেশি বেশি যুক্ত করুন।
তথ্যসূত্র: আর্কসাইভ, ইউনিসেফ, অক্সফোর্ড চাইল্ড সেফটি বাই ডিজাইন রিপোর্ট
এএমপি/এএসএম
What's Your Reaction?