ঘুম থেকে উঠে দেখলেন শিশুর চোখ ভিজে গেছে, পাশে পিচুটি জমে আছে কিংবা চোখটা লাল হয়ে ফুলে আছে? এমন হলে যে কেউ চিন্তিত হয়ে পড়েন।
অনেক সময় আশপাশের মানুষ নানা রকম কথা বলেন—কেউ বলেন ‘বাতাস লেগেছে’, কেউ বলেন ‘বুকের দুধ চোখে চলে গেছে’, আবার কেউ বলেন ‘আঁতুড় মানা হয়নি’! কিন্তু এসব কুসংস্কার নয়, এর পেছনে আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
আরও পড়ুন : রাতে না খেলে কমবে ওজন! জানুন পুষ্টিবিদের মত
আরও পড়ুন : ভাতের সঙ্গে কাঁচামরিচ খাওয়া কি সত্যিই উপকারী? জানালেন পুষ্টিবিদ
চলুন, চোখের বিশেষজ্ঞ আহসান কবিরের কাছ থেকে জেনে নিই, শিশুদের চোখ দিয়ে পানি পড়ার আসল কারণ এবং এর সহজ সমাধান।
শিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ে কেন?
চোখের পাশে একটা ছোট গ্রন্থি থাকে, যেখান থেকে পানি তৈরি হয়। এই পানি পলক ফেললে পুরো চোখ ভিজিয়ে দেয় এবং পরে একটা সরু পথ দিয়ে নাকের ভেতর দিয়ে বের হয়ে যায়।
কিন্তু নবজাতক বা ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে এই পানি যাওয়ার রাস্তাটা অনেক সময় পুরোপুরি খোলা থাকে না। তখন পানি চোখে জমে থাকে, আর সেখান থেকে তা বাইরে পড়ে। এই সমস্যা দেখা যায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শিশুদের মধ্যে।
চোখে জমে থাকা পানি যদি বাইরের জীবাণুর সংস্পর্শে আসে, তখন পিচুটি, লালচে ভাব, এমনকি চোখ ফোলা-এর মতো সমস্যাও হতে পারে।
কী করবেন এই অবস্থায়?
চোখের এই ধরনের সমস্যা হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। তবে কিছু যত্ন নেওয়া জরুরি:
- চোখের কোণে হালকা ম্যাসাজ করুন – দিনে কয়েকবার আঙুল দিয়ে খুব নরমভাবে
- চোখ ও নাক পরিষ্কার রাখুন – জীবাণু যেন জমে না
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করুন – প্রয়োজনে চোখে ওষুধ দিতে হতে পারে
- সাধারণত ৯-১০ মাস বয়সে এই পথ খুলে যায়, তাই সময় দিন
কখন দুশ্চিন্তা করবেন
আহসান কবির জানিয়েছেন, সবসময়ই যে এই সমস্যা চোখের পথ বন্ধ থাকার কারণে হয়, তা নয়। কিছু ক্ষেত্রে চোখের ভেতরে সংক্রমণ, কর্নিয়াতে ঘা, চোখ ওঠা, গ্লুকোমা বা অ্যালার্জির কারণেও পানি পড়তে পারে।
আরও পড়ুন : ফ্যাটি লিভার থেকে বাঁচতে চাইলে এখনই বদল আনুন জীবনধারায়
আরও পড়ুন : বারবার খাবার গরম করা নিয়ে যা বলছেন পুষ্টিবিদ
তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে বেশিরভাগ সময়ই এগুলো সাময়িক সমস্যা হিসেবেই থাকে। শিশুর চোখ অমূল্য সম্পদ। একটু সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা—এই তিনটিই হতে পারে শিশুর চোখের সুস্থতার চাবিকাঠি।
আর যদি চোখের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হয়ে পড়ে, তাহলে দেরি না করে চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।