গাছের ডগায় শিশির বিন্দু, সকালে কুয়াশার চাদরে আচ্ছাদিত ফসলের মাঠ আর বিকেলের হিমেল হাওয়া বলে দেয় শীত এসেছে। শীত যেন এ জেলার আরেক অস্তিত্বের জানান দেয়। সবার আগে শীত এসে মাঝখানে জেঁকে বসে সবার পরে বিদায় নেয়। শীতের এ আগমনে পিঠাপুলির আমেজ থাকলেও অধিকাংশ মানুষের কাছে শীত যেন আরেক সংগ্রামের নাম।
জানা যায়, দেশের উত্তরের কৃষিপ্রধান জেলা ঠাকুরগাঁও পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটি ভারতের সীমানাঘেঁষা। একদিকে সীমান্ত অপরদিকে হিমালয়ের হিম বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। সকাল থেকে সন্ধ্যা দেখা মিলে না সূর্যের আলোর। শীতের দাপটে কাবু হয়ে পরে সাধারণ মানুষের জীবন। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। এতে কর্ম হারিয়ে ফেলেন অনেক দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ। পরিবার নিয়ে করতে হয় আরেক সংগ্রাম।
আরও জানা যায়, প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বসবাস করা শীতপ্রবণ জেলায় বরাদ্দ একেবারে শিথিল। প্রতি বছরে চাহিদার অর্ধেক বরাদ্দ পেয়ে থাকেন জেলার সাধারণ মানুষ৷ আবার সে বরাদ্দের মান ও বিতরণ নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা। কোনোবারেই শীতের শুরুতে সহযোগিতা পান না শীতার্তরা। কর্ম হারিয়ে বসে থেকেও কম্বল ছাড়া পান না বাড়তি কোনো সহযোগিতা। সেই কম্বল পেতে শেষ নেই ভোগান্তির। যাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয় তারা দিয়ে থাকেন পছন্দের মানুষকে। শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতের সুযোগ সুবিধা চান খেটে খাওয়া মানুষ।
সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের শ্রমিক লতিফুর রহমান বলেন, প্রতিবারে কম্বল ঠান্ডার শেষে দেওয়া হয়। তাতে ঠান্ডা শেষ হয়ে যায়। গতবার পাইনি কম্বল এবারেও কম্বল মিলবে কি না জানি না। আমার কষ্ট কমানোর জন্য আগে ভাগে ভালো মানের কম্বল দেওয়া উচিত।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, প্রতি বছরে শীতে কম্বল ও আর্থিক অনুদানের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় চাহিদা। এতে দেখা যায়, জেলায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৮,৮০০ পিস কম্বল ও ৬৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ লাখ পিস কম্বল ও ৫০ লাখ টাকা চাহিদা পাঠানো হয়। এর বিপরীতে ২৭,৫০০ পিস কম্বল ও ৫০ লাখ ৮৫ হাজার ৯১০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮০ হাজার পিস কম্বল ও ৪০ লাখ টাকা চাহিদার বিপরীতে ৪৩ হাজার পিস কম্বল ও ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০ হাজার পিস কম্বল ও ৪০ লাখ টাকা চাহিদা থাকলেও শুধু ৪১ হাজার ৫৫০ পিস কম্বল দেওয়া হয়। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০ হাজার পিস কম্বল আর ২০ লাখ টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে প্রতি বছরে চাহিদা কমানোর পাশাপাশি কমে এসেছে বরাদ্দ। চলতি অর্থ বছরে যার অবস্থান একেবারে তলানিতে। শীতে কাবু হওয়া জেলার মানুষের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিকল্পনা মাফিক শীতার্তদের পাশে থাকার আহ্বান সুশীল সমাজের।
ঠাকুরগাঁও জার্নালিস্ট ক্লাবের সভাপতি রেজাউল প্রধান বলেন, প্রতিবারের চেয়ে এবারে চাহিদা কম পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। এতে সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ছিন্নমূল মানুষের। বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি হয়ে পরেছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা কালবেলাকে বলেন, মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানোর পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। এ শীতে আরেক ধাপে চাহিদা পাঠানো হবে। আগের বিতরণ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এবারে আগে ভাগে শীতার্তদের বরাদ্দ তুলে দেওয়া হবে।