শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান

আমাদের দেশের বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী শীতকালে প্রচণ্ড রকম কষ্টের ভেতর দিয়ে দিন অতিবাহিত করে। অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানহীন এসব দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের নিজস্ব সক্ষমতা দিয়ে হিমশীতল ও হাঁড়-কাঁপানো শীতের সীমাহীন কষ্ট লাঘব করা সম্ভব হয়ে ওঠে না অনেক সময়। তাই শীতার্ত মানুষের তরে এগিয়ে আসা সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শুধু শীতার্ত নয়; যে কোনো বিপদগ্রস্ত ও অভাবী মানুষের সাহায্য সহযোগিতা করা আল্লাহর আদেশও। মানবসেবার কোনো সুযোগ হাতছাড়া না করা ও জনসেবার সুযোগ আন্তরিকতার সঙ্গে লুফে নেওয়া ইসলামের দাবি। মহান প্রভুর প্রিয়পাত্র হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সৃষ্টিজীবের সেবা করার অনেক ফজিলত ও মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আত্মীয়স্বজনকে তাদের হক আদায় করো এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও (তাদের হক আদায় করো)। আর নিজেদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে ওড়াবে না। (কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে রেখো না এবং (অপব্যয়ী হয়ে) তা সম্পূর্ণরূপে খুলে রেখো না, যার কারণে তোমাকে নিন্দাযোগ্য ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়তে হয়।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৬, ২৯)। আয়াতের সারমর্ম ও দাবি হলো, অধিকার আদায় ও মান

আমাদের দেশের বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী শীতকালে প্রচণ্ড রকম কষ্টের ভেতর দিয়ে দিন অতিবাহিত করে। অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানহীন এসব দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের নিজস্ব সক্ষমতা দিয়ে হিমশীতল ও হাঁড়-কাঁপানো শীতের সীমাহীন কষ্ট লাঘব করা সম্ভব হয়ে ওঠে না অনেক সময়। তাই শীতার্ত মানুষের তরে এগিয়ে আসা সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শুধু শীতার্ত নয়; যে কোনো বিপদগ্রস্ত ও অভাবী মানুষের সাহায্য সহযোগিতা করা আল্লাহর আদেশও। মানবসেবার কোনো সুযোগ হাতছাড়া না করা ও জনসেবার সুযোগ আন্তরিকতার সঙ্গে লুফে নেওয়া ইসলামের দাবি। মহান প্রভুর প্রিয়পাত্র হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সৃষ্টিজীবের সেবা করার অনেক ফজিলত ও মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আত্মীয়স্বজনকে তাদের হক আদায় করো এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও (তাদের হক আদায় করো)। আর নিজেদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে ওড়াবে না। (কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে রেখো না এবং (অপব্যয়ী হয়ে) তা সম্পূর্ণরূপে খুলে রেখো না, যার কারণে তোমাকে নিন্দাযোগ্য ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়তে হয়।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৬, ২৯)। আয়াতের সারমর্ম ও দাবি হলো, অধিকার আদায় ও মানবসেবা করা। কৃপণতা ও সম্পদ কুক্ষিগত না করে সামর্থ্যানুযায়ী দান করা।

পৃথিবীতে দুই শ্রেণির মানুষের বসবাস। ধনী ও দরিদ্র। কোরআনের দাবি হলো, প্রথম শ্রেণির মানুষরা দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষকে সাধ্যানুযায়ী খেদমত করবে, প্রয়োজন পূরণ করবে। দরিদ্রের জীবন আনন্দ ও সুখময় করতে সাহায্য করবে। নিজেরা আল্লাহর পক্ষ হতে যে অগণিত নিয়ামতে ধন্য হয়েছে, তার কিছু অংশ অভাবী ও নিঃস্বদের দান করবে। অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর ভালোবাসায় মিসকিন, এতিম ও বন্দিদের খাবার দান করে।’ (সুরা দাহর: ৮)। মুমিন-মুসলমান জীবনের একমাত্র টার্গেট হচ্ছে, জীবিত থাকা অবস্থায় সৎ ও নেক কাজের মাধ্যমে চিরকাঙ্ক্ষিত জান্নাত অর্জন করা। জান্নাতের পাথেয় সংগ্রহ করা। উপরোক্ত আয়াতে পরকালীন জীবনে যারা সীমাহীন আনন্দবর্ধক ও প্রীতিজনক ঠিকানা জন্নাতের অধিবাসী হবে, চিরস্থায়ী জান্নাতের নিয়ামত অবগাহন করবে তাদের পরিচয় বর্ণিত হয়েছে।

মানুষের অন্যতম মৌলিক প্রয়োজন হলো পরিধেয় কাপড়। ব্যক্তি ও সমাজজীবনে কাপড় অপরিহার্য বিষয়। প্রয়োজনের প্রশ্নে শীত মৌসুমে পরিধেয় বস্ত্র ও বাসস্থানের সংস্কার উপযোগী বস্ত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শীতে কাতর লোকেরা কাপড়ের অভাব অনুভব করে সর্বাধিক। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (আবু দাউদ: ১৬৮২)। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে কাপড় দান করলে যতক্ষণ ওই কাপড়ের টুকরা তার কাছে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দানকারী আল্লাহর হেফাজতে থাকবে।’ (তিরমিজি: ২৪৮৪)

এ ছাড়া অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে বস্ত্র দান, বিপদ-আপদে সাহায্য ইত্যাদির কথা গুরুত্ব সহকারে বর্ণিত হয়েছে। শীতের দিনে খুব ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত থাকে দেশের অনেক মানুষ। ফুটপাতে, খোলা আকাশের নিচে শৈত্যপ্রবাহে লাখ লাখ মানবসন্তান সীমাহীন দুর্বিষহ জীবনযাপন করে। অনেকের জীবন প্রদীপ নিভে যায়! শীতপ্রধান এলাকার ভাগ্যাহত মানুষরা শীত নিবারণে বাড়িঘর, নিত্যপ্রয়োজনীয় জীবন উপকরণ ও শীত নিবারক বস্ত্রের স্বল্পতায় ভোগে। যেসব এলাকায় বন্যা হয়েছে বা উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকার লোকেরা এমনিতেই বিপন্ন, ক্ষুধার যন্ত্রণার সঙ্গে অসহ্য মাত্রার বরফ-বৃষ্টির মতো শীত ও ঠান্ডা বাতাস তাদের জীবনযাত্রা করে তোলে সীমাতিরিক্ত দুর্বিষহ। শীতবস্ত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জীবন উপকরণের আশায় তারা চাতকের মতো চেয়ে থাকে কোনো ত্রাণ ও শীতবস্ত্র বিতরণকারী দলের আগমন পথে। বিশেষ করে শিশু, নারী, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষের করুণ অবস্থা চোখে পানি দেয়। এমন সংকটময় ও নাজুক মুহূর্তে দেশের সচ্ছল মানুষের কর্তব্য হলো শীতার্ত মানুষের পাশে সামর্থ্যানুযায়ী উপস্থিত হওয়া।

লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow