শীতে ব্যস্ততম পর্যটন কেন্দ্র সোনারগাঁ

শীতের শুরুতেই যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী সোনারগাঁ। কুয়াশামাখা সকালের নরম রোদে ভিজে থাকা পথ, শীতল বাতাসের মৃদু ছোঁয়া আর শতবর্ষী ইতিহাস বহন করে চলা পানাম নগরের জরাজীর্ণ দেয়াল-সব মিলিয়ে পুরো এলাকা এখন উৎসবমুখর। ঢাকার কোলাহল, ব্যস্ততা আর যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি ছেড়ে একটু স্বস্তির খোঁজে প্রতিদিনই হাজারো মানুষ ছুটে আসছেন এই প্রাচীন জনপদে। শীতকালীন আবহ আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দর্শনার্থীর এই ঢল সোনারগাঁকে পরিণত করেছে দেশের অন্যতম ব্যস্ত ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে। পানাম নগর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বারদী ও মেঘনার ঘাট-সবখানেই এখন মানুষের ভিড়। ইতিহাসের টানে আসা তরুণদের ক্যামেরা ক্লিকের শব্দ, শিশুদের দৌড়ঝাঁপ ও হাসি, পরিবারের ব্যস্ততা আর দম্পতিদের নিরিবিলি কোনো কোণ খোঁজার চেষ্টা-সব মিলিয়ে সোনারগাঁ যেন এক জীবন্ত দৃশ্যপটে রূপ নিয়েছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে পানাম নগরের প্রবেশমুখে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে ভিন্ন এক চিত্র। প্রবেশের টিকিট কাটতে দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন, ভেতরে ঢুকেই ইতিহাস প্রেমীরা ফ্রেম ধরে ফ্রেমে বন্দী করছেন শতবর্ষী স্থাপত্য। পানাম নগরের প্রতিটি ভবন, প্রতিটি অল

শীতে ব্যস্ততম পর্যটন কেন্দ্র সোনারগাঁ

শীতের শুরুতেই যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী সোনারগাঁ। কুয়াশামাখা সকালের নরম রোদে ভিজে থাকা পথ, শীতল বাতাসের মৃদু ছোঁয়া আর শতবর্ষী ইতিহাস বহন করে চলা পানাম নগরের জরাজীর্ণ দেয়াল-সব মিলিয়ে পুরো এলাকা এখন উৎসবমুখর।

ঢাকার কোলাহল, ব্যস্ততা আর যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি ছেড়ে একটু স্বস্তির খোঁজে প্রতিদিনই হাজারো মানুষ ছুটে আসছেন এই প্রাচীন জনপদে। শীতকালীন আবহ আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দর্শনার্থীর এই ঢল সোনারগাঁকে পরিণত করেছে দেশের অন্যতম ব্যস্ত ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে।

পানাম নগর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বারদী ও মেঘনার ঘাট-সবখানেই এখন মানুষের ভিড়। ইতিহাসের টানে আসা তরুণদের ক্যামেরা ক্লিকের শব্দ, শিশুদের দৌড়ঝাঁপ ও হাসি, পরিবারের ব্যস্ততা আর দম্পতিদের নিরিবিলি কোনো কোণ খোঁজার চেষ্টা-সব মিলিয়ে সোনারগাঁ যেন এক জীবন্ত দৃশ্যপটে রূপ নিয়েছে।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে পানাম নগরের প্রবেশমুখে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে ভিন্ন এক চিত্র। প্রবেশের টিকিট কাটতে দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন, ভেতরে ঢুকেই ইতিহাস প্রেমীরা ফ্রেম ধরে ফ্রেমে বন্দী করছেন শতবর্ষী স্থাপত্য। পানাম নগরের প্রতিটি ভবন, প্রতিটি অলিগলি যেন অতীতের গল্প শোনায়। লোকশিল্প জাদুঘরের প্রতিটি গ্যালারিতেই উপচে পড়া ভিড়-একদিকে শিশুদের কৌতূহলী দৃষ্টি, অন্যদিকে প্রবীণদের স্মৃতিচারণ। পুরো জাদুঘর জুড়ে যেন অতীত আর বর্তমানের এক অনন্য মিলনমেলা।

সাধারণ দিনের তুলনায় শুক্রবার ও শনিবারে দর্শনার্থীর চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। স্কুল–কলেজ বন্ধ থাকায় সকাল থেকেই পরিবার নিয়ে মানুষ দলবেঁধে  ভিড় জমায়। দুপুরের দিকে পানাম নগরের ভেতরে হাঁটার জায়গা পাওয়া দায় হয়ে পড়ে। খাবারের দোকান, রেস্টুরেন্ট ও ভ্রাম্যমাণ স্টলগুলোতে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। একই সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে ওঠে নদীপথও। মেঘনা নদীর ঘাটে নৌকা ভ্রমণের জন্য সপ্তাহান্তে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

এই বাড়তি পর্যটক সমাগম সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে স্থানীয় অর্থনীতিতে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, খাবারের দোকান, হস্তশিল্প বিক্রেতা, রিকশা ও ইজিবাইক চালক, নৌকা মালিক -সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যবসায়ীদের ভাষায়, ছুটির দিনগুলোতে আর্থিক লেনদেন সাধারণ দিনের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী তানভীর আহমেদ বলেন, ব্যস্ত ঢাকার জীবনে একটু নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা খুঁজতে আমরা প্রায়ই সোনারগাঁকে বেছে নিই। শীতের সকালে পানাম নগরের পথে হাঁটলে মনে হয় ইতিহাস যেন নিজেই কথা বলছে। পুরোনো স্থাপনা, খোলা আকাশ আর শান্ত পরিবেশ-সব মিলিয়ে এটি আমাদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা। পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটানোর জন্য এর চেয়ে সুন্দর জায়গা খুব কম আছে।

রাজধানীর উত্তরা থেকে পরিবারসহ আসা দর্শনার্থী নাসরিন সুলতানা বলেন, সোনারগাঁ শুধু ভ্রমণের জায়গা নয়, এটি আমাদের ইতিহাস জানার একটি জীবন্ত পাঠশালা। শিশুদের সামনে বইয়ের পাতার ইতিহাসকে বাস্তবে তুলে ধরার সুযোগ পাওয়া যায় এখানে। শীতের আবহে পুরো এলাকা আরও মনোরম হয়ে ওঠে। তাই সুযোগ পেলেই ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে এখানে চলে আসি।

স্থানীয় খাবার ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, শীত এলেই আমাদের এলাকায় ব্যাবসার চাকা ঘুরতে শুরু করে। শুক্রবার ও শনিবারে ক্রেতার চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে বসার ফুরসত থাকে না। এই কয়েক মাসের ভালো আয়ের ওপরই আমাদের সারা বছরের সংসার চলে। পর্যটক যত বাড়বে, আমাদের জীবনমানও তত উন্নত হবে।

মেঘনা নদীর নৌকা মালিক জয়নাল আবেদীন বলেন, শীতের সময় নদীতে ভ্রমণের আলাদা আনন্দ আছে। তাই সপ্তাহান্তে প্রায় সব নৌকাই ভরে যায়। এই মৌসুমে যে আয় হয়, তা দিয়েই পরিবারের খরচ, নৌকার রক্ষণাবেক্ষণ আর ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়। পর্যটক বাড়ায় শুধু আমরা নয়, পুরো এলাকাই লাভবান হচ্ছে।

তবে দর্শনার্থীর এই ভিড়ের সঙ্গে বাড়ছে ভোগান্তিও। সড়কে যানজট, পার্কিং সংকট এবং অতিরিক্ত মানুষের চাপ মাঝে মাঝে চলাচলে সমস্যা তৈরি করছে। এসব সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসন ছুটির দিনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদারের কথা জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানাম নগরীর দায়িত্বে থাকা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী কাস্টডিয়ান সিয়াম চৌধুরী বলেন, শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই পানাম নগরীতে দর্শনার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow