শীতের কাপড়ের বাজার গরম, কম্বল-কমফোর্টারে ঝোঁক ক্রেতার

2 weeks ago 16

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শীতের হিম হাওয়া বইছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে। ভোরের কুয়াশা আর সন্ধ্যায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠার দোকান জানান দিচ্ছে জেঁকে বসছে শীত। জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার, শাল ও চাদর গায়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

কয়েকদিন ধরে কংক্রিটের শহর ঢাকায়ও রোদের তেমন দেখা মিলছে না। দিনের বেলায় বাইরে শীত অনুভূত না হলেও রাতে মৃদু হিম বাতাস ও হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের আগমনী বার্তায় রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে নামিদামি শপিংমলেও এখন শীতের পোশাকের পসরা বসতে শুরু করেছে। এসময়ে অন্য যে কোনো পোশাকের চেয়ে শীতের পোশাকের বেচাকেনাও ভালো।

এই সময়ে শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন আকার, ম্যাটেরিয়াল ও স্টাইলের লেপ, কম্বল, কমফোর্টার বেছে নেন অনেকে। এ বছর খানিকটা দেরিতে শীতের আগমন ঘটলেও গরম কাপড়ের ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে গরম কাপড়ের বাজারগুলো ক্রেতাদের আনাগোনায় গরম হয়ে উঠছে। অনেকটাই জমে উঠেছে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা দোকানে গরম কাপড়ের বেচাকেনা। জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার, শাল ও চাদরের পাশাপাশি চলছে কম্বল ও কমফোর্টার বেচাকেনাও।

শীতের কাপড়ের বাজার গরম, কম্বল-কমফোর্টারে ঝোঁক ক্রেতার

সরেজমিনে রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশের রাস্তা, ঢাকা ট্রেড সেন্টার ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড়ও বাড়ছে। তবে পাইকারি দোকানে ঢাকার বাইরের ক্রেতাই বেশি।

আরও পড়ুন

ওইসব এলাকার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতকেন্দ্রিক গরম কাপড়ের বেচাকেনা শুরু হয় অক্টোবর থেকে। এ বছর সেটি কিছুটা দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে ডিসেম্বরের শুরু থেকে ব্যবসা অনেকটাই জমজমাট। দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন দামের শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও শৌখিন কম্বলের পুরোটা আমদানিনির্ভর। অন্যদিকে, ত্রাণের কম্বল তৈরি হয় দেশেই।

গরম কাপড়ের বাজারগুলো ক্রেতাদের আনাগোনায় গরম হয়ে উঠছে। অনেকটাই জমে উঠেছে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা দোকানে গরম কাপড়ের বেচাকেনা। জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার, শাল ও চাদরের পাশাপাশি চলছে কম্বল ও কমফোর্টার বেচাকেনাও

ব্যবসায়ীরা জানান, মৌসুমি ব্যবসা হওয়ায় বিনিয়োগ বেশি। কারণ, স্বল্প সময়ে ব্যবসা করতে হয়, তাই বেশি অর্থ লগ্নি করতে হয়। আবার ব্যবসা ভালো না হলে, পণ্য বিক্রি না হলে টাকা আটকে যায়। তখন পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাদের।

যেখানে যা পাওয়া যাবে

রাজধানীর গুলিস্তান অ্যানেক্স টাওয়ারের ৮০টি দোকান এবং গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের আরও ১৬০টি দোকান এ সময় কম্বলসহ বিভিন্ন শীতকালীন পণ্য বিক্রি করা হয়। যেখানে কম্বলের মধ্যে রয়েছে হেমার, ক্যাঙ্গারু, ডায়মন্ড কিং, চায়না, কোরিয়ান ও দেশি ডাবল এবং সিঙ্গেল কম্বল।

বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর কম্বলের দাম একটু বেশি। একদিকে মূল্যস্ফীতি আবার ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি খরচ বেড়েছে। ফলে খুচরার পাশাপাশি পাইকারিতেও দাম খানিকটা বাড়তি। আবার ক্রেতার সংখ্যাও এখন পর্যন্ত তুলনামূলক কম।

গুলিস্তান বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশের রাস্তায় ফুটপাতে অনেক কম্বলের দোকান রয়েছে। সেখানকার এক ব্যবসায়ী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর ক্রেতা কম। আমাদের এখানে সব ধরনের মানুষ কম্বল কিনতে আসেন। সৌদি আরব, দুবাই থেকে লাগেজ পার্টি অনেক কম্বল কিনে আনেন। সেগুলো আমাদের এখানে পাওয়া যায়।

শীতের কাপড়ের বাজার গরম, কম্বল-কমফোর্টারে ঝোঁক ক্রেতার

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের কাছে লোকাল কোনো কম্বল নেই। কম দামে ভালো মাল বিক্রি করি, ক্রেতাদের প্রতারিত হওয়ারও সুযোগ নেই। এখন বেচাকেনা কম, ঢাকার বাইরের ক্রেতাই বেশি। ঢাকায় এখনো তেমনভাবে শীত শুরু হয়নি, তাই ক্রেতাদের চাপও নেই।

গুলিস্তানের পাশাপাশি নিউমার্কেট এলাকায়ও কম্বলের দোকান রয়েছে। নিউমার্কেটের বিসমিল্লাহ বেডিং স্টোরের স্বত্বাধিকারী সুলাইমান জাগো নিউজকে বলেন, আমার দোকানে সব ধরনের দামের কম্বল আছে। দেশি, চায়নিজ, ভিয়েতনামি, কোরিয়ান অনেক দেশের সিঙ্গেল ও ডাবল পার্ট কম্বল আছে। ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা দামের কম্বল বিক্রি করছি।

কোন কম্বলের দাম কেমন

গুলিস্তান অ্যানেক্স কো টাওয়ারের আর এক্স পয়েন্ট নামে একটি পাইকারি কম্বলের দোকান ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি দেশি-বিদেশি কম্বলের পসরা নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতা সেলিম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন রঙের, মানের, দেশি-বিদেশি কম্বল আছে। দাম শুরু ৫০০ টাকা থেকে, সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা।

‘আমাদের কাছে বিদেশি কম্বলও আছে। অনেকে জাকাতের কম্বল খুঁজেন। তারাও আমাদের কাছে পেয়ে যাবেন। দেশি ডাবল হেমার কম্বলের দাম ৯ হাজার টাকা। ক্যাঙ্গারু ডাবল পার্ট কম্বলের দাম ৬ হাজার টাকা। বিদেশি কোরিয়ান ডাবল পার্ট কম্বলের দাম ১২ হাজার টাকা’- বলেন এই বিক্রেতা।

আছে বিদেশি কম্বলও। অনেকে জাকাতের কম্বল খুঁজেন। তারাও আমাদের কাছে পেয়ে যাবেন। দেশি ডাবল হেমার কম্বলের দাম ৯ হাজার টাকা। ক্যাঙ্গারু ডাবল পার্ট কম্বলের দাম ৬ হাজার টাকা। বিদেশি কোরিয়ান ডাবল পার্ট কম্বলের দাম ১২ হাজার টাকা- বিক্রেতা সেলিম

গুলিস্তানে ঢাকা ট্রেড সেন্টারের নিচ তলায় শরীয়তপুর এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে কেজি দরে কম্বল বিক্রি হয়। কোয়ালিটি অনুযায়ী কেজিপ্রতি ৮০০-১২০০ টাকা দাম থাকে। যেমন- ডলফিন কোম্পানির তিন কেজি সাতশ গ্রাম ওজনের ডাবল পার্ট কম্বলের দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা।

আরও পড়ুন

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে পাইকারি কম্বল কিনতে গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারে আসেন একজন ক্রেতা। কথা হলে তিনি জানান, মুন্সিগঞ্জে তার একটি দোকান আছে। দোকানের জন্য শীতের পণ্য কিনতেই তিনি এসেছেন। এখানে একটু কম দামে ভালো কম্বল পাওয়া যায়, তাই এখান থেকে পাইকারি দামে কিনলে বেশ লাভ হয়। তবে এবছর কম্বলের দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। তিনি ওই মার্কেট থেকে বিভিন্ন দামের ৩০টির মতো কম্বল কিনেছেন বলে জানান।

কম্বলের বিকল্প কমফোর্টার

কম্বলের চেয়ে দাম একটু কম হওয়ায় অনেকে কমফোর্টার ব্যবহার করেন। শীতের মাত্রা এবং ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কমফোর্টার রয়েছে বাজারে।

ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট দক্ষিণ ভবনের নিচ তলায় পপুলার বেডিং স্টোরের স্বত্বাধিকারী হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে সব ধরনের এসি কুইল্ট, নকশীকাঁথা, কম্বল, কমফোর্টার, আছে। কম্বলের চেয়ে কমফোর্টার ব্যবহার করা সহজ। ওজন কম, সহজে ওয়াশও করা যায়। আর ঢাকায় শীতের যেটুকু তীব্রতা তাতে পাতলা কমফোর্টারই যথেষ্ট।

‘শীত ঘিরে আমাদের এখানে বিভিন্ন ডিজাইন ও রঙের পণ্য আছে। আমাদের সব মাল চায়নিজ। কমফোর্টার সারা বছর ব্যবহার করা যায়। পাতলা কমফোর্টারের দাম ১ হাজার ৬০০ এবং একটু মোটাগুলোর দাম ৩ হাজার টাকা। আমাদের এখানে পাইকারি ও খুচরায় দাম একই’- বলেন এই ব্যবসায়ী।

সেখানে শামীম নামে এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে জানান, তিনি আজিমপুরে ব্যাচেলর হিসেবে থাকেন। কম্বল ধোয়া এবং শুকানো অনেক ঝামেলার। তাই সিঙ্গেল কমফোর্টার কিনেছেন।

এসআরএস/এমকেআর/এমএস

Read Entire Article