‘শুক্রবার না হয়ে অন্যদিন হলে হতাহতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হতো’
সকালে হঠাৎই কাঁপতে শুরু করে সবকিছু। অল্পক্ষণেই বুঝতে পারি ভূমিকম্প। আশপাশের মানুষও ভয়ে চিৎকার করছিলেন। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ হওয়ায় দ্রুত পরিবার নিয়ে নিচে নেমে পড়ি। নিচে নেমেই চোখের সামনে দেখি সড়কে ত্রিপল ও ইট-সিমেন্ট এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। মানুষজন একজন আরেকজনকে টেনে তুলছেন। পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলি এলাকায় ভূমিকম্পের সময় একটি সাততলা ভবনের ছাদের নিরাপত্তা দেওয়াল (রেলিং) ধসে পড়ে চার পথচারী আহত হওয়ার কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আহমেদ। তিনি পাশের একটি ভবনে থাকেন। বললেন, ঘটনাটি শুক্রবার না হয়ে অন্যদিন ঘটলে আহত-নিহতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হতো। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে পরিবারের সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছি। এই ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই স্থানে নিহতের সংখ্যা তিনজন। গুরুতর আহত হয়েছেন একজন। বংশাল প্রধান সড়ক পার হয়ে সবাইকে ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার ঘটনা বলতে বলেতেই নুরুল আহমেদ দেখিয়ে দিচ্ছিলেন ঘটনাস্থলটি। বেলা সাড়ে ১২টায় ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা যায়, বংশালের কসাইটুলি এলাকার ২০ কে.পি ঘোষ স্ট্রিটের বাংলা স্কুলের সামনের স্থানটি ধ্বংসাবশেষে ভরা। এখানেই একটি সাততলা ভবন থেকে ছাদের নি
সকালে হঠাৎই কাঁপতে শুরু করে সবকিছু। অল্পক্ষণেই বুঝতে পারি ভূমিকম্প। আশপাশের মানুষও ভয়ে চিৎকার করছিলেন। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ হওয়ায় দ্রুত পরিবার নিয়ে নিচে নেমে পড়ি। নিচে নেমেই চোখের সামনে দেখি সড়কে ত্রিপল ও ইট-সিমেন্ট এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। মানুষজন একজন আরেকজনকে টেনে তুলছেন।
পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলি এলাকায় ভূমিকম্পের সময় একটি সাততলা ভবনের ছাদের নিরাপত্তা দেওয়াল (রেলিং) ধসে পড়ে চার পথচারী আহত হওয়ার কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আহমেদ। তিনি পাশের একটি ভবনে থাকেন।
বললেন, ঘটনাটি শুক্রবার না হয়ে অন্যদিন ঘটলে আহত-নিহতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হতো। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে পরিবারের সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছি।
এই ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই স্থানে নিহতের সংখ্যা তিনজন। গুরুতর আহত হয়েছেন একজন।
বংশাল প্রধান সড়ক পার হয়ে সবাইকে ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার ঘটনা বলতে বলেতেই নুরুল আহমেদ দেখিয়ে দিচ্ছিলেন ঘটনাস্থলটি।
বেলা সাড়ে ১২টায় ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা যায়, বংশালের কসাইটুলি এলাকার ২০ কে.পি ঘোষ স্ট্রিটের বাংলা স্কুলের সামনের স্থানটি ধ্বংসাবশেষে ভরা। এখানেই একটি সাততলা ভবন থেকে ছাদের নিরাপত্তা বেষ্টনীর ইট-সিমেন্ট পরে পথচারীরা গুরুতর আহত হন।
কিছুক্ষণ উদ্ধারকাজের কারণে সড়কটি জনসাধারণের চলাচলে আংশিকভাবে বন্ধ ছিল। আশপাশে জনতা ও গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড় দেখা যায়। ভবনের চারদিকে দেয়া ত্রিপল ও বাঁশের কাঠামো ধসে সড়কের ওপর পড়ে আছে।
ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ব্যাপক ভিড়ের কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে যৌথ বাহিনী নামানো হয়। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করেন সেনাবাহিনীর ৩০ জন সদস্য।
রেলিং ধসে পড়া ভবনটির মালিকের ভাতিজা দাবি করে মোহাম্মদ রকি নামে একজন গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার কাছে প্রতিবেদক ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ছাদের পাশে শিশুদের জন্য তিন ফিট উচ্চতার একটি নিরাপত্তা দেওয়াল ছিলো। ভূমিকম্প শুরু হলে সেটাই ভেঙে পড়ে পথচারীরা আহত হন। পরে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এখানে কাউকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, সড়কের নিচে ত্রিপল দেওয়া ছিলো। তাই ইট-খণ্ডের অনেকটাই সেখানে আটকে যায়, নিচে বেশি ক্ষতি হয়নি। যাদের দেখেছি তাদের একজনের মাথা ফেটে যায়, একজনের কানে আঘাত লাগে। একজনের হাত কেটে গিয়েছিল।
ভবন মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে নিরুৎসাহিত করতে থাকেন। তাৎক্ষণিকভাবে ভবনের মালিকের খোঁজ পাওয়া যায় নি, ভবনের প্রধান ফটকও ছিল বন্ধ।
ভবনটির নিচতলায় থাকা যে দোকানের সামনে হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটে সেই ‘বিসমিল্লাহ গরু-খাশি মাংস সাপ্লাই’ দোকানের কর্মচারী মো. হালিম ঘটনার সময় দোকানের ভেতরেই ছিলেন। তিনি বলেন, হঠাৎ ওপর থেকে পড়ার শব্দ পাই। একই সময়ে ভূমিকম্পের কম্পনও টের পাই। পরে বাইরে বেরিয়ে দেখি সবাই দৌড়াচ্ছে। দ্রুত বের হতে গিয়ে কিছুটা ব্যাথা পাই।
তিনি হতাহতের বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারেননি।
দেড়টার দিকে ঘটনাস্থল কিছুটা ফাঁকা হয়ে যায় জুমার নামাজের কারণে। পরে জুম্মার নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই মুসল্লিরা আবার ঘটনাস্থলে এসে ভিড় করেন।
আল আমিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জাগো নিউজকে বললেন, ঘিঞ্জি এলাকায় সড়কের পাশের ভবনগুলো যদি এরকম করে নির্মাণ করা হয় তবে হতাহতের ঘটনা তো ঘটবেই। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর হওয়া প্রয়োজন।
মর্গে আহাজারি স্বজনদের, অপেক্ষা স্বজনের লাশ নিয়ে ফেরার
বেলা আড়াইটায় ঘটনাস্থলের পাশের মিডফোর্ড হাসপাতালে মর্গের কাছাকাছি পৌঁছাতেই স্বজনদের কান্নার শব্দ ভেসে আসে। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছেন। কেউ কাঁদতে কাঁদতে পরিবারের অন্য সদস্যদের স্বজন হারানোর সংবাদ জানাচ্ছিলেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ছাদের নিরাপত্তা দেওয়াল ভূমিকম্পে ধসে পড়ে বাবা হাজী আব্দুর রহিম ও তার স্কুলপড়ুয়া ছেলে মেহেরাব হোসেন নিহত হয়েছে। মাংস কিনতে বের হয়ে তারা দুর্ঘটনার এই শিকার হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজনকেই মৃত ঘোষণা করা হয়।
ঘটনাস্থলে সলিমুল্লাহ মেডিকেলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাফিউল ইসলামও নিহত হন; তার মা গুরুতর আহত। মা-ছেলেও গিয়েছিলেন মাংস কিনতে।
মোহাম্মদ নাসির নিহত আব্দুর রহিমের ছোট ভাই। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ভাই আব্দুর রহিম ছেলের স্কুল বন্ধ থাকায় তাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে যান। সদরঘাটে তার ব্যবসা ছিল। ভাতিজা মেহেরাব সুরিটোলা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে, বয়স মাত্র ৮ বছর।
তিনি বলেন, মাংস কিনতে দাঁড়ানোর সময় ভূমিকম্পে ভবনের ছাদের নিরাপত্তা দেওয়াল ভেঙে পড়ায় বাবা-ছেলে গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুজনকেই মৃত ঘোষণা করা হয়।
সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, নিহত রাফিউল ইসলাম কলেজটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি মায়ের সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন এবং সেদিনও মায়ের সঙ্গে বাজার করতে বের হয়েছিলেন।
কাফি বলেন, দুর্ঘটনায় রাফিউল ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। তার মা মস্তিষ্কে আঘাত পেয়ে অচেতন অবস্থায় ভর্তি আছেন এবং চিকিৎসাধীন। রাফিউলের গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়।
এমডিএএ/এএমএ
What's Your Reaction?