জীবনের প্রয়োজনেই মানুষ বাজারে যায়, কেনাকাটা করে। বাজার ছাড়া মানুষের জীবন অচল। শহরাঞ্চলে প্রত্যহ ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। আর তাই শহুরে মানুষজন জুমাবারে বাজারে ভিড় করে কম। তবে পাড়া-গাঁয়ে এখনো সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে বাজার বসে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মফস্বল এলাকায় জুমাবারে হাট বসতে দেখা যায়। দিনটিতে মফস্বলের হাট-বাজারে শুভ্রতার মেলা বসে। সাদা পোশাকে পরস্পর পরস্পরে মুলাকাত করে। আনন্দঘন পরিবেশে সাপ্তাহিক প্রয়োজনীয় বস্তুসমূহ ক্রয়-বিক্রয় করে।
পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই বাজারের জন্ম। তবে সব দেশের বাজার একধরনের না। রকমারিত্ব আছে। আছে ভিন্ন রীতিনীতি ও রূপ- রং। কিন্তু জান্নাতের বাজার হবে কেবল একধরনের। থাকবে না কোনো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড। সেখানকার নিয়ম-রীতি ও বাজার সংস্কৃতি হবে পৃথিবীর বাজারগুলোর চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নরূপে, ভিন্ন তরিকায়।
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমাবার জান্নাতিরা সেখানে জমায়েত হবেন। এরপর উত্তর দিকে মৃদু বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধুলোবালি তাদের মুখমণ্ডল ও পোশাক-পরিচ্ছদে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে যাবে। শরীরের রং আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠবে। পরে তারা নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে এসে দেখবে, পরিবারের লোকেদের শরীরের রং এবং সৌন্দর্যও বহুগুণে বেড়ে গেছে। পরিবারের লোকেরা তাদের বলবে, আল্লাহর শপথ! আমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর তোমাদের সৌন্দর্য বেড়ে গেছে। উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহর শপথ! তোমাদের সৌন্দর্যও আমরা তোমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর বহুগুণ বেড়ে গেছে (মুসলিম : ২৮৩৩-১৮৮৯)।
জনৈক তাবেয়ির প্রশ্নের জবাবে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) আমাকে জানিয়েছেন, জুমার দিন জান্নাতিদের মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে। তখন তারা তাদের রবকে দেখতে আসবেন। তাদের জন্য তাঁর আরশ প্রকাশিত হবে। জান্নাতের কোনো এক বাগানে তাদের সামনে তাদের প্রভুর প্রকাশ ঘটবে। নূর, মণিমুক্তা, পদ্মরাগ, জমরুদ ও সোনা-রুপা ইত্যাদির মিম্বর রাখা হবে সেখানে। তাদের মধ্যকার সবচেয়ে নিম্নস্তরের জান্নাতিও মিশক এবং কপূরের স্তূপের ওপর আসন গ্রহণ করবেন।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম; হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সূর্য বা পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে তোমাদের কি কোনো সন্দেহ হয়? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, ঠিক সে রকম তোমাদের রবকে দেখাতেও কোনো সন্দেহ থাকবে না। আর সে মাজলিসের প্রত্যেকে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কথা বলবেন। এমনকি তিনি একে একে তাদের নাম ধরে ডেকে বলবেন, হে অমুকের পুত্র অমুক, অমুক দিন তুমি এমন কথা বলেছিলে, তোমার কি মনে আছে?
এভাবে তিনি তাকে দুনিয়ার কিছু নাফরমানি ও সীমা লঙ্ঘনের কথা মনে করিয়ে দেবেন। লোকটি তখন বলবে, হে আমার রব, আপনি কি আমাকে ক্ষমা করেননি? তিনি বলবেন, হ্যাঁ, আমার ক্ষমার বদৌলতেই তুমি এ জায়গাতে পৌঁছেছো। এই অবস্থায় হঠাৎ এক খণ্ড মেঘ এসে ছায়া ফেলবে এবং তা থেকে তাদের ওপর সুগন্ধি (বৃষ্টি) বর্ষিত হবে, যে-সুরভি তারা আগে কখনো কোনো কিছুতে পায়নি।
অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ওঠো। আমি তোমাদের সম্মানে যে মেহমানদারি প্রস্তুত করেছি, সেদিকে অগ্রসর হও এবং যা কিছু পছন্দ হয় তা গ্রহণ করো। তখন আমরা একটি বাজারে এসে উপস্থিত হব, যা ফেরেশতারা ঘিরে রাখবেন। সেখানে এরূপ পণ্যসামগ্রী থাকবে, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কখনো কোনো অন্তরে সেটার কল্পনাও উদিত হতো না। আমরা সেখানে যা চাইব, তাই দেওয়া হবে। তবে বেচাকেনা হবে না। আর সে বাজারেই জান্নাতিরা একে অপরের সঙ্গে দেখা করবেন। জান্নাতি নিজের পোশাক দেখে আত্মহারা হয়ে যাবেন। কথা শেষ হতে না হতেই তিনি দেখতে থাকবেন যে, তার গায়ে আগের চেয়ে উত্তম পোশাক দেখা যাচ্ছে। আর এরূপ এ জন্যই হবে যে, সেখানে কারও দুঃখ-কষ্ট বা দুশ্চিন্তা স্পর্শ করবে না।
তারপর আমরা নিজেদের স্থানে ফিরে আসবো এবং নিজ নিজ স্ত্রীদের দেখা পাব। তারা তখন বলবেন, অভিনন্দন ও স্বাগত! কী ব্যাপার! যে রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে তোমরা গিয়েছিলে, তার চেয়ে উত্তম সৌন্দর্য নিয়ে ফিরে এসেছো। জবাবে আমরাও বলবো, আজ আমরা আমাদের আল্লাহ তাআলার সঙ্গে মজলিসে বসেছিলাম। কাজেই এ পরিবর্তন হয়েছে। আর এটাই ছিল স্বাভাবিক (তিরমিজি : ২৫৪৯)।