শুক্রবারে মারা গেলে কি কবরের আজাব মাফ? যা বলা হয়েছে হাদিসে

21 hours ago 6

শুক্রবার—শুদ্ধতা আর শুভ্রতার মহোৎসবে পরিপূর্ণ একটি দিন। পুরো সপ্তাহের ক্লান্ত দেহ, অতৃপ্ত মন এ দিনটিতে সুখের পরশে জেগে ওঠে। উল্লাসে মাতে। হাদিস শরিফে এসেছে, জুমার দিন কেবল মোহাম্মদি উম্মাতেরই বৈশিষ্ট্য।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতকে জুমার দিন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অজ্ঞ রেখেছেন। ইহুদিদের ফজিলতপূর্ণ দিবস ছিল শনিবার। খ্রিষ্টানদের ছিল রোববার। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আমাদের দুনিয়ায় পাঠালেন এবং জুমার দিনের ফজিলত দান করলেন। সিরিয়ালে শনি ও রোববারকে শুক্রবারের পেছনে রাখা হয়েছে। কারণ, দুনিয়ার এই সিরিয়ালের মতো কেয়ামতের দিনও ইহুদি-খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের পেছনে থাকবে। আমরা উম্মত হিসেবে সবার শেষে এলেও কেয়ামতের দিন সবার ওপরে থাকব। (মুসলিম : ১৪৭৩)

জুমাবারের ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মতো গোসল করে এবং প্রথম প্রহরে মসজিদে যায়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। দ্বিতীয় প্রহরে গেলে গরু কোরবানির সওয়াব, তৃতীয় প্রহরে গেলে ভেড়া, চতুর্থ প্রহরে গেলে মুরগি এবং পঞ্চম প্রহরে গেলে ডিম কোরবানির সওয়াব পাবে। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে মিম্বারে ওঠেন, তখন ফেরেশতারা আর আমল লেখেন না, তারা খুতবা শুনতে থাকেন। (বোখারি : ৮৮১)

কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকে জুমার দিনের অতিরিক্ত গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘এ দিন কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার কবরের সব আজাব মাফ। তিনি বিনা হিসেবে জান্নাতে চলে যাবেন।’

চলুন, জেনে নিই শরিয়তের এই কথার বাস্তবতা কতটুকু—

হাদিসের ভাষ্য

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করবে, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের ফিতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। (তিরমিজি : ১০৯৫)

ইসলামী স্কলারদের ভাষ্য

উল্লিখিত হাদিসের আলোকে ইসলামী স্কলাররা বলছেন, শুক্রবারে মৃত্যুবরণ করলে বিনা হিসাবে জান্নাত বা কিয়ামত পর্যন্ত কবরের আজাব মাফ এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। এ সম্পর্কে মুল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন, জুমার দিনে বা রাতে যে মারা যাবে, তার থেকে কবরের আজাব উঠিয়ে নেওয়ার কথা প্রমাণিত। তবে কিয়ামত পর্যন্ত আজাব আর ফিরে আসবে না এ কথার কোনো ভিত্তি আমার জানা নেই (মিনাহুর রাওদিল আযহার ফি শরহি ফিকহিল আকবার : পৃষ্ঠা ২৯৫-২৯৬)।

একইভাবে কথা বলেছেন খ্যাতিমান ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহও। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত—এই সময়ে মধ্যে কোনো মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যু হলে আল্লাহ তায়ালা তাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ তাকে কবরের আজাব ও ফিতনা থেকে মুক্তি দান করেন। আর স্বাভাবিকতই কেউ যদি কবরের অজাব থেকে মুক্তি লাভ করেন, তাহলে কিয়ামতের দিনের হাশরের মাঠে হিসাব-নিকাশ তার জন্য সহজ হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।

আহমাদুল্লাহ জানান, এ সম্পর্কে তিরমিজি শরিফে উসমান ইবনে আওফান (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কবর হলো আখিরাতের ঘাঁটিগুলোর মধ্যে প্রথম ঘাঁটি। এই ঘাঁটিতে যদি কারও জন্য প্রশ্নোত্তর সহজ করে দেওয়া হয়, এই ঘাঁটিতে যদি কেউ কোনো বড় বিপদে না পড়েন অর্থাৎ সহজেই পার পেয়ে যান, তাহলে পরবর্তী ধাপগুলো ও তিনি সহজেই উত্তীর্ণ হতে পারবেন; সেই আশা করা যায়। আর যদি কবরের ঘাঁটি কারও জন্য কঠিন হয়ে যায়, তাহলে পরবর্তী যে ধাপগুলো রয়েছে সেগুলো আরও কঠিন হবে।

এই হাদিসগুলোর আলোকে আশা বোঝা যায়, জুমার দিনে কারও মৃত্যু হলে সেটা একটি ভালো বা শুভ সংকেত। অর্থাৎ বলা যায়, সেই ব্যক্তি ভালো মৃত্যুবরণ করলেন এবং এর ফলে তার আখিরাতের প্রতিটি ধাপ তার জন্য সহজ হবে আশা করা যায়। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে, আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে জুমার দিনে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তিনি সরাসরি জান্নাতে যাবেন এবং তার কবর আজাব কেয়ামত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। হ্যাঁ, সেই মৃত ব্যক্তির জন্য সুধারণা রাখা ভালো।

Read Entire Article