শুধু ইউক্রেন নয়, ইউরোপের কিছু অংশও দখল করতে চান পুতিন
শুধু ইউক্রেন নয়, ইউরোপের কিছু অংশও দখল করতে চান পুতিন- এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটি প্রতিবেদনে। সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শান্তি আলোচনা চললেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধলক্ষ্য এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। পুতিন কেবল ইউক্রেনের পুরো ভূখণ্ড দখল করেই থামতে চান না, বরং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ইউরোপের কিছু অংশ পুনর্দখলের আকাঙ্ক্ষাও তার রয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন সম্পর্কে অবগত ছয়টি সূত্র জানিয়েছে, শান্তি আলোচনা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছালেও যেখানে রাশিয়া তুলনামূলক কম ভূখণ্ড ধরে রাখতে পারে, তবু পুতিন তার বৃহত্তর লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি। সর্বশেষ এই ধরনের গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে। এই মূল্যায়ন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ইউক্রেনবিষয়ক শান্তি আলোচক দলের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ট্রাম্প ও তার প্রতিনিধিরা দাবি করে আসছেন, পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে চান। একই সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষণ রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করছে, যেখানে তিনি নিজেকে ইউরোপের
শুধু ইউক্রেন নয়, ইউরোপের কিছু অংশও দখল করতে চান পুতিন- এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটি প্রতিবেদনে। সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শান্তি আলোচনা চললেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধলক্ষ্য এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। পুতিন কেবল ইউক্রেনের পুরো ভূখণ্ড দখল করেই থামতে চান না, বরং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ইউরোপের কিছু অংশ পুনর্দখলের আকাঙ্ক্ষাও তার রয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন সম্পর্কে অবগত ছয়টি সূত্র জানিয়েছে, শান্তি আলোচনা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছালেও যেখানে রাশিয়া তুলনামূলক কম ভূখণ্ড ধরে রাখতে পারে, তবু পুতিন তার বৃহত্তর লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি। সর্বশেষ এই ধরনের গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে।
এই মূল্যায়ন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ইউক্রেনবিষয়ক শান্তি আলোচক দলের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ট্রাম্প ও তার প্রতিনিধিরা দাবি করে আসছেন, পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে চান। একই সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষণ রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করছে, যেখানে তিনি নিজেকে ইউরোপের জন্য হুমকি নন বলে উল্লেখ করেন।
২০২২ সালে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন একই রকম রয়েছে। এসব প্রতিবেদনে ইউরোপীয় নেতাদের ও ইউরোপের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অবস্থানের প্রতিফলন দেখা যায়। তাদের মতে, পুতিন পুরো ইউক্রেন এবং ন্যাটোভুক্ত সাবেক সোভিয়েত ব্লকের কিছু রাষ্ট্রের ভূখণ্ড দখল করতে আগ্রহী।
মার্কিন কংগ্রেসের হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্য মাইক কুইগলি রয়টার্সকে বলেন, গোয়েন্দা তথ্য সবসময়ই বলছে, পুতিন আরও বেশি চায়। ইউরোপীয়রা এতে নিশ্চিত। পোল্যান্ড একেবারে নিশ্চিত। বাল্টিক দেশগুলো মনে করে, তারা প্রথম লক্ষ্য।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে দোনবাস শিল্পাঞ্চলের লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের বড় অংশ, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনের কিছু এলাকা এবং কৌশলগত কৃষ্ণসাগরীয় উপদ্বীপ ক্রিমিয়া। পুতিন দাবি করেন, ক্রিমিয়া ও এই চারটি প্রদেশই রাশিয়ার অংশ।
এদিকে, প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে দোনেৎস্কের যে সামান্য অংশ এখনো কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে আছে, সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারে চাপ দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প- এমন তথ্য দিয়েছেন বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুটি সূত্র। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনের অধিকাংশ নাগরিক এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধ শেষ করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের দল উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং ট্রাম্পের মতে শান্তিচুক্তি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কাছাকাছি। তবে ওই কর্মকর্তা গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) এক্সে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড বলেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আইনপ্রণেতাদের জানিয়েছেন যে রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে বড় কোনো যুদ্ধ এড়াতে চায় এবং ইউক্রেনে রুশ সেনাদের পারফরম্যান্স দেখায় যে এই মুহূর্তে তাদের পক্ষে পুরো ইউক্রেন তো দূরের কথা, ইউরোপের কিছু অংশ দখল করাও সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স দপ্তর, সিআইএ এবং রাশিয়ার দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় অগ্রগতির দাবি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি আলোচক দল- তার জামাতা জ্যারেড কুশনার ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা অগ্রগতির কথা বললেও ভূখণ্ড সংক্রান্ত বিষয়ে বড় মতপার্থক্য এখনো রয়ে গেছে।
হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, কুশনার ও উইটকফ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) মিয়ামিতে ইউক্রেনীয় আলোচকদের সঙ্গে বৈঠক করেন ও সপ্তাহ শেষে রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা ছিল।
এর আগে বার্লিনে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনায় ভবিষ্যতে রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে একটি প্রাথমিক ঐকমত্য হয়। চারজন ইউরোপীয় কূটনীতিক ও দুটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
একটি সূত্র ও একজন কূটনীতিক জানান, এই নিরাপত্তা নিশ্চয়তা জেলেনস্কির রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার শর্তের ওপর নির্ভরশীল। তবে অন্য কূটনীতিকরা বলেন, এমন কোনো শর্ত চূড়ান্ত হয়নি এবং বিকল্প ব্যবস্থাও বিবেচনায় রয়েছে, কারণ জেলেনস্কি ভূখণ্ড ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
কূটনীতিকদের মতে, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর কার্যকর হওয়া এই নিশ্চয়তার আওতায় ইউক্রেনের ভেতরে ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে একটি ইউরোপীয় নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা ভবিষ্যৎ রুশ হামলা প্রতিহত করবে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা সর্বোচ্চ আট লাখ নির্ধারণের কথাও আলোচনায় এসেছে, যদিও রাশিয়া এর চেয়ে কম চায় এবং যুক্তরাষ্ট্র সেই প্রস্তাবে উন্মুক্ত।
এই প্যাকেজের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য ও অন্যান্য সহায়তা দেবে এবং এটি মার্কিন সিনেটে অনুমোদিত হবে। আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেনের আকাশে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিমান টহলের ব্যবস্থাও থাকতে পারে।
তবে জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার এসব প্রস্তাব নিয়ে সতর্ক অবস্থান নেন। তিনি বলেন, এখনো একটি প্রশ্নের উত্তর পাইনি। সেটা হলো- এই নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বাস্তবে কী করবে?
অন্যদিকে, পুতিন এ ধরনের নিশ্চয়তা মানবেন কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ তিনি আগেই ইউক্রেনে বিদেশি সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করেছেন।
ভূখণ্ডের দাবি থেকে সরে আসেনি মস্কো
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন শান্তি আলোচনা নিয়ে আগ্রহের কথা বললেও কোনো ছাড়ের ইঙ্গিত দেননি। তিনি দাবি করেন, চলতি বছর রুশ বাহিনী ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে এবং তার শর্ত পূরণ করতেই হবে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কী, তা স্পষ্ট নয়। তবে উইটকফ আগে ইঙ্গিত দিয়েছেন, চারটি প্রদেশ ও ক্রিমিয়া দাবি করার ‘অধিকার’ রাশিয়ার আছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন, পুতিন হয়তো ইউক্রেন দখলের প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণের চেয়ে কম কিছুতে রাজি হবেন না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমি জানি না পুতিন চুক্তি করতে চান, নাকি পুরো দেশটি নিতে চান। এগুলো তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন। যুদ্ধ শুরুর সময় তারা যা অর্জন করতে চেয়েছিল, তা এখনো অর্জন করতে পারেনি।
সূত্র: রয়টার্স
এসএএইচ
What's Your Reaction?