শুধু উৎপাদন দক্ষই নয়, পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়তে চেয়েছি

2 months ago 6

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ শুধু উৎপাদন দক্ষই নয়, পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়তে চেয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রুপটির পরিচালক (করপোরেট ফিন্যান্স) উজমা চৌধুরী। গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড বা পরিবেশবান্ধব কারখানার পুরস্কার পাওয়ার পর এক বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড নীতিমালা-২০২০’ এর আওতায় ১৬টি খাতের ৩০টি শিল্প-কারখানাকে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

উজমা চৌধুরী বলেন, আমি আজকে প্রাণ-আরএফএলের গ্রুপের পক্ষে কথা বলতে এসেছি। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অধীন হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড এবং চরকা টেক্সটাইল লিমিটেড আজকে পুরস্কার পেয়েছে। আমরা এ পুরস্কার গ্রহণ করতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত। এ সম্মাননার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ।

উজমা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা যাত্রা শুরু করি এবং শিল্পায়ন হতে হবে পরিবেশবান্ধব। আমরা সব সময় চেয়েছি এমন একটি কারখানা গড়তে যা শুধু উৎপাদন দক্ষই নয়, পরিবেশবান্ধবও হবে।

তিনি বলেন, প্রোডাকশন এফিসিয়েন্সির সঙ্গে সোশ্যাল অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্ট এফিসিয়েন্সি- এ দুটি অংশকে আমরা সব সময় সামনে রেখেছি। ২০১৩ সালের চরকা টেক্সটাইল লিমিটেড এবং ২০১৪ সালে হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড যাত্রা শুরু করে। এ বছর এ দুটি ফ্যাক্টরি আমাদের গ্রুপের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র, যেখানে দেশি-বিদেশি বাজারের জন্য গার্মেন্টস পণ্য, স্ন্যাকস, বেভারেজ, বেকারি নুডুলসসহ নানা পণ্য এখানে উৎপাদন হয়ে বিদেশে যাচ্ছে।

শুধু উৎপাদন দক্ষই নয়, পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়তে চেয়েছি

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক আরও বলেন, আমাদের কারখানার বিশেষত্ব হলো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও ব্যবস্থা। এই পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও ব্যবস্থার মধ্যে আছে সোলার সিস্টেম, এনার্জি ইফিশিয়েন্ট মেশিনারি, এনার্জি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ইটিপি, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম। এছাড়া যেটা রয়েছে, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মব্যবস্থা।

তিনি বলেন, আজকে এই পুরস্কারের মাধ্যমে আমাদের যাত্রা শেষ হয়ে যাবে, এটা না। আমরা এখান থেকে শুরু করছি। এই সম্মাননার মাধ্যমে আমরা আরও অনুপ্রাণিত হয়েছি। যাতে ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যেতে পারি।

আরও পড়ুন:

এই পুরস্কারের জন্য একটা স্ট্র্যাটেজি দেয় টপ ম্যানেজমেন্ট, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের এনভায়রনমেন্টাল সিস্টেমের যারা এ কাজটি করে পুরস্কারটি আসলে তাদেরই প্রাপ্য। আসুন আমরা সবাই মিলে একটি সবুজ নগর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি, বলেন উজমা চৌধুরী।

প্রসাধনী কারখানা খাতে পুরস্কার পাওয়া রিমার্ক এইচবি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আম্বিয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য শুধু একটি পুরস্কার নয়। এটি বিকাশমান শিল্পখাতের অনেক বড় পাওনা।

তিনি বলেন, রিমার্ক এইচবি ২০২০ সালে অগ্রযাত্রা শুরু করে। ২০২৫ সাল থেকে বিশ্বমানের স্কিন কেয়ার ও কসমেটিকস পণ্য উৎপাদনের নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। যার ফলে পরিবেশ রক্ষা ও সামাজিক দায়িত্ব এগুলোকে একীভূত করে আমরা পরিপূর্ণ টেকসই ব্যবসার পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।

আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, আমাদের অন্যতম বিশেষত্ব হলো, বিশ্বমানের ভার্টিকেল ইন্টিগ্রেটেড উৎপাদন সুবিধা যেখানে ডিজাইন, ম্যানুফ্যাকচারিং, প্যাকেজিং, লেভেলিং, ফর্মুলেশনসহ পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া ইন হাউজ করা হয়। এতে পণ্যের গুণগত মান ও বৈচিত্র্য নিশ্চিত হয় এবং রপ্তানির বাজারে প্রতিযোগিতার সামর্থ্য তৈরি করে।

বিশ্বব্যাপী কসমেটিকসের বাজার ৩৫০ বিলিয়ন ডলার জানিয়ে রিমার্ক এইচবির এই কর্মকর্তা বলেন, যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হালাল কসমেটিকের দিকে ঝুঁকছে। রিমার্ক এইচবি লিমিটেড এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে হালাল সার্টিফাইড আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে বিশ্বে হালাল কসমেটিকসের বাজারে আমাদের অংশীদারত্ব নিশ্চিত করেছে।

আশরাফুল আম্বিয়া আরও বলেন, এক সময় আমদানি নির্ভর ছিল আমাদের স্কিন কেয়ার পণ্য। আমাদের স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো ক্রেতাদের আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ডার্মাটোলজিস্টদের কাছ থেকে আমাদের পণ্য বেশ সুনাম অর্জন করেছে। আমাদের ব্র্যান্ড লিলি ৩০ বছর ধরে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। অনেকে বাংলাদেশ কসমেটিকসের পণ্যের আসল নকল নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা গড়ে তুলেছি হারলেন। হারলেন স্টোর থেকে গ্রাহকরা বিশ্বের সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন কসমেটিকস পণ্য নিঃসন্দেহে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কিনতে পারবেন।

এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, বর্তমানে আমরা সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে সমর্থ্য হয়েছি। আমার বিশ্বাস সরকারি নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার মাধ্যমে আগামী তিন বছরে এক লাখ অতিরিক্ত মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব।

তিনি বলেন, গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড আমাদের জন্য শুধু সম্মান নয়, এটি আমাদের প্রতিশ্রুতির উপহার। এই পুরস্কার একটি টেকসই অর্থনীতির বাংলাদেশ গড়ার সর্বজনীন লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে চলার সহায়ক হবে।

আরএমএম/এসএনআর/জেআইএম

Read Entire Article